॥ এক ॥
নবী (স.) এর আবির্ভাবের পূর্বে জাহেলী যুগে নারী ও কন্যা শিশুর নিরাপত্তা বলতে কিছু ছিল না। ধর্ষন ব্যাভিচার ছিল নিত্তনৈমিত্তিক ঘটনা। এ কারণে মান সম্মান রক্ষায় কন্যা শিশুর জন্মের পর পিতা মাতা তাদের আদরের কন্যাকে মাটির গর্তে জীবন্ত পুতে ফেলত। ইসলাম আবির্ভাবের পর সে বর্বর মানুষগুলো এমন নৈতিক মানে উন্নত হল, এমন সব নিয়ম নীতির অধীন হল যাতে ধর্ষন যৌন নির্যাতন ঐ সমাজ থেকে প্রায় সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হল। বর্তমান বিশে^র বিভিন্ন দেশের দিকে আমরা যদি তাকাই তবে দেখবো উন্নত সভ্য জাতির দাবীদার আইনের কঠোরতা সত্ত্বেও ইউরোপ আমেরিকার নারীরা যে পরিমানে ধর্ষন ও যৌন হয়রানীর শিকার হয় মুসলিম বিশে^ সে হার অনেক কম। ইসলামী অনুশাসন (যদি ও ইসলামী অনুশাসন পূর্নভাবে মুসলিম বিশে^র রাষ্ট্রগুলোতে মেনে চলা হয় না) কিছুটা মেনে চলাই মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ রাষ্ট্রগুলোতে ধর্ষন যৌন হয়রানী কম হওয়ার অন্যতম কারণ। তাই ব্যাক্তি, সমাজ, রাষ্ট্রে ইসলামী বিধান প্রতিষ্ঠাকে গুরুত্ব দিতে হবে। ইসলামে বিবাহ বহির্ভুত যে কোন ধরণের যৌন সম্পর্ক ও অশ্লিলতা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন- “তোমরা ব্যাভিচারের কাছে ও যেয়োনা নিশ্চয় তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ” (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত-৩২)। তিনি আরো বলেন- “লজ্জাহীনতার যত পন্থা আছে এর নিকটে ও যেওনা তা প্রকাশ্যে হোক বা গোপনে হোক” (সুরা আনআম, আয়াত-১৫১)। বর্তমানে বাংলাদেশে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানীর ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইসলাম ব্যাভিচার রোধে যে সকল প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা নির্ধারণ করেছে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা না করা এর অন্যতম কারণ। ইসলাম প্রতিরোধ মূলক যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তার কতিপয় দিক আলোচনা করছি- জেনা ব্যভিচার মহাপাপ, মৃত্যুর পর তার জন্য কঠিন শাস্তি প্রদান করা হবে এ বিষয়ে কুরআন ও হাদীসে যে সকল বর্ণনা রয়েছে শিক্ষক, ইমাম ও মিডিয়ার মাধ্যমে তা প্রচার করে ব্যাভিচার প্রতিরোধে ভুমিকা রাখতে হবে। দেখা থেকে কামনার সৃষ্টি হয় এজন্য ইসলাম নারী পুরুষ উভয়কে দৃষ্টি নত রাখতে নির্দেশ দিয়েছে। সে জন্য মহরম ( যাদের সাথে বিবাহ বৈধ নয়) তারা ব্যতীত বিনা প্রয়োজনে অন্যদের সাথে কথা বার্তা না বলা ও দেখা সাক্ষাত না করতে উৎসাহিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে পরিবারকে যথাযথ ভূমিকা রাখতে হবে। নবী (স.) বলেন- নির্জনে কোন নারী পুরুষ একত্রিত হলে তাদের মধ্যে তৃতীয় জন হয় শয়তান (অর্থাৎ শয়তান তাদেরকে পাপের দিকে উৎসাহিত করে, তিরমিযি)।
কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষা ক্ষেত্রে ও অন্যান্য ক্ষেত্রে নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা বন্ধ করার ব্যবস্থা করতে হবে। নারী পুরুষের পরস্পর আকর্ষণ চিরন্তন। অবাধ মেলামেশার সুযোগে বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটে। নারী পুরুষের একত্রে অবস্থানের ফল সম্পর্কে বাস্তব কিছু ঘটনা আমি তুলে ধরছি- স্লিম, স্মার্ট কিন্তু ভারী নিতম্বের কারণে বিশে^ আলোচিত তারকা কিম কার্দেশিয়ান। তার দেহ সোষ্ঠবের কারণে যেন বিড়ম্বনায় পড়তে না হয় তাই তাকে সুরক্ষায় রয়েছে নিরাপত্তা প্রহরী। নিউইয়র্কে একটি অনুষ্ঠানে (ফোবস ওম্যান সামিটে) তিনি উপস্থিত হন। হঠাৎ দেখা যায় নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বে থাকা ব্যাক্তির হাত চলে যায় কিমের নিতম্বে। ছবি শিকারীরা এ দৃশ্য ক্যামেরা বন্দী করে (সুত্র বাংলাদেশ প্রতিদিন ১৬/০৬/২০১৭। নারায়নগঞ্জের সিদ্দিরগঞ্জের মিজমিজি কান্দির পাড়ার অক্সফোর্ড হাই স্কুলের শিক্ষক আরিফুল ইসলাম, তার কোচিং সেন্টারের একটি কক্ষে খাট ছিল। সেখানে অসংখ্য ছাত্রীর সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করে মোবাইলে ছবি তুলে রাখে। কোন ছাত্রী অভিযোগ করেনি। এলাকাবাসী সন্দেহ বশতঃ তার মোবাইল জব্দ করে তাকে আটক করে। র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে সে ২০ জন ছাত্রীর সাথে দৈহিক সম্পর্কের কথা স্বীকার করে। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার কুতুবপুর ইউনিয়নের বায়তুল হুদা ক্যাডেট মাদরাসার অধ্যক্ষ আল আমিন র্যাবের কাছে বিভিন্ন সময়ে তার আবাসিক মাদরাসার ১১ ছাত্রীকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে (সুত্র- যুগান্তর ০৫/০৭/১৯)। ঠাকুরগাঁও এর পীরগঞ্জের গোদাগাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক কালাচাদ রায় দীর্ঘদিন থেকে তার কোচিং সেন্টারে ছাত্রীদের সাথে অবৈধ কাজ করত। একবার এক ছাত্রীর সাথে অবৈধ কাজ করার সময় অন্য ছাত্রী গোপনে তা দেখে ফেলে এবং তার মোবাইলে ভিডিও করে প্রধান শিক্ষকের নিকট জমা দেয়। এ ক্ষেত্রে ও ভিকটিম ছাত্রী কোন অভিযোগ করেনি। (সুত্র দৈনিক যুগান্তর ১২/০৭/১৯)। একটি স্কুলে একজন শিক্ষক অসংখ্যা ছাত্রীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক করে ল্যাপটপে ভিডিও ধারণ করে রাখে। স্কুলের একটি কক্ষে ঐ শিক্ষক থাকত, সেখানে তার বন্ধুরা ও ছাত্রীদের সাথে অবৈধ কাজ করত। এখানে ও কোন ছাত্রী অভিযোগ করেনি। দুর্ঘটনাক্রমে অন্য একজন শিক্ষক তার ল্যাপটপে কাজ করতে গেলে বিষয়টি ফাঁস হয়। দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাঙ্গন বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষকদের যৌনহয়রানীর ঘটনা প্রায় পত্রিকার পাতায় দেখা যায়। পরিমল জয়দরদের বিষয়টি যেমনি দেশের আলোচিত ঘটনা ছিল তেমনি ফেণীর সোনাগাজীর মাদরাসা ছাত্রী যৌন হয়রানী ও পুড়িয়ে মারার ঘটনায় অধ্যক্ষ গ্রেফতারের ঘটনা সারাদেশের আলোচিত ঘটনা। এ ধরণের অসংখ্য ঘটনা ঘটে চলছে। বাস্তবে সামান্য পরিমাণ প্রকাশিত হচ্ছে। প্রশ্ন হল এ ধরণের ঘটনা কেন ঘটছে? তার সঠিক উত্তর নারী পুরুষের অবাধ মেলা মেশার সুযোগ থাকা। ইসলাম নারীদের কর্ম করাকে নিষেধ করেনি। দেশে মেয়েদের জন্য যে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা রয়েছে সেখানে যদি শুধু মহিলা শিক্ষিকা থাকত, মহিলাদের জন্য আলাদা মহিলা বিশ^বিদ্যালয়, মহিলা মেডিকেল কলেজ থাকত যেখানকার শিক্ষক কর্মচারী সকলে যদি মহিলা হত তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানীর যে ব্যাপকতা দেখা দিয়েছে তা শূণ্যের কোটায় নেমে যেত। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে ও শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহ বৃদ্ধির ফলে দেশে স্কুল কলেজে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখানে সহ শিক্ষা থেকে বেরিয়ে এসে মেয়েদের আলাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং মহিলা শিক্ষিকা দ্বারা পাঠদান সময়ের দাবী। শতকরা ৩০ ভাগ বা ৪০ ভাগ কোটার মাধ্যমে সকল স্কুল কলেজ মাদরাসায় পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদের নিয়োগ দেয়ার চেয়ে মেয়েদের স্কুল-কলেজে শতভাগ মহিলা শিক্ষিকা, ছেলেদের প্রতিষ্ঠানে শতভাগ পুরুষ শিক্ষক নিয়োগ দিতে সমস্যা কোথায়? বিষয়টি রাষ্ট্র পরিচালকদের ভেবে দেখা দরকার। সহ শিক্ষার কুফলে সহপাঠি কর্তৃক ধর্ষনের সেঞ্চুরী করার পর ও সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালকের বোধোদয় না হওয়া আশ্চর্যজনক।
এভাবে নারীদের কর্মক্ষেত্র আলাদা হলে সে কর্মক্ষেত্রের তত্ত্বাবধায়ক নারী হলে অথবা নারী পুরুষ কর্মক্ষেত্র একত্রে হলেও তাদের তত্ত্বাবধায়ক পুরুষ না রেখে একই কর্মক্ষেত্রে নারীদের আলাদা ইউনিট করে তাদের তত্ত্বাবধায়ক নারী করা যেতে পারে। যদি নারীদের জন্য আলাদা যানবাহন হয়। সে যানবাহনে যদি কোন নারী পর্দার সাথে ড্রাইভিং করে, কোন নারী যদি হেলপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে, সে যানবাহনে পুরুষদের বহন করা যদি নিষিদ্ধ থাকে, ইসলাম কি তাকে নিষেধ করবে? নারীরা কি তাতে অখুশি হবে? এভাবে পর্যায়ক্রমে সকল ক্ষেত্রে করা হলে নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা কমে গেলে ধর্ষণ যৌন হয়রানী অবশ্য কমবে। নারী পুরুষ অবাধ মেলা মেশার সমর্থক রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবিদের অনেকের মুখোশ বিতর্কিত লেখিকা তাসলিমা নাসরিন তার “ক” এবং “খ” নামক বইয়ে উন্মোচন করেছেন। তার সাথে যারা যৌনকর্মে লিপ্ত হয়েছে তাদের অনেকের নাম ঐ বই দুটিতে উল্লেখ করেছেন।
শালীন পোষাক ও পর্দা মেনে চলাচল করা- ঘরের কাজের গুরুত্ব অনেক বেশী। ঘর গোছানো, রান্না করা, সন্তান মানুষ করা ইত্যাদি সুন্দর ভাবে সুসম্পন্নে নারীর অবদান অনস্বীকার্য। তাই নারীরা বাইরের কাজের চেয়ে ঘরের কাজে বেশী সম্পৃক্ততা থাকলে বাইরে গিয়ে নীগৃহিত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। নারীর বাইরে যাওয়া যদি বেপর্দা ও অশালীন পোষাক পরে হয় তা যৌন হয়রানীকে উস্কে দেয়। বোরকা হল নারী দেহের সৌন্দর্য ঢেকে রাখার জন্য। কিন্তু বোরকা যদি আকর্ষণীয়, রঙ্গিন এবং তাতে শরীরের আকার আকৃতি বুঝা যায় তা বোরকা না হয়ে হয়ে যায় ফ্যাশন। নারীদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্য শালীন পোষাক পরা দরকার। শালীন পোষাক পরাকে ইসলাম গুরুত্ব দিয়েছে শুধু তা নয়, অন্যান্য বিবেকবান মানুষ বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে পেরেছেন। ভারতের জগদ গুরু মাতা মহাদেবী বলেছেন- মেয়েদের আরবদের মত পোষাক (বোরকা) পরা উচিৎ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন