শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

বরাদ্দের টাকা লুটপাট

কাগজ-কলমে সমাপ্ত দেখিয়ে বিল উত্তোলন

কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ১ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার কর্মসূচির নামে বরাদ্দের টাকা হরিলুট। সিংহভাগ এলাকায় কাজ না করেই বিল উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। একসাথে একাধিক প্রকল্পসহ সীমিত সময় এবং জুনের মধ্যেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করাকেই দায়ী করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ।

জেলার তিস্তা নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় চিলমারী উপজেলায় রয়েছে ৬টি ইউনিয়ন। দারিদ্রপীড়িত এই উপজেলায় সরকারীভাবে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কারে ১ম ও ২য় পর্যায় টেস্ট রিলিফ (টিআর)-৮৭টি প্রকল্পে ১২কোটি ৪৮ লাখ ২হাজার ৯০১ টাকা, কাজের বিনিময় টাকা (কাবিটা)-১৩টি প্রকল্পে ০৪ কোটি ৫২লাখ ৪ হাজার ১০০টাকা এবং কাজের বিনিময় খাদ্য (কাবিখা)-৮টি প্রকল্পে ৩১ লাখ ৩৫ হাজার ২১টাকা ও ১৪টি প্রকল্পে ২৩৬ দশমিক ৮৬০২ মে.টন গম বরাদ্দ দেয়া হয়।

নদের ভাঙন কবলিত এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, থানাহাট ইউনিয়নের চিলমারী মডেল থানার সামনে নুরুল হকের পুকুর পাড় হতে বাড়ি মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের জন্য ১ লাখ ২৮ হাজার ২০০ টাকা এবং মাটিকাটা নূরানী মাদরাসা হতে ওমর হাজীর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের চর উদনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ ভরাটের জন্য ৭০হাজার টাকা, সোনবোন পাড়া পাকা রাস্তা হতে ইয়াকুবের বাড়ি পর্যন্ত ৭৩ হাজার ৭০০ টাকা, ময়জুদ্দি মেম্বারের বাড়ি হতে বৈরাগীরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের জন্য ৭৮হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও কোন কাজই করা হয়নি। অথচ কাগজ-কলমে কাজ সমাপ্ত দেখিয়ে জুনের মধ্যেই বিল উত্তোলন করা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ব্রাক মোড় হতে রেলক্রসিং পর্যন্ত কাঁচা রাস্তা এবং অধিকারী পাড়ার হতে পূর্বদিকে মকবুলের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার জন্য ৪৩ হাজার ২৮০টাকা করে বরাদ্দ দিলেও এখানে এক কোদাল মাটি কাটা হয়নি। তারা আরো বলেন, প্রচার-প্রচারণা না থাকায় স্থানীয়রা জানতে পারে না। যার কারণে মাঠ পর্যায় কাজ না করেই প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনের লোকজন আতাত করেই সরকারের উন্নয়নের টাকা পকটেস্থ করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জনপ্রতিনিধি বলেন, যে টাকা বরাদ্দ আসে সেই টাকার কমিশন দিতে হয় স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। তাই সব কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয় না। তারা আরো বলেন, সরকারের একাধিক প্রকল্প আসে বছরের মাঝামাঝি সময়। যা অল্প সময়েই শেষ করার নির্দেশ থাকে। প্রকল্প শেষ হতে না হতেই বন্যা চলে আসে। ফলে অনেকেই নামকা ওয়াস্তে বন্যা শুরুর কয়েকদিনের মাথায় কাজ করলেও পরে বন্যায় ক্ষতি দেখানো হয়।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানাযায়, ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে থানাহাট ইউনিয়নে টিআর-২৮টি প্রকল্পে ০৪ কোটি ৫২ লাখ ১হাজার ৩১০ টাকা। কাবিখা প্রকল্পে ১৩০.৬৫৪ মে.টন গমসহ ৬ লাখ ৬৯ হাজার ৪৯১ টাকা। কাবিটা-৩টি প্রকল্পে ১ কোটি ২২ লাখ ৮ হাজার ১৫০ টাকা। রাণীগঞ্জ ইউনিয়নে টিআর-১৬টি প্রকল্পে ১ কোটি ৭৭ লাখ ৮ হাজার ৩২৭ টাকা। কাবিখা প্রকল্পে ১৬ দশমিক ৪১২২ মে.টন গমসহ ১২ লাখ ৩১ হাজার ৯০ টাকা। কাবিটা-১টি প্রকল্পে ৩ লাখ ২২ হাজার টাকা। অস্টমিরচর ইউনিয়নে টিআর-১০টি প্রকল্পে ১ কোটি ৭৭ লাখ ৮ হাজার ৪৪৬ টাকা। কাবিখা প্রকল্পে ১০ দশমিক ৫০১ মে.টন গমসহ ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৭৩০ টাকা। কাবিটা-৬টি প্রকল্পে ২ কোটি ৪০ লাখ ০৬ হাজার ৩২০ টাকা। নয়ারহাট ইউনিয়নে টিআর-৪টি প্রকল্পে ৯ লাখ ৪৭ হাজার ৮২০ টাকা। কাবিখা প্রকল্পে ৮ দশমিক ৫২ মে.টন গমসহ ২ লাখ ৮৩ হাজার ৩৬০ টাকা। কাবিটা-০৫ লাখ ৬৭ হাজার ৬৩০ টাকা। রমনা ইউনিয়নে টিআর-১১ টি প্রকল্পে ১ কোটি ৩৫ লাখ ৬ হাজার ৬৯৮ টাকা। কাবিখা প্রকল্পে ৩৯ দশমিক ১৯৬ মে.টন গমসহ ৩ লাখ ২২ হাজার ৬৩০ টাকা। চিলমারী সদর ইউনিয়নে টিআর-৯টি প্রকল্পে ১ কোটি ৫৪ লাখ ৪ হাজার ২৬০ টাকা। কাবিখা প্রকল্পে ৩২ দশমিক ০৪৫মে.টন গমসহ ২ লাখ ৪৪ হাজার ৭২০ টাকা।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ কোহিনুর রহমান বলেন, কাজ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে। প্রকল্প কমিটিকে চেকের মাধ্যমে টাকা প্রদান করা হয়। অনেকেই প্রকল্পের বিষয় জানেন না প্রশ্নের জবাবে বলেন,বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন সবাই প্রকল্পের বিষয় জানেন।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন