স্বপ্ন অনেক বড়। ক্যারিয়ারের শুরুতেই সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন করেছেন শতভাগ উজাড় করে। গত ম্যাচে দলের হয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলা ওয়ান্ডার বয় লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলামকে দেখা গেল আত্মবিশ্বাসী। দিল্লিতে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে উড়ন্ত ভারতকে মাটিতে নামানো বাংলাদেশ দল গতকাল দুপুরে পৌঁছেছে দ্বিতীয় ম্যাচের ভেন্যু রাজকোটে। এখন টাইগারদের লক্ষ্য সিরিজ জয়। সে লক্ষ্যের কথাই দ্বীপ্তকণ্ঠে জানালেন তরুণ এই লেগি, ‘আমাদের লক্ষ্য ম্যাচ ধরে ধরে এগোনো। পরের ম্যাচটা ভালো খেলতে পারলে আশা করি সিরিজ জিতব।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে দেখিয়েছিলেন চমক। তখন অবশ্য আলোচনায় আসেন নি। দলটি জিম্বাবুয়ে বলেই হয়তো। কিন্তু এবারতো প্রতিপক্ষ ভারত। ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ী দলের বিপক্ষে ৩ ওভারে ২২ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়ে আমিনুল বুঝিয়েছেন, শক্তিশালী দলের বিপক্ষেও আলো ছড়াতে জানেন। আমিনুলের কাছে দুটি ম্যাচই সমান তাৎপর্যপূর্ণ, ‘অভিষেক ম্যাচ তো অভিষেক ম্যাচই! অভিষেক ম্যাচে ভালো করাটা খুব জরুরি ছিল। আর ভারত অনেক বড় দল। তাদের সঙ্গে ভালো করাটা ভীষণ আনন্দের।’
১৯ বছর বয়সী এই তরুণ ক্যারিয়ারের প্রথম দুটি ম্যাচেই সফল। তবে সফলতা নিয়ে বসে থাকার পাত্র তিনি নন। বুঝিয়ে দিলেন তার কথায়। লক্ষ্য তার অনেক দূর। মনে পড়ে উইন্ডিজ কিংবদন্তী ব্রায়ান লারার কথা। রেকর্ডের এই বরপুত্র ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে ৪০০ রানের ইনিংস খেলার সময় যখন তিনি সেঞ্চুরি করেছেন, কোন উদযাপন ছিল না। এমনকি দ্বিশতক, ত্রিপল হান্ড্রেড করার পরও তাকে দেখা গিয়েছিল খুবই স্বাভাবিক। যেন কোন অর্জণই করেননি তিনি। আসল ব্যাপারটা হল-তার লক্ষ্য ছিল হিমালয়। তাই তাজিনডং পেরিয়ে খুশি হতে প্রস্তুত ছিলেন না লারা। ঠিক যেন তেনই ফুটে উঠছে আমিনুলের চোখে-মুখে। ভালো করেই ক্ষ্যান্ত হওয়ার পাত্র তিনি নন, এগিয়ে যেতে চান বহুদূর। পেঁৗঁছতে চান উন্নতির চরম শিখরে, ‘ভালো দলের সঙ্গে খেলতে গেল সব সময়ই চ্যালেঞ্জ থাকে। আমাদের কোচ ডেনিয়েল ভেট্টোরি আছে। তাঁর সঙ্গে আলাপ করব, কীভাবে এগোনো যায়, আরও উন্নতি করা যায়।’
অবশ্য দিল্লি জয়ের অন্যতম এই নায়কের পক্ষে সহজ ছিল না ভারতের মাটিতে ভালো করা। প্রতিপক্ষ দলে ছিল বড় বড় নাম। গ্যালারিভর্তি ভারতের স্লোগান। ¯œায়ুচাপে ভোগার কথা বিশ্বের বড় তারকারও। তারা ভোগেনও বটে। কিন্তু কিভাবে সামাল দিলেন আমিনুল? কি ছিল তার কৌশল? জানালেন নিজের কন্ঠেই, ‘ব্যাটসম্যানকে ভেবে, ব্যাটসম্যান কোন জায়গায় খেলতে চাচ্ছে, ওদের বিপক্ষে বিপক্ষে বল করার লক্ষ্য ছিল। জায়গা মতো বোলিং করা। এটাই পরিকল্পনা ছিল, আর আমাদের সবার বিশ্বাস ছিল আমরা পারব। আল্লাহর রহমতে পেরেছি।’
তবে বারতের বিপক্ষে ম্যাচে অভিষেক ম্যাচের চেয়ে ভালো টার্নও পেয়েছেন আমিনুল। দারুণ এক ঘূর্ণিতেই কুপোকাত করেছেন রাহুলকে। তবে সামনে আরও কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে তার জন্য। কারণ তার বোলিংয়ের ভিডিও নিয়ে নিশ্চয় কাটাছেঁড়া করবে ভারতীয়রা। আর এ চ্যালেঞ্জটা নিচ্ছেন এ লেগি, ‘ভালো দলের বিপক্ষে চ্যালেঞ্জ থাকে কি করতে হবে না হবে। তো কোচ আছে, ভিডিও এনালিস্ট আছে ওদের সঙ্গে কথা বলব কীভাবে কি করলে আরও ভালো করা যায়। ওইভাবে আগানোর চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।’
আর ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই দারুণ খেলতে পারায় আত্মবিশ্বাস বেড়েছে আমিনুলের। জয় পাওয়াও তো মাত্রাটা আরও বেড়েছে। আর এ আত্মবিশ্বাস নিয়ে সামনে আরও ভালো করতে চান এ তরুণ, ‘ভারত খুব ভালো দল। ওদের সঙ্গে জেতাটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য। আলহামদুলিল্লাহ, সবাই ভালো চেষ্টা করেছে এবং আমরা জিততে পেরেছি। প্রথম ম্যাচটা আমরা জিতেছি, আমাদের লক্ষ্য ম্যাচ বাই ম্যাচ ভালো খেলা। পরের ম্যাচটা আরও ভালো খেলতে হবে।’
দিল্লিতে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি আমিনুলের লক্ষ্য ছিল একটাই- ব্যাটসম্যান বুঝে বোলিং করা। সেটিতে সফলও হয়েছেন। সেটির ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চান রাজকোটে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতেও।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন