বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

দাউদ (আ:)-এর ঐশী জিঞ্জির ও ধোঁকাবাজ বনি ইসরাইল

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:১৭ এএম

বনি ইসরাইলের ধোঁকাবাজি ও প্রতারণা ইতিহাস খ্যাত। এ ধোঁকাবাজির কারণে জাতি হিসেবে কলঙ্কের টিকা তাদের কপালে শোভা পেতে থাকে এবং এ যাবত তা কখনো মুছে যায়নি। আল্লাহ তা’আলা বনি ইসরাইলের মধ্যে যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসূল প্রেরিত করে এবং তাদেরকে বিপুল নেয়ামত দান করে দুনিয়াতে রাজত্ব ও সম্পদের অধিকারী করেছিলেন। কিন্তু তারা আল্লাহর বহু নবীকে হত্যা করার মতো মহাপাপ ছাড়াও তাদের পাপাচার-অনাচারের তালিকা সুদীর্ঘ। আল্লাহর নাফরমানিতে তাদের জুড়ি ছিল না। তাদের খোদাদ্রোহিতা ও নাফরমানির করুণ পরিণতির শিকার হয়েছে তারা। তাদের প্রতি আল্লাহর প্রদত্ত নানা প্রকারের দান পর্যন্ত উঠিয়ে নেয়া হয়েছে।

এ অকৃতজ্ঞ নাফরমান জাতির ওপর আজাবে এলাহীর বহু কাহিনী খোদ কোরআনে বর্ণিত হয়েছে। এসব কাহিনীর মধ্যে উদাহরণস্বরূপ বনি ইসরাইলের একটি ধোঁকা উল্লেখ করা যেতে পারে, যার ফলে তাদের প্রতি খোদা প্রদত্ত একটি অপূর্ব নেয়ামত দান প্রত্যাহার করে নেয়া হয় এবং যার কারণে শয়তানি কুমন্ত্রণা ধোঁকাবাজি-প্রবঞ্চনার ধারা দুনিয়াতে ব্যাপকভাবে চালু হয়। ঘটনাটি হযরত দাউদ (আ:)-এর প্রদত্ত একটি আসমানি তোহফা দ্বারা বণি ইসরাইলের উপকৃত হওয়ার সাপেক্ষ স্বরূপ এবং তা একটি খোদা প্রদত্ত জিঞ্জির বা শিকল।

হযরত দাউদ (আ:)-এর ওফাতের পর এ জিঞ্জিরকে নিয়ে ধোঁকাবাজি করার পরিণতিতে আল্লাহ তা’আলা তা বনি ইসরাইল হতে চিরতরে উঠিয়ে নেন। আল্লাহ তা’আলা হযরত দাউদ (আ:)-কে একখানা জিঞ্জির (শিকল) দান করেছিলেন, যা তার যাতায়াতকালে লটকে থাকত এবং তার বৈশিষ্ট্য ছিল এই যে, জিঞ্জিরের এক মাথা তার এবাদতখানার সাথে সংযুক্ত থাকত।

লৌহ শক্তিসম্পন্ন এ অগ্নি বর্ণের গোলাকৃতির জিঞ্জিরের প্রতি দুই বৃত্তের মধ্য ভাগে মুক্তা খচিত ছিল এবং সেগুলোর পার্শ্ব স্থানগুলোতে যখন বাতাসের গতিবিধি সৃষ্টি হতো, জিঞ্জির তাতে ঝন ঝন করে উঠত এবং তাতে তিনি সকল প্রকার ঘটনা অবহিত হতেন। যেকোনো রোগী এ জিঞ্জির স্পর্শ করত, সঙ্গে সঙ্গে সুস্থ হয়ে যেত।

এ অবস্থা তার জীবদ্দশা পর্যন্ত অক্ষুণœ ছিল এবং তার ওফাতের পরও কিছু দিন এ অবস্থা অব্যাহত থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা থাকেনি। আর তা এভাবে যে, হযরত দাউদ (আ:)-এর ওফাতের পর বনি ইসরাইল উক্ত জিঞ্জিরের মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলার দরবারে প্রার্থনা করতে থাকে।

সুতরাং যখনই কেউ কারো প্রতি অত্যাচার-নির্যাতন চালাত, কিংবা কারো অধিকার হরণ করত তখন বাদী অভিযোগকারী এসে জিঞ্জির ছুঁইত। সে যদি তার দাবিতে সত্য হতো, তখন জিঞ্জির তার হাতে এসে যেত এবং যদি মিথ্যা হতো, তা হলে জিঞ্জির তার হাতে আসত না এবং বনি ইসরাইলে এ ধারা তখন পর্যন্ত অব্যাহত ছিল যতক্ষণ না তারা ধোঁকা-চালবাজিতে লিপ্ত হয়ে পড়ে।

খোদায়ী এ অদ্ভুত ব্যবস্থাকে বনি ইসরাইলের লোকেরা ছল-চাতুরি ও ধোঁকাবাজির কলা-কৌশলে অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে গিয়ে কিভাবে হারিয়ে ফেলে সে কাহিনী বিভিন্ন সূত্রে এরূপ :
বনি ইসরাইলের এক ব্যক্তি এক জমিদার ব্যক্তির নিকট একটি মূল্যবান মুক্তা আমানত রাখে। কিছুদিন পর জমিদার ব্যক্তির কাছ থেকে সেই মুক্তাটি ফেরত চায় কিন্তু আমানতদার তা অস্বীকার করে এবং বলে যে, সে আমার নিকট কোনো আমানত রাখেনি এবং তার খেয়ানত বা আত্মসাতের ব্যাপারটি লোকানোর জন্য সে একটি কৌশল অবলম্বন করে যে, একটি লাঠি নিয়ে তাতে ছিদ্র করে এবং মুক্তা লাঠির ছিদ্রে লুকিয়ে রাখে।

অতঃপর তারা উভয়ে জিঞ্জিরের নিকট আসে। জমিদার তার দাবির কথা প্রকাশ করে এবং জিঞ্জির ধরার জন্য হাত প্রসারিত করে এবং জিঞ্জির তার হাতে এসে যায়। অতঃপর বিবাদী (আমানতদার) কে বলল, এবার তুমি জিঞ্জিরে হাত লাগাও। সে জবাব দিলো, তুমি আমার লাঠি ধর, যাতে আমি জিঞ্জির ধরতে পারি। সুতরাং জমিদার লাঠি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। অতঃপর বিবাদী শপথ করে বলে যে, উক্ত আমানত তার কাছে নেই। বরং খোদ তার মালিকের (জমিদারের) নিকট রয়েছে এবং একথা বলেই সে জিঞ্জিরের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় এবং জিঞ্জির তার হাতে চলে আসে। যেহেতু তখন পর্যন্ত সে তার কথায় সত্য ছিল।

কেননা ঐ মুক্তা সে সময় লাঠির মধ্যে ছিল এবং লাঠি দ্বারা ধোঁকাবাজ জমিদারকে ফাঁসিয়ে দেয়, তাই জিঞ্জির তার হাতে এসে যায়। কিন্তু সেসব লোক সেখানে উপস্থিত ছিল এবং তাদের মধ্যে জিঞ্জির সম্পর্কে সন্দেহ হয় এবং তার প্রতি তাদের অবিশ্বাস জন্মে।

এ অবস্থায় পরবর্তী ভোরে লোকেরা যখন ঘুম থেকে উঠে তখন দেখতে পায় যে, জিঞ্জির গায়েব। এভাবে বনি ইসরাইলের ধোঁকাবাজি ও প্রতারণার কারণে আল্লাহ তা’আলা তা আসমানে উঠিয়ে নেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
শাহজালাল ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:১১ এএম says : 0
মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা সবকিছু করতে পারেন, কীভাবে, কখন এবং কোথায় করবেন মানব জাতি জানে না।
Total Reply(0)
জাহাঙ্গীর ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৫৩ এএম says : 0
ইতিহাসে একটি দুর্ধর্ষ জাতি ইহুদি, প্রাক ঐতিহাসিক যুগ হতে এরা বেশ বেপরোয়া ও হিং¯্র প্রকৃতির।
Total Reply(0)
মহররম আলী ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৫৪ এএম says : 0
অত্যাচার, আক্রমণ, জিঘাংসা ও অন্য ধর্মের প্রতি ক্ষোভ আদিকাল হতেই এদের মনে বিরাজ করে আসছে।
Total Reply(0)
মহররম আলী ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৫৬ এএম says : 0
জঘণ্য মনোবৃত্তি ইহুদিদের। চড়া সুদখোর ও ধনলিপ্সু জাতি হিসেবেও তাদের একটা পরিচয় রয়েছে। বর্বর এ জাতি যুগ যুগ ধরে খোদাদ্রোহিতা, কুফরি ও তাদের খারাপ কর্মকা-ের জন্য মানুষের কাছে ঘৃণাভরে পরিচিতি পেয়ে এসেছে। তারা অন্যের ওপর দিয়ে যুগে যুগে তাদের নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে।
Total Reply(0)
মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৫৮ এএম says : 0
আজ ইহুদিরা তাদের নাশকতামূলক কর্মকা- ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার দ্বিতীয় পর্যায়ে এবং শ্রেষ্ঠত্ব ও আধিপত্যের তুঙ্গে অবস্থান করছে। আমরা বর্তমানে আমাদের ঐশ্বরিক কর্তৃত্ব ও আধিপত্যের সূচানলগ্নে প্রবেশ করেছি এবং আমরা তাদের কুৎসিত চেহারা উন্মোচন করার পর্যায়ে রয়েছি ওই সময় যখন মহান আল্লাহ আমাদেরকে তাদের বিরুদ্ধে বিজয়ী করবেন।
Total Reply(0)
সাইফুল কবির ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৫৮ এএম says : 0
শুকরিয়া, লেখাটি পড়ে অনেক কিছু জানা যাবে।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন