ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও ভার্জিল ফন ডিককে হারিয়ে ২০১৯ সালের ফিফা বর্ষসেরা পুরস্কার ‘দ্যা বেস্ট ফিফা মেনস প্লেয়ার’ জিতেছেন লিওনেল মেসি। এ নিয়ে রেকর্ড ছয়বার ফিফা বর্ষসেরার খেতাব জিতলেন বার্সেলোনার আর্জেন্টাইন তারকা।
ইতালির মিলানের অপেরা হাউস লা স্কলায় সোমবার তারায় ভরা রাতে ‘দ্যা বেস্ট ফিফা ফুটবল অ্যাওয়ার্ড’ অনুষ্ঠানে বিজয়ীর নাম ঘোষণা করেন ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো। বছরের সেরা পুরুষ ফুটবলার নির্বাচনে মাসের শুরুতে তিন জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ করেছিল বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। উয়েফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের তালিকাতেও ছিলেন এই তিন ফুটবলার। মেসি ও রোনালদোকে টপকে যে পুরষ্কার জিতে নেন নেদারল্যান্ডসের সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার ফন ডিক।
পুরস্কার জিতে উচ্ছ¡সিত মেসি বলেন, ‘যারা আমাকে এই স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তাদেরকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।’ বরাবরের মত এবারও ব্যক্তিগত সাফল্যের চেয়ে দলীয় সাফল্যই নিজের কাছে বড় বলে উল্লেখ করেন মেসি, ‘আমার কাছে ব্যক্তিগত পুরস্কার পরে এবং দলীয় সাফল্য আগে। তবে এ দিনটি আমার জন্য বিশেষ দিন।’ অনুষ্ঠানে স্বপরিবারে উপস্থিত ছিলেন মেসি, ‘আমার স্ত্রী ও সন্তানেরা এখানে এবং ওরা এই প্রথম এখানে এসেছে। ওদেরকে নিয়ে এটা উপভোগ করার আনন্দ অপরিমেয়।’
২০১৫ সালের পর এই প্রথম বর্ষসেরার মুকুট উঠলো মেসির মাথায়। ২০১৬ সালে ফিফা বর্ষসেরা ‘দ্যা বেস্ট’ নামকরণ হওয়ার পর প্রথম জিতলেন ৩২ বছর বয়সী এই ফুটবল জাদুকর। ২০১৬ ও ২০১৭ সালে জিতেছিলেন রোনালদো। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাঁচ বার ফিফা বর্ষসেরার পুরস্কার জিতেছেন জুভেন্টাসের পর্তুগিজ তারকা রোনালদো।
২০০৮ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ফিফা বর্ষসেরার খেতাব পাঁচ বার করে জিতে নেন মেসি ও রোনালদো। তাদের আধিপত্যে ছেদ ঘটিয়ে গতবার এই পুরষ্কার জিতেছিলেন ক্রোয়াট মিডফিল্ডার লুকা মদরিচ। একই সঙ্গে উয়েফা বর্ষসেরা ও ব্যালন ডি অরও জিতেছিলেন এই রিয়াল মাদ্রিদ তারকা। তবে গতবারের মত এবারও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না রোনালদো।
দলীয় সফল্য তেমন না পেলেও গত মৌসুমে ব্যক্তিগতভাবে স্বপ্নীল সময় পার করেছেন মেসি। মাঠে যেমন সময় পার করেছিলেন ছয়-সাত বছর আগে। ক্লাব ও দেশের হয়ে গত মৌসুমে ৫৮ ম্যাচে করেছেন ৫৪ গোল। ঘরোয়া লিগ জয়ের পথে ইউরোপের সর্বোচ্চ (৩৬) গোলদাতা হওয়ায় জেতেন ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু পুরস্কার। দলকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে নেয়ার পথে সর্বোচ্চ ১২ গোল করে রোনালদো ও সাদিও মানেকে হারিয়ে জিতে নেন উয়েফা বর্ষসেরা ফরোয়ার্ডের খেতাব। আর্জেন্টিনাকে কোপা আমেরিকার ফাইনালে তুলতে রাখেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
একই সময়ে ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে ৪৭ ম্যাচে ৩১ গোল করেন রোনালদো। ক্লাবকে ঘরোয়া লিগ এবং জাতীয় দলকে উয়েফা নেশন্স লিগ জয়ে সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ তারকা রাখেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
গত দেড় দশকের ইতিহাস বলে এই তালিকায় তাদের না থাকাটাই বিষ্ময়ের। গতবার যেমন সেরা তিনে মেসি না থাকায় সমালোচনার মুখে পড়েছিল ফিফা। নেইমার-সালাহদের মত তারকাদের ভিড়ে সেরা তিনে এবার ফন ডিকের জায়গা পাওয়া ছিল ভিন্ন অভিজ্ঞতা। লম্বা সময় পর কোনো ডিফেন্ডার এই তালিকার শীর্ষে উঠে এলেন। মাঠে নিজেকে প্রমাণ করেই এই পর্যায়ে এসেছেন ফন ডিক। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের পাশাপাশি দলকে উয়েফা নেশন্স লিগের ফাইনালে নেয়ার পথে অবদান রাখেন ২৮ বছর বয়সী তারকা। ক্লাব ও দেশের হয়ে ৫৯ ম্যাচে অংশ নিয়ে নয় গোলের পাশাপাশি করেন চার বার গোলে সহায়তা।
অনুষ্ঠানে লিভারপুলের উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ী কোচ ইয়ুর্গুন ক্লপের হাতে তুলে দেওয়া হয় বর্ষসেরা কোচের পুরস্কার। ম্যানচেস্টার সিটিকে প্রিমিয়ার লিগ জেতানো পেপ গার্দিওলা ও টটেনহামকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে তুলতে ভূমিকা রাখা মাউরিসিও পচেত্তিনোকে হারিয়ে এই খেতাব জিতে নেন জার্মান কোচ। বার্সার মার্ক আন্দ্রে-টের স্টেগেন ও ম্যান সিরিটর এদেরসনকে হারিয়ে বর্ষসেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার জিতেছেন লিভারপুলের ব্রাজিলিয়ান তারকা আলিসন বেকার।
যুক্তরাষ্ট্র তারকা অ্যালেক্স মরগান এবং উয়েফা বর্ষসেরার খেতাবজয়ী ইংল্যান্ডের লুচি ব্রোঞ্জকে হারিয়ে বর্ষসেরা নারী খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মেগান রাপিনো। এছাড়া বর্ষসেরা গোলের জন্য মেসিকে হারিয়ে পুসকাস অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন হাঙ্গেরির ড্যানিয়েল সোরি।
জাতীয় দলের কোচ, অধিনায়ক ও বিশ্বজুড়ে ফিফা কতৃক নিবন্ধিত সাংবাদিক ও ফুটবল প্রেমীদের ভোটে বর্ষসেরা নির্বাচন করা হয়।
এক নজরে ফিফা বর্ষসেরা
পুরুষ খেলোয়াড় : লিওনেল মেসি
নারী খেলোয়াড় : মেগান রাপিনো
পুরুষ কোচ : ইয়ুর্গুন ক্লপ
নারী কোচ : জিল এলিস
পুরুষ গোলরক্ষক : আলিসন
নারী গোলরক্ষক : সারি ভন ভিনেনডাল
পুসকাস অ্যাওয়ার্ড : ড্যানিয়েল সোরি
ফান অ্যাওয়ার্ড : সিলভিয়া গ্রেকো
ফেয়ার প্লে অ্যাওয়ার্ড : মার্সেলো বিয়েলসা
বর্ষসেরা পুরুষ একাদশ : আলিসন (লিভারপুল/ব্রাজিল); মাতাইজি ডি লিট (জুভেন্টাস/নেদারল্যান্ডস), মার্সেলো (রিয়াল মাদ্রিদ/ব্রাজিল), সার্জিও রামোস (রিয়াল মাদ্রিদ/স্পেন), ভার্জিল ভন ডিক (নেদারল্যান্ডস/লিভারপুল), ফ্রেঙ্কি ডি ইয়াং (বার্সেলোনা/নেদারল্যান্ডস), এদেন আজার (রিয়াল মাদ্রিদ/বেলজিয়াম), লুকা মদরিচ (রিয়াল মাদ্রিদ/ক্রোয়েশিয়া), ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো (জুভেন্টাস/পর্তুগাল), কিলিয়ান এমবাপে (পিএসজি/ফ্রান্স), লিওনেল মেসি (বার্সেলোনা/আর্জেন্টিনা)।
বর্ষসেরা নারী একাদশ : সারি ভন ভিনেনডাল, লুচি ব্রোঞ্জ, নিলা ফিচার, কেলি ও’হেরা, ওয়েন্ডি রেনার্ড, জুলি আর্তজ, অ্যামান্ডিন হেনরি, রোস লাভেলি, মার্তা, অ্যালেক্স মরগান, মেগান রাপিনো।
তাঁদের ভোট...
জাতীয় দলের অধিনায়ক হওয়ায় বর্ষসেরা নির্বাচনে সেরা তিনে জায়গা পাওয়া লিওনেল মেসি, ভার্জিল ফন ডিক ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোও ছিলেন ভোটার। নিয়ম অনুযায়ী নিজের ভোট নিজেকে দেয়া যায় না। সেখানে মেসি ভোট দিয়েছেন রোনালদোকে কিন্তু রোনালদোর বিবেচনায় সেরা বিশ্বের সেরা তিন তারকার তালিকায় ছিলেন না মেসি।
মেসির প্রথম পছন্দ ছিলেন সাদিও মানে, দ্বিতীয় ভোটটি দেন চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী রোনালদোকে, আর তৃতীয়টি দেন কিলিয়ান এমবাপেকে। ফন ডিকের প্রথম পছন্দ ছিলেন মেসি এরপর যথাক্রমে দুই সতীর্থ মোহাম্মাদ সালাহ ও সাদিও মানে। কিন্তু রোনালদোর কোনো ভোট পাননি মেসি কিংবা ভন ডিক। সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ তারকার সেরা তিন পছন্দ ছিলেন যথাক্রমে মাতাইজি ডি লিট, ফেঙ্কি ডি ইয়াং ও কিলিয়ান এমবাপে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন