শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিবন্ধ

স্কুলে ফি ও বেতন বাড়ানোর হিড়িক

প্রকাশের সময় : ১৮ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মোমিন মেহেদী : নতুন পে-স্কেলের বরাত দিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি ও বেতন বাড়ানোর ‘হিড়িক’ পড়েছে। এছাড়া অন্যান্য খাতেও ফি বাড়ানো হয়েছে। বাড়ানোর হার ক্ষেত্রবিশেষে দ্বিগুণ থেকে প্রায় পাঁচগুণ। অভিভাবক ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন এটা অস্বাভাবিক। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভও করেছেন। অনেক বেশি খরচ পড়ছে বলে অভিযোগ করেছেন তাদের অভিযোগ, জাতীয় পে-স্কেলের বরাত দিয়ে অত্যধিক বেতন ও ভর্তি ফি, উন্নয়ন ফি, সেশন চার্জ ও অন্যান্য ফি অযৌক্তিকভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে।
অতিরিক্ত ভর্তি ফি আদায়ের অভিযোগে ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল, অ্যান্ড কলেজ আইডিয়ালসহ বিভিন্ন স্কুলের সামনে বিক্ষোভ করেন অভিভাবকরা। অভিভাবকরা ভর্তি ফি বাড়ানোর জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেন। এ সময় তারা স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন। ভিকারুননিসা স্কুলের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, আগে তার মেয়ের জন্য ১ হাজার ৬শ টাকা ভর্তি ফি দিতেন। এবার তা করা হয়েছে ৩ হাজার ২শ টাকা। স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনো রকম নোটিশ ছাড়াই এই ফি বৃদ্ধি করেছে। রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্কুল শাখার শিক্ষার্থীদের বর্ধিত মাসিক বেতন প্রত্যাহারে কর্তৃপক্ষকে ২৪ ঘণ্টা সময় বেধে দিলেও তাতে কর্ণপাত করছে না স্কুল কর্তৃপক্ষ। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ অভিভাবক ফোরামের’ ব্যানারে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি আদায়ে শিক্ষামন্ত্রীকে স্মারকলিপি প্রদান এবং লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়েছে, পাশাপাশি অধ্যক্ষ নিয়োগ, গভর্নিং বডির নির্বাচন, শিক্ষক নিয়োগ এবং কলেজের বিভিন্ন অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে দু’মাসের সময় দিয়েছেন অভিভাবকরা। এত কিছুর পরও যে যার মতো আমাদের দেশে শিক্ষাকে করে তুলছে ব্যবসার পণ্য। অথচ মৌলিক ৫টি অধিকারের কথা যদি বলতে যাই, তাহলে শিক্ষার অবস্থান ৩ নাম্বারে। আর শিক্ষাকেই করে তোলা হচ্ছে আন্দোলন-সংগ্রামের বিষয়। পণ্য হিসেবে সামনে আনা হচ্ছে সরকারিভাবে কোচিং নিষিদ্ধ করা হলেও স্পেশাল বা বিশেষ ক্লাসের নামে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মাসিক বেতনের সমপরিমাণ টাকা আদায় করা হয়। বেতনের বাইরে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বছরে ৩০০ থেকে ১৮০০ টাকা ‘আইটি চার্জ’ নেয়া হলেও আদতে শিক্ষার্থীরা আইটি সুবিধা পায় না। অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়মের মাধ্যমে শিক্ষক। কর্মচারী নিয়োগের অভিযোগ রয়েছে। একজন অভিভাবকের কথা : সরকারি বেতন স্কেলের পর মেয়ের বেতন হঠাৎ করে ১৩০০ টাকা থেকে ২১০০ টাকা হয়ে গেল, রয়েছে। অথচ আইডিয়াল কিংবা ভিকারুননিসা স্কুলে বেড়েছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। তবে আমি মনে করি, বেতন বাড়বে বাড়ুক। আমরা চাই অন্য স্কুলের সঙ্গে সমন্বয় করা হোক। কিন্তু তা তো হচ্ছেই না; বরং বাংলা মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন এক ধাপে ৬০০ থেকে বেড়ে ১১০০ টাকা এবং ইংরেজি মাধ্যমে ১৯০০ থেকে ২৭৫০ টাকা হয়েছে
একটি স্কুলের শিক্ষক গণমাধ্যমকে বলেছেন, পে-স্কেলের কারণে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব আয় দিয়ে ৩৯৮ জন শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন দিতে হয়। পে-স্কেলে অন্যদের বেতন বেড়েছে। এখন আমাদের এখানেও বেতন বাড়াতে হবে। এ কারণে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি বাড়ানো হয়েছে। সেটা না বাড়ালে এদের বেতন-ভাতা কীভাবে দেব? শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও তো পে-স্কেল দেয়ার দাবিতে কর্মবিরতিতে যাওয়ার হুমকি দিয়ে রেখেছেন। কয়েকটি ধাপে গড়ে ৪৯ শতাংশ বেতন বেড়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একটু বেশি বেড়েছে। বাড়ানোর এই হার ভিকারুননিসা, আইডিয়াল স্কুলের কাছাকাছি।
আমাদের মনে রাখতে হবে যে, এমপিওভুক্ত শিক্ষকসহ দেশের ২১ লাখ সরকারি চাকরিজীবীর বেতন এক লাফে দ্বিগুণ হওয়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বাজারে আগুন ছড়াচ্ছে। ঘটছে মূল্যস্ফীতি, যা মধ্যবিত্ত জনগণসহ সর্বস্তরের সাধারণ নাগরিকের জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। এর ওপর অষ্টম পে-স্কেলের বোঝা সরাসরি শিক্ষার্থীদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হলে শিক্ষা ব্যবস্থায় চরম বিপর্যয় ঘটবে। ভর্তি ও টিউশন ফির অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধের অক্ষমতায় প্রাথমিক ও সেকেন্ডারি পর্যায়ের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ঝরে পড়বে, যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য অশনিসংকেত।
বিবেচ্য বিষয় হলো, বেতন বৃদ্ধি করলে সবার করতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষকদের দেবে, নন-এমপিভুক্তদের দেবে না তা হবে না। সরকারি সুবিধাপ্রাপ্তি কেউ বঞ্চিত হলে নিজেদের পূর্ণ স্বার্থ পেতে শিক্ষার্থীদের থেকে অতিরিক্ত ফি নেয়াটা তাদের কাছে অস্বাভাবিক নয়। যদিও নৈতিকভাবে তা সমর্থিত হতে পারে না। এভাবে অনৈতিক সুবিধা আদায়ের ফলে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থায় গোলযোগ দেখা দিতে পারে; ভেঙ্গে পড়তে পারে শিক্ষার কোমরও।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন