বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

আশুরার ফজিলত ও তাৎপর্য

শাহ মাহমুদ হাসান | প্রকাশের সময় : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০৫ এএম | আপডেট : ১২:১০ এএম, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই সময়ের হিসাব গণনার জন্য সূর্য ও চন্দ্রের মাধ্যমে বছরে বারোটি মাস নির্ধারণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহর কাছে মাসগুলোর সংখ্যা হচ্ছে বারো, যেদিন থেকে তিনি মহাকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, এর মধ্যে চারটি হচ্ছে পবিত্র মাস।’ (সূরা তওবা : ৩৬)। সেই চারটি মাস হলো রজব, জিলকদ, জিলহজ ও মহররম। মহররম হিজরি বছরের প্রথম মাস। এই মাসের ১০ তারিখকে আশুরা বলা হয়। 

আশুরার ফজিলত ও আমল: মহররম মাস ও আশুরার অনেক গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রমজানের ফরজ রোজার পর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ রোজা হলো আল্লাহর মাস মহররমের রোজা।’ (মুসলিম : ২৮১২)। এ হাদিসে মহররম মাসকে আল্লাহর মাস বলাতে মহররম মাসের গুরুত্ব-ফজিলত ও মর্যাদা প্রকাশ পেয়েছে।
রসুলুল্লাহ (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করে সেখানকার ইহুদিদের আশুরার দিন রোজা রাখতে দেখলেন। তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা এই দিনে কেন রোজা রাখছ? উত্তরে তারা বলল, এই দিনে আল্লাহ তায়ালা হজরত মূসা (আ.) এবং তাঁর উম্মতকে ফেরাউননের কবল থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন আর ফেরাউন ও তার দলবলকে পানিতে ডুবিয়ে ধ্বংস করেছিলেন। তাই হজরত মূসা (আ.) কৃতজ্ঞতাস্বরূপ এ দিনে রোজা পালন করতেন এবং আমরাও তাঁর অনুসরণে এ দিনে রোজা রাখি। তখন রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, হজরত মূসা (সা.) এর কৃতজ্ঞতা আদায়ের ক্ষেত্রে আমরা তোমাদের চেয়ে বেশি অধিকার রাখি। অতঃপর রসুলুল্লাহ (সা.) নিজে আশুরার দিনে রোজা রাখেন এবং উম্মতকেও রোজা রাখার নির্দেশ প্রদান করেন। (বুখারি : ১৯০০)। তবে রোজা রাখার ক্ষেত্রে ইহুদিদের সাথে যেন সাদৃশ্য না হয় সে জন্যে আগে পরে একটি রোজা বেশি রাখতে বলেছেন। ইরশাদ হচ্ছে, ‘তোমরা আশুরার রোজা পালনের ক্ষেত্রে ইহুদিদে বিরোধিতা কর; আশুরার আগে বা পরে আরো একদিন বেশি রোজা রাখ।’ (মুসনাদে আহমদ : ২১৫৪)।
আশুরার রোজার ফজিলত ও গুরুত্বের ব্যপারে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আমি রসুলুল্লাহ (সা.) কে রমজান ও আশুরায় যেরূপ গুরুত্বের সঙ্গে রোজা রাখতে দেখেছি অন্য সময় তা দেখিনি।’ (বুখারি : ১৯০২)। অন্য হাদীসে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমি আশাবাদী যে, আশুরার রোজার কারণে আল্লাহ তাআলা অতীতের এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।’ (মুসলিম : ২৮০৩)।
আশুরার তাৎপর্য : মুহাররম ও আশুরা শোনার সাথে সাথে আমাদের মানসপটে ভেসে ওঠে (৬১ হিজরি ১০ মহররম) কারবালার মর্মান্তিক, হৃদয়বিদারক, বিষাদময় ও শোকাবহ ঘটনার কথা। তবে হযরত হোসাইন (রা.) শাহাদাতকে কেন্দ্র করে শরীয়ত বিরোধী অনেক কাজ করতেও দেখা যায়। তার মধ্যে মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো শোকগাঁথা পাঠ, শোক পালন, তাজিয়া মিছিল ও শোক প্রকাশার্থে শরীরকে রক্তাক্ত করা ইত্যাদি। অথচ এই কাজগুলো ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ বা হারাম। যারা এই সকল কাজে অংশ নিবে তাদের ব্যাপারে রসুলুল্লাহ (সা.) কঠোর ভাষায় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো স¤পর্ক নেই যারা মুখ চাপরায়, কাপড় ছিড়ে এবং জাহেলী যুগের কথাবার্তা বলে।’ (বুখারি : ১২৩৫)।
ইমাম হোসাইন (রা.) এবং তার অনুসারীরা ইসলামের আদর্শকে সমুন্নত রাখতে, সত্য ও ন্যায়ের স্বপক্ষে অবস্থান করতে গিয়ে কারবালা প্রন্তরে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে নৃশংস ভাবে শাহাদাত বরণ করে যে আদর্শ প্রতিষ্ঠিত করেছেন, একজন মুসলমান হিসেবে সেই আদর্শকে সমুন্নত রাখাই আশুরার মৌলিক শিক্ষা। তার শাহাদাত পৃথিবীর তাবৎ মাজলুমকে সকল অন্যায়, অবিচার ও অত্যচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে অনুপ্রেরনা জোগায়। তিনি নিপেড়ীত মানবতাকে শিক্ষা দিয়েছেন কিভাবে অন্যায় ও জুলুমের মোকবিলা করতে হয়। জালিমের সংগে আপোষ নয় প্রয়োজনে নিজের জীবন দিয়ে হলেও অন্যায় ও জুলুমের প্রতিবাদ করতে হবে।
ইমাম হোসাইন (রা.) মুসলিম উম্মাহর সামনে নিজের জীবন দিয়ে জয় পরাজয়ের একটি উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন যে, শহীদ হওয়া জীবনের পরাজয় নয়; বরং শাহাদাত হচ্ছে জীবনের বড় সফলতা। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যারা ঈমান এনেছে, দেশ ত্যাগ করেছে এবং আল্লাহর রাহে নিজেদের জান ও মাল দিয়ে জেহাদ করেছে, তাদের বড় মর্যাদা রয়েছে আল্লাহর কাছে আর তারাই সফলকাম। (সূরা তাওবা: ২০)।
আর জালিম সাম্রাজ্য যত শক্তিশালী হোক না কেন, তার পতন হবেই। জালিম ও স্বৈরাচারীরা অভিশপ্ত হয়ে ইতিহসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়। যার প্রমান ইয়াজিদের রাজত্ব, যার পতন হয়েছিল মাত্র চার বছরের মধ্যে ইয়াজিদের মৃত্যুর মাধ্যমে। মৃত্যুর কয়েক দিনের মাথায় তার পুত্রেরও মৃত্যু হয়। এবং এই পরিবার ভবিষ্যতে আর কোনদিন শাসন ক্ষমতা লাভ করতে পারেনি। কারবালার হত্যাযজ্ঞে যারা অংশ গ্রহণ করেছিল তারাও মাত্র দুই বছরের মধ্যে মেখতার সাকাফির হাতে নির্মমভাবে নিহত হয়েছে। কিন্তু ইমাম হোসাইন আজো বেঁচে আছেন আদর্শিক প্রেরণা হিসেবে। তাঁর ত্যাগ ও শাহাদাতের কারণে যুগের পর যুগ মানব হৃদয়ে শ্রদ্ধা ও ভক্তির সাথে তিনি অমর হয়ে থাকবেন। আল্লাহ তায়ালার ইরশাদ, ‘যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদের মৃত বলো না। বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা বুঝ না। (সূরা বাকারা : ১৫৪)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন