শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

চার মাসে বন্ধ ৩৫ পোশাক কারখানা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

গত চার মাসে দেশের ৩৫টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতিবেশী প্রতিযোগী দেশের সক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় দেশের কারখানাগুলোর ক্রয় আদেশ কমে যাওয়াই এসব পোশাক কারখানা বন্ধের অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া কারখানা বন্ধ হওয়ার পেছনে নতুন কাঠামোতে বেতন পরিশোধে বেগ পোহানো, শ্রমিক বিক্ষোভ ও শেয়ার্ড বিল্ডিং ব্যবহারের মতো কারণও রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র ও কারখানা মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশে পোশাক কারখানা বন্ধ হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। প্রতি মাসেই কোনো না কোনো কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে। ২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার আগে পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সদস্যভুক্ত কোম্পানি ছিল প্রায় ৫ হাজার। ওই দুর্ঘটনার পর ১২শ’ থেকে ১৩শ’ কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে বিজিএমইএ’র সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩ হাজারের কিছু বেশি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত মে মাস থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত চার মাসে দেশে নতুন করে ৩৫টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে ঈদুল ফিতর থেকে ঈদুল আজহার মধ্যবর্তী আড়াই মাসেই বন্ধ হয়েছে ১৫ থেকে ২০টি কারখানা। আর ৩৫টি কারখানা বন্ধ হওয়ার ফলে চাকরি হারিয়েছেন ১৬ হাজার ৮৪৯ জন শ্রমিক।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পোশাক খাত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, ‘রমজানের আগে ২০ থেকে ২৫টি কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। পরে এখন পর্যন্ত আরও ১৫ থেকে ২০টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। আর বর্তমানে কারখানা বন্ধের ক্ষেত্রে নতুন ধারা তৈরি হয়েছে। আগে পুরো কারখানা বন্ধ করলেও এখন দেখা যাচ্ছে ১৫ লাইনের ফ্যাক্টরির ক্ষেত্রে দুই বা তিন লাইন বন্ধ করে দিচ্ছে। এতে দুই থেকে তিনশ শ্রমিক বেকার হয়ে যাচ্ছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, তিনটি কারখানার সঙ্গে গত ১ সেপ্টেম্বর আমার কথা হয়েছে। তারাও নানা সমস্যায় আছে। অনেক সময় তারা চুপিচুপি ছাটাই করছে। আমাদের ঠিকমতো জানাচ্ছেও না।
বিজিএমইএ’র সিনিয়র সহসভাপতি ফয়সাল সামাদ বলেন, সামগ্রিকভাবে পোশাক খাতে ব্যবসার অবস্থা ভালো নেই। ক্রয় আদেশ (অর্ডার) কমে যাচ্ছে। কিছু নতুন প্রতিযোগী দেশও তৈরি হয়েছে। মিয়ানমার, ভারত, পাকিস্তান ও ভিয়েতনামে অর্ডার বাড়ছে। এতে আমাদের দেশে অর্ডার কমে যাচ্ছে। এসব কারণেই অনেক কারখানা ব্যবসায় টিকে থাকতে পারছে না। ফলে বাধ্য হয়ে তারা কারখানা বন্ধ করছে।

বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, যেসব কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে তারা অনেকেই কমপ্লায়েন্ট নয়। নতুন করে কমপ্লায়েন্ট করতে গিয়ে তারা হিমশিম খাচ্ছে। আবার ক্রেতারাও অর্ডার কমিয়ে দিয়েছে। আমাদের অনেক অর্ডার এখন পাকিস্তানে চলে যাচ্ছে। কারণ আমাদের এখানে ডলারের দাম ৮৪ টাকা, আর সেখানে তা ১৪০ রুপি। দরদাম হাঁকায় তারা এখন আমাদের চেয়ে ভালো অবস্থানে চলে গেছে। এসবের সমন্বিত প্রভাবেই নতুন করে গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ হচ্ছে।

এদিকে, বিজিএমইএ’র কোনো নেতা বা কর্মকর্তাই নতুন করে বন্ধ হয়ে যাওয়া ওইসব কারখানার নাম প্রকাশে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। এর আগে, গত মে মাসের দিকে (রমজান) মাত্র ১৮ দিনে ২২টি কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। বেতন ভাতা পরিশোধ করতে না পারা, শ্রমিক বিক্ষোভ ও শেয়ার্ড বিল্ডিং ব্যবহারের মতো নানা কারণে ওই কারখানা বন্ধ হয়। অভ্যন্তরীণ সমস্যাসহ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরে তখন বন্ধ হওয়ার পথে ছিল আরও ৩০টি পোশাক কারখানা।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ওই সময়ের বন্ধ হয়ে যাওয়া তৈরি পোশাক কারখানাগুলো হলো- মালিবাগের লুমেন ড্রেস লিমিটেড ও লুফা ফ্যাশন লিমিটেড, বাড্ডার সুমন ফ্যাশন গার্মেন্টস লি., শান্তিনগরের অ্যাপোচ গার্মেন্টস লিমিটেড, আশুলিয়ার মোভিভো অ্যাপারেলস লিমিটেড ও ফোর এস পার্ক স্টাইল লি., রামপুরার জেনস ফ্যাশন লিমিটেড, মধ্য বাড্ডার স্টার গার্মেন্টস প্রাইভেট লি., টঙ্গীর জারা ডেনিম লি. (শ্রমিক বিক্ষোভ), ফলটেক্স কম্পোজিট লি., এহসান সোয়েটার লি. ও মার্ক মুড লি., বনানীর তিতাস গার্মেন্টস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, গাজীপুরের ওসান ট্রাউজার লি. ও ওয়াসিফ নিটওয়্যার লি., জিরানীর ঝুমা ফ্যাশন লি., বোর্ড বাজারের স্পেস গার্মেন্টস ইন্ড্রাস্ট্রি লি. এবং উত্তর বাড্ডার এভার ফ্যাশন লি. (কারখানা বন্ধ)।

এছাড়া, গাজীপুরের ইন্ট্রামেক্স অ্যাপারেল লি., ইন্ট্রামেক্স নিটওয়্যার লি., ইন্ট্রামেক্স সোয়েটার লি. ও ইন্ট্রামেক্স ক্লথিং কারখানায় বেতন সমস্যা ও শ্রমিক বিক্ষোভ চলছিল। তবে বন্ধ হওয়ার পথে থাকা ওই ৩০ কারখানা সম্পর্কে তথ্য জানা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, ওইসব কারখানা থেকেই নতুন করে আরও ১৫ থেকে ২০টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।

স¤প্রতি রাজধানীর শ্যামলীতে অবস্থতি আলিফ অ্যাপারেল লিমিটেড নামক একটি কারখানাও বন্ধ হয়ে গেছে। এটিসহ প্রতিষ্ঠানটি তাদের আরও দু’টি কারখানা সরিয়ে নারায়ণগঞ্জ এলাকায় নিয়ে গেছে। এছাড়াও এসএফ ডেনিম অ্যাপারেলস লিমিটেড নামের তেজগাঁওয়ের একটি কারখানাও ৭০০ শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (16)
Rubel Khalifa ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৯:৩১ এএম says : 0
উন্নয়নের নমুনা
Total Reply(0)
Sharafatullah Mahin ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৯:৩১ এএম says : 0
কিছু পাশ্ববর্তী দেশ অনেক দিন থেকে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে ধ্বংস করার জন্য লেগে আছে।কারণ বাংলাদেশের পোশাকের বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
Total Reply(0)
Sohan Shan ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৯:৩১ এএম says : 0
ভালোতো দাদা বাবুদের ব্যাবসা জমবে ভালো।
Total Reply(0)
Aiyub Rahman ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৯:৩২ এএম says : 0
আমাগো ইকোনমি না মহাকাশ সমান! কেমনে সম্ভব, গুজবীয় কাহিনী মনে হয়!
Total Reply(0)
ফয়সাল আহমেদ ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৯:৩২ এএম says : 0
তারা কথা দিয়েছিলো চামড়ার পরে পোশাক কারখানার দিকে সুনজর দেবে। তারা কথা রাখা শুরু করে দিয়েছে। শিল্পখাতে সর্বাত্মক উন্নয়ণ না করে তারা থামবে না।
Total Reply(0)
Liakat Ali Babu ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৯:৩২ এএম says : 0
উদ্বেগের বিষয়।। আন্তর্জাতিক চক্রান্তের ফসল। দাদা বাবুদের দেশে ঠিকই বাড়ছে।।।
Total Reply(0)
Jakia Tahsin Labiba ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৯:৩২ এএম says : 0
খুব উন্নয়ন হচ্ছে তু তাই।।।এটা একটা রুল মডেল হিসাবে বিশ্বকে দেখাচ্ছে।।।।
Total Reply(0)
ক্যাটালাইসিস হিমু ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৯:৩৩ এএম says : 0
বন্ধ হচ্ছে সব, তবুও সুযোগ সন্ধানীরা দেখে উন্নয়ন!!
Total Reply(0)
Md Iman Hossain ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৯:৩৩ এএম says : 0
ভারত সরকার চাই বাংলাদেশের শিল্প কারখানা বন্ধ হক তাদের পোশাক সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পরোক।মুদি বাংলাদেশের সফর করে খালেদা বলে চালাও হরতাল ক্ষমতায় আসো আমি পাশে আছি হাসিনা বলে ক্ষমতায় থাকো যে ভাবে হক আমি তোমার পাশে আছি।শুরু হলো হরতাল একটানা 90 দিন দেশে সবচেয়ে ক্ষতি হলো শিল্প কারখানা লাভবান হলো ভারতের। দেশে হরতালে শান্তি থাকেনা বিদেশের বায়ার দেশে আসেনা।ফলে ভারতে বিদেশি বায়ার গুলা চলে যায় ।অর্থনৈতিক ভাবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাক ভারত কখনও চাইনা।
Total Reply(0)
Shefayet Ullah ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৯:৩৪ এএম says : 0
এটা বাকি ছিল এটা বন্ধ করতে পারলেই জনগণকে ভারতের গোলামী করার জন্য বাধ্য করা হবে
Total Reply(0)
Asaduzzaman Asad ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৯:৩৪ এএম says : 0
দেশের সব বড় কারখার বড় অফিসার নিয়োগ হয় ভারতীয়রা আর তাঁরাই বায়ারদের ফুসলিয়ে অন্য দেশে নিয়ে যাচ্ছে
Total Reply(0)
Md.Habibur Rahman Arshad ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:৫৬ পিএম says : 0
আমার দৃষ্টিতে বাংলাদেশ পোশাকের দাম কম পাচ্ছে এটা আমরা সবাই জানি,কিন্তু পোশাকশিল্পে সবচেয়ে বড় ক্ষতি করে বিদেশী কর্মকর্তারা,যেমন বাংলাদেশী এক জন পিএম-৬০/৮০,জিএম-১০০০০০/১৫০০০০ বা যেকোনো ম্যানেজার-৫০/৫৫, ইনচার্জ-৩০/৪০ হাজার টাকা বেতন হলে পাওয়া যায়,কিন্তু এখানে মালিক পক্ষ নিয়োগ দিচ্ছেন বিদেশী যাদের মাসিক বেতন দেওয়া লাগে-০৫ থেক ১০ লক্ষ টাকা, আসলে দোষটা কার?? আবার বিদেশিরা কি করে বায়ার হ্যান্ডলিং এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশ ও শ্রমিক।
Total Reply(0)
Hassan ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৭:৩৪ পিএম says : 0
ওয়ার্কার স্যালারি আরো ১০০% বাড়ান !! গত সোমবার আমি সাভারে একটা ফ্যাক্টরিতে গিয়া দেখলাম কাজ নাই ওয়ার্কার বসে আছে পাশাপাশি ছাটাইয়ের ধুম চলতাছে , ওয়ার্কার যেতে চাইতেছে না বাট এক প্রকার জোর করে বের করা হইতেছে কাউকে আবার দেখলাম উল্টাপাল্টা বুজিয়ে বের করা হইতেছে ,মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল আর মনে মনে ভাবতেছিলাম ওরা তো কিছু একটা করে খেতে পারবে কিন্তু আমি কি করবো ?? আল্লাহ আমাদের এই গজব থেকে রক্ষা করুন ,
Total Reply(0)
রাসেল ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৬:৪২ এএম says : 0
রিজিকের মালিক আল্লাহ।
Total Reply(0)
রাসেল ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৬:৪২ এএম says : 0
রিজিকের মালিক আল্লাহ।
Total Reply(0)
মশিউর রহমান ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৯:৫৯ এএম says : 0
যে জাতি তার দায়িত্বভার কোন নারীর হাতে দিল সে জাতি ধংস হয়ে গেল। আল হাদিস।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন