জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে তিনদফা দাবিতে চলমান আন্দোলনের নতুন মোড় নিয়েছে। আন্দোলনের এক সংগঠককে শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক মারধরের পর আন্দোলনের পরিবেশ নতুন রূপ নিয়েছে। গতকাল শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা চলমান আন্দোলনের দাবিগুলো নিয়ে আলোচনায় বসার কথা ছিল। কিন্তু শনিবার সকালে ছাত্রলীগ নেতার হাতে আন্দোলনকারী মারধরের শিকারের খবর আসার পর আন্দোলনকারীরা আলোচনা স্থগিত করে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে। তারা ছাত্রত্ব শেষ হওয়া ওই ছাত্রলীগ নেতার বিচার দাবি করেন ও হল থেকে বের করে দেয়ার দাবি জানান। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ওই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিয়েছে। এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, ‘অভিযুক্ত যেহেতু সাবেক শিক্ষার্থী তাই প্রশাসন মামলার প্রস্তুতি নিয়েছে। প্রক্টরিয়াল টিম রিপোর্ট দিয়ে দিয়েছে।
মারধরের শিকার আন্দোলনকারী হলেন সাইমুম ইসলাম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ বিভাগের ৪৪তম ব্যাচের ও আ ফ ম কামাল উদ্দিন হলের আবাসিক ছাত্র। একই সঙ্গে তিনি জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক। আর মারধরকারী ছাত্রলীগ নেতা হলেন অভিষেক মণ্ডল। তিনি শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪১তম ব্যাচ ও শহীদ রফিক জব্বার হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা যায়, শনিবার সকাল ১০টার দিকে সাইমুম ইসলাম শহীদ রফিক জব্বার হলের সামনের খাবার দোকানে নাস্তা করতে যান। এ সময় পাশের সিটে বসা ছিলেন অভিষেক মণ্ডল। নাস্তারত অবস্থায় সাইমুমের মুঠোফোনে একটি কল আসে। সে কলটি রিসিভ করে কথা বলতে থাকলে অভিষেক মণ্ডল ধমক দিয়ে তাকে আস্তে কথা বলতে বলেন এবং সেখান থেকে চলে যেতে বলেন। পরে সাইমুম স্থান ত্যাগে অস্বীকৃতি জানালে তাকে কলার ধরে দোকানের বাহিরে বের করে লাকড়ি দিয়ে মারধর করেন ছাত্রলীগ নেতা অভিষেক মণ্ডল।
মারধরের বিষয়ে সাইমুম বলেন, ‘আমি সকালের নাস্তা করছিলাম। এ সময় একটি জরুরি ফোন রিসিভ করে কথা বলি। কিন্তু পাশে বসে থাকা অভিষেক মÐল ভাই আমার ওপর চড়াও হন। পরে কলার ধরে দোকানের বাহিরে এনে লাকড়ি দিয়ে মারধর করেন।’
তবে এই বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা অভিষেক মÐল বলেন, ‘আমার বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে দোকানে নাস্তা করতে গিয়েছি। সেখানে অনেক সিট ফাঁকা ছিল, কিন্তু সাইমুম গা ঘেঁষে আমাদের পাশে বসে। এ সময় তার ফোনে কল আসলে সে উচ্চ স্বরে কথা বলতে থাকে। পরে আমি তাকে একটু ধমক দিয়ে কথা বলি। তারপর সে আমার সঙ্গে বেয়াদবি করলে একটু হাতাহাতি হয়। মারামারির কোনো ঘটনা ঘটেনি। মারধরের অভিযোগ মিথ্যা।’
এই ঘটনার মারধরের শিকার শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়ে বিচার দাবি করেন। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অভিষেক মন্ডলের বিরুদ্ধে মামলা করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা সুদীপ্ত শাহিন আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবর একটি মামলার আবেদন পত্র দেন। পরে আন্দোলন কারীরা আলোচনায় বসতে রাজি হয়। তবে ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম জানিয়েছেন, ‘আজকের পূর্বনির্ধারিত আলোচনা স্থগিত করা হয়েছে। পরিস্থিতি সাপেক্ষে কাল বা পরশু আলোচনা হবে।’
শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি জুয়েল রানা বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের ব্যাপারে ছাত্রলীগ এমন মনোভাব পোষণ করেনা। এটা ব্যক্তি পর্যায়ের একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এর সাথে সংগঠনের কোন যোগ নেই।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন