বাজারের ভিআইপি এখন পেঁয়াজ। বলা যায় সকাল-সন্ধ্যায় বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশ (টিসিবি) পাঁচ বছর পর পেঁয়াজ নিয়ে মাঠে নেমেছে। দুই দফা বৈঠক করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও। কিন্তু কোনো কিছুতে কাজ হয়নি, পেঁয়াজের দাম বাড়ছেই। এদিকে শীতের আগাম সবজি শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলার সরবরাহ বাড়লেও রাজধানীর বাজারে চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার, রামপুরা, মালিবাগ হাজীপাড়া, খিলগাঁও, শান্তিনগর, সেগুনবাগিচার বিভিন্ন বাজার সূত্রে এ তথ্য পাওয়া যায়। ঢাকায় মসলাজাতীয় পণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি ব্যবসাকেন্দ্র পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, গতকাল সকালে সেখানে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৩ টাকায় কেনাবেচা হয়েছে। দুপুরে দাম কেজিতে কিছুটা বেড়ে ৬৫ টাকা হয়। সন্ধ্যায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশি পেঁয়াজের কেজি ৭০ টাকায় উঠেছে।
বেড়েছে ভারতীয় পেঁয়াজের দামও। গতকাল সকালে কেজিতে ছিল ৫৫ টাকার মধ্যে। সন্ধ্যায় তা কেজিপ্রতি ৬০ টাকায় ওঠে। এমন ওঠানামা কয়েক দিন ধরেই চলছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। কারওয়ান বাজারের পাইকারি দোকানেও একই চিত্র। খুচরা বাজারে বাছাই করা দেশি পেঁয়াজের কেজি ৭৫-৮০ টাকা, সাধারণ দেশি পেঁয়াজ ৭০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০-৬৫ টাকা। টিসিবির হিসাবে, এক মাসে পেঁয়াজের দাম গড়ে ৪২ শতাংশ বেড়েছে।
এদিকে বাজারে টিসিবি ৪৫ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি করলেও বাজারে তার খুব একটা প্রভাব দেখা যায় নি। বছরে ২৪ লাখ টন চাহিদা ধরলে দেশে দিনে পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৬ হাজার ৫৭৫ টন। সেখানে টিসিবি বিক্রি করছে দিনে ৫ টন। ব্যবসায়ীদের দাবি, টিসিবি এত সামান্য পণ্য নিয়ে বাজারে কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না। খোলা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রির পাশাপাশি গত মঙ্গলবার পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে করণীয় ঠিক করতে সরকারি বিভিন্ন দফতর, আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বৈঠকের পর নতুন বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন এবং বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের সদস্য আবু রায়হান আল বিরুনি ঘোষণা দেন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পেঁয়াজের দাম কমবে। কিন্তু ২৪ ঘণ্টার বদলে তিনদিন পার হলেও পেঁয়াজের দাম কমেনি।
ব্যবসায়ীরা বলেন, সহসা পেঁয়াজের দাম কমবে বলে মনে হচ্ছে না। নতুন পেঁয়াজ না আসা পর্যন্ত পেঁয়াজের এ দাম থাকবে বলে মনে হচ্ছে। সরকারের তৎপরতার কারণে পেঁয়াজের দাম না কমলেও নতুন করে বাড়েনি। সরকার তৎপর না হলে এতো দিনে দাম কেজি প্রতি ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যেত।
এদিকে শীতের আগাম সবজি শিমের কেজি গত সপ্তাহের মতো বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকা। ছোট আকারের প্রতি পিস ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে বাধাকপি। মুলা বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা কেজি। সপ্তাহের ব্যবধানে এ সবজিগুলোর দামও অপরিবর্তিত রয়েছে।
শীতের আগাম সবজির সঙ্গে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে লাউ, টমেটো, করলা, গাজর, ঝিঙে, বরবটি, বেগুন, পটল, ঢেঁড়স, উসি, ধুন্দুলসহ সব ধরনের সবজি। ছোট আকারের লাউ আগের সপ্তাহের মতো বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা পিস। পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকা কেজি। গাজর বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা কেজি। করলা ৬০-৭০ টাকা, বরবটি ৭০-৮০ টাকা, বেগুন ৫০-৬০ টাকা, চিচিংগা, ঝিঙা, ধুনদল ৫০-৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে কিছুটা কমেছে কাঁকরোলের দাম। বাজারভেদে কাঁকরোলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০-৬০ টাকা কেজি। কিছুটা কম দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁপে ও মিষ্টি কুমড়া। পেঁপে আগের সপ্তাহের মতো বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকা কেজি। আর মিষ্টি কুমড়ার ফালি পাওয়া যাচ্ছে ১৫-২০ টাকার মধ্যে। সবজির দামের বিষয়ে ব্যাবসায়ীদের দাবি, বাজারে আস্তে আস্তে শীতের সবজির সরবরাহ বাড়ছে। টানা বৃষ্টি অথবা বন্যা না হলে শিগগির সবজির দাম কমবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন