শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতা : উচ্চশিক্ষার মান তলানিতে

ভিসিদের দলবাজি ওপেন সিক্রেট : ১৪ ভিসির দুর্নীতির তদন্ত চলছে

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ৮ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৩৯ এএম

 

বিগত শতকের ৮০ ও ৯০ দশকে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ছিল অস্ত্রের ঝনঝনানি। স্বৈরশাসক এরশাদ বিরোধী আন্দোলন এবং ছাত্র সংগঠনগুলোর একে অন্যের বিরুদ্ধে এবং আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘাত-সংঘর্ষে ক্যাম্পাস ছিল উত্তপ্ত। একদিকে শিবিরের অস্ত্রবাজি অন্যদিকে শিবির ঠেকাও এবং ছাত্রদল বনাম ছাত্রলীগের বিরোধে অনেক প্রাণ ঝড়ে গেছে। সেশনজট ছিল শিক্ষার্র্থীদের নিয়তি। সে পরিস্থিতি এখন নেই। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে ছাত্র শিবির হারিয়ে গেছে এবং ছাত্রদল কার্যত নিস্তেজ। কিন্তু উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় অস্থিরতা কমেনি। এখন ছাত্র সংগঠনের আধিপত্যের বিরোধ নয়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিসিদের অনিয়ম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় অভিন্ন চিত্র।

গত কয়েক বছরে দেশের কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, দলবাজি এবং ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগে ছাত্র আন্দোলন হয়েছে, হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা দলদাস ভুমিকা পালন করছে; এমনকি ভিসির সন্মানিত পদ ছেড়ে যুবলীগের সভাপতি হওয়ার চেষ্টার মতো ঘটনা ঘটছে। ক্যাম্পাসে শিক্ষকদের দলবাজি শিক্ষার মানকে তলানিতে নিয়ে গেছে। যার জন্যই আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিং এ বিশ্বের এক হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম নেই। অথচ নেপাল, পাকিস্তান, ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নাম ওই তালিকায় জ্বল জ্বল করছে।

দেশের ১৪ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের (ভিসি) বিরুদ্ধে তদন্ত করছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। অভিযুক্তদের মধ্যে একাধিক সাবেক ভিসিও রয়েছেন। নিয়োগ বাণিজ্য, অর্থ আত্মসাৎ ও অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি-পদায়নসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে ভিসিদের বিরুদ্ধে। ভিন্ন ভিন্ন তদন্ত কমিটি করে ভিসিদের অনিয়ম তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। ভিসিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি তদন্তের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের অনিয়ন দুর্নীতি ও সেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদে ছাত্রছাত্রীরা আন্দোলনে নেমেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়ম না মেনে এবং দলীয় আনুগর্তকে গুরুত্ব দিয়ে নিয়োগ দেয়ার কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিসিরা বেপরোয়া হচ্ছেন, ক্যাম্পাসে বিশৃংখলার সৃষ্টি হচ্ছে।

দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হওয়ার কথা গবেষণা কেন্দ্র। এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সৃষ্টি হওয়ার কথা নতুন নতুন জ্ঞান, দর্শন, তত্ত্ব। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা হওয়ার কথা শিক্ষার্থীদের কাছে আদর্শের মানুষ। কিন্তু নানা অনিয়ম-দুর্নীতি, অপকর্মের কারণেই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামছে শিক্ষার্থীরা। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। ভিসি নিয়োগ নিয়ে সংকট আছে। আবার ভিসির বিরুদ্ধে নিয়োগ, উন্নয়নকাজের কমিশন নেওয়াসহ স্পর্শকাতর নানা অভিযোগ উঠছে। নানা সংকট ও জটিলতার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতার কারণে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। এখনো আন্দোলন চলছে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, উন্নয়ন কাজে কমিশন, ছাত্রলীগকে চাঁদা প্রদানসহ নানা অভিযোগে আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীদের ওপর ভিসির পক্ষ হয়ে ছাত্রলীগ হামলা করার পর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়ার পরও আন্দোলনে রয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

ছাত্রলীগের নির্যাতনে নিহত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকা-ের পর থেকেই বন্ধ রয়েছে বুয়েটের শিক্ষা কার্যক্রম। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাবিপ্রবি) শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম ও ঘুষ নেয়ার প্রতিবাদে ভিসি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। তিন দফা দাবিতে আন্দোলনে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দুই হলের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের কারণে বন্ধ রয়েছে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)। নীতিমালা লঙ্ঘন করে শিক্ষক নিয়োগ দেয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও আন্দোলনে আছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্ল্যাট, এসি কেনা ও নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে ভিসির বিরুদ্ধে। এছাড়া ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেছেন গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি খোন্দকার নাসির উদ্দিন ও আহসান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. কাজী শরিফুল আলম।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে ছাত্রলীগকে বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা দেওয়ায় ভিসির বিরুদ্ধে তদন্তের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গত ২৩ আগস্ট শুরু হওয়া এ আন্দোলন ২ অক্টোবর মোড় নেয় ভিসিকে অপসারণের দাবিতে। ১০ দিন ভিসির কার্যালয় অবরুদ্ধ রাখার পর গত সোমবার সন্ধ্যা থেকে ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। মঙ্গলবার প্রশাসনিক ভবন অবরোধ এবং সর্বাত্মক ধর্মঘট পালন করেন আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ফলে কার্যালয়ে যেতে পারছিলেন না ভিসি। একপর্যায়ে আন্দোলনকারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার পরে বিকেল সাড়ে পাঁচটার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অপসারণের দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবারও উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ও ক্যাম্পাস ত্যাগের নির্দেশ দিয়ে বুধবার থেকে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের অবস্থান ও মিছিল-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই এই কর্মসূচিতে যোগ দেন তাঁরা।

আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর জামাল উদ্দিন বলেন, আমরা প্রায় তিন মাস ধরে ভিসির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়া দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত দাবি করে আসছিলাম। কিন্তু রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এরপর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তাঁর পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। দেড় মাস এ আন্দোলন চললেও ভিসি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কোনো বৈঠক করেননি। অথচ ভিসির তল্পিবাহক শিক্ষকেরা কোনো রকম তদন্ত ছাড়াই ভিসি দুর্নীতি করেননি বলে সাফাই গাওয়া শুরু করে।

আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র প্রফেসর রায়হান রাইন বলেন, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে আন্দোলন করছি আমরা। ছাত্রলীগের যারা টাকা পেয়েছে, তারাও গণমাধ্যমে টাকা পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছে। ভিসি দিনের পর দিন মিথ্যাচার করে গেছেন। আমরা চ্যান্সেলর বরাবর চিঠি দিয়েছি। কিন্তু রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মহলের বোধোদয় হয়নি। রায়হান রাইন বলেন, অথচ আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগ দিয়ে হামলা চালানো হলো। ভিসি গণমাধ্যমের সামনে ছাত্রলীগের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের সব ভর্তি কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বুয়েট: গত ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হলে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করেন শাখা ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী। এই ঘটনার পর থেকেই আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনের মুখে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধসহ দোষীদের গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে হত্যা মামলার অভিযোগপত্র ও বুয়েটের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ না করা পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে শিক্ষার্থীরা।

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়: গত ২৪ অক্টোবর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার নিয়োগে ভিসি রোস্তম আলীর ৮ লাখ ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ অবকাঠামো নির্মানে ঠিকাদারের কাছ থেকে কমিশন আদায়সহ বেশ কয়েকটি অনিয়মের প্রতিবাদে আন্দোলনে রয়েছেন সেখানকার শিক্ষার্থীরা। ভিসির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে প্রশাসনিক ভবনের অবকাঠামো নির্মানে ঠিকাদারের কাছ থেকে অধিক হারে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করা। এরই মধ্যে নিয়োগে ঘুষ কেলেঙ্কারি নিয়ে একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর শুরু হয় আন্দোলন। ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীরা ভিসিকে লাল কার্ড প্রদর্শন করেছেন। ১৫ নভেম্বর পাবিপ্রবির প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ১৪ নভেম্বরের মধ্যে দাবি না মানা হলে ভর্তি পরীক্ষা বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

কুয়েট: খেলার মাঠে দুই হলের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের জের ধরে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়: প্রথম বর্ষে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের হলে অবস্থান, সাধারণ শিক্ষার্থীদের হয়রানি না করা এবং বিতর্কিত শিক্ষক-কর্মকর্তাদের পরীক্ষার সঙ্গে জড়িত না রাখার দাবিতে আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউলাহর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ, তিনি বছরের অধিকাংশ সময়ই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান করেন না। যদিও তার নিয়োগের অন্যতম শর্তই ছিল ক্যাম্পাসে সার্বক্ষণিক অবস্থান। গত ২০১৮ সালের ৩৬৫ দিনের মধ্যে ২৯৫ দিনই তিনি ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত ছিলেন। ২০১৭ সালে ক্যাম্পাসের বাইরে ছিলেন ১৩১ দিন। চলতি বছরেও তার বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার খুবই কম।

এছাড়া ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি, ইউজিসির নির্দেশনা অমান্য করে জনবল নিয়োগ, শিক্ষক ও জনবল নিয়োগে দুর্নীতি ও অনিয়ম, সভাপতি হয়েও নিয়োগ বোর্ডে অনুপস্থিত থাকা, অবৈধভাবে গাড়ি বিলাসিতা, অর্গানোগ্রাম লঙ্ঘন করে নিয়োগ, নিয়ম ভেঙে সিটিং অ্যালাউন্স গ্রহণ, ইচ্ছামতো পদোন্নতি প্রদান, আইন ভেঙে নিয়োগসহ বিভিন্ন কমিটি গঠন, একাধিক প্রশাসনিক পদ দখল, স্বজনপ্রীতি, ক্রয় নীতিমালা লঙ্ঘন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কার্যক্রমে আর্থিক অনিয়মসহ নানা বিষয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন উপাচার্য নিজেই।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় : চলতি বছরের শুরুর দিকে শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে গালি দিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এস এম ইমামুল হক। ঘটনার প্রতিবাদে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় ক্যাম্পাস। পরে শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলনের মুখে উপাচার্যকে ছুটিতে পাঠানো হয়। ছুটিতে থাকা অবস্থায় তার মেয়াদ শেষ হয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নীতিমালা লঙ্ঘন করে নিয়োগের ইস্যুতে ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে আছেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে প্রভাষক পদে চাকরি না পাওয়া স্বর্ণপদকধারী নুরুল হুদা নামের এক ছাত্রের স্ত্রীর সঙ্গে প্রো-ভিসি চৌধুরী মো. জাকারিয়ার টাকা-পয়সা লেনদেন সংক্রান্ত ফোনালাপও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন।

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধেও ইউজিসি অনুমোদন না করা সত্ত্বেও ৫ কোটি টাকায় ঢাকায় লিয়াজোঁ অফিসের নামে ফ্ল্যাট কেনার অভিযোগ উঠেছে। এর চেয়ে বড় অভিযোগ, নিজস্ব ফ্ল্যাট থাকার পরও ভাড়া কাটা হচ্ছে লিয়াজোঁ অফিসের নামে। এছাড়া আছে বিনা টেন্ডারে ৫০ লাখ টাকার এসি কেনা ও নিয়োগ যোগ্যতা পূরণ না করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার নিয়োগের অভিযোগ। ইউজিসির নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এডহক ভিত্তিতে অসংখ্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

এরআগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও যৌন হয়রানির অভিযোগ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি খোন্দকার নাসির উদ্দিন। সর্বশেষ গত ৩১ অক্টোবর পদত্যাগ করেছেন আহসান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. কাজী শরিফুল আলম।

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, আমরা চাই না একে অপরের দ্বিমত প্রকাশের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হোক। সবার নিরাপত্তা ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে যেন কেউ আইন নিজের হাতে তুলে না নেন। তিনি বলেন, আমাদের কাছে মূল অভিযোগ তথ্য-প্রমাণাদিসহ দয়া করে আমাদের কাছে উপস্থাপন করুন, আমরা তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো। আমরা আশা করি সেখানে শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বজায় থাকবে এবং ছাত্রছাত্রীরা যার যার মতো যেটা ব্যবস্থা নেওয়ার সেটা ব্যবস্থা নেবেন।

অচলাবস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্বশাসিত, সেখানে নিজস্ব প্রশাসন আছে, মহামান্য প্রেসিডেন্ট ভিসি নিয়োগ দেন, সিন্ডিকেট আছে সেখানকার বডিগুলো ভিন্ন। আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে সরাসরি হস্তক্ষেপ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে করি না। সেখানে কোনও ধরনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া সরাসরি হস্তক্ষেপ করব, আইনি কাঠামোতে সেটা সম্ভব নয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির আইনি কাঠামোর মধ্য থেকেই আমাদের হস্তক্ষেপ করতে হয়।###

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (11)
Sheikh Habib ৮ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫৩ এএম says : 0
শুধু রাজনৈতিক পরিচয়ে ভিসি নিয়োগ দিলে এর চেয়ে ভালো কিছু আশা করা যায়না। বর্তমানের বেশির ভাগ ভিসির বিরুদ্ধেই নারী কেলেংকারী, নিয়োগ বাণিজ্য, স্বজনপ্রীতি নানান অভিযোগ আছে। বিশ্ব বিদ্যালয় গুলুর এমন অবস্থা যে, ঢাবি এর অবস্থা সারা বিশ্বের ১০০০ এর মধ্যে নাই। জাতি হিসেবে এর চেয়ে লজ্জার এর কি থাকতে পারে?
Total Reply(0)
শেখ ছানাউল মোরশেদ ৮ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫৩ এএম says : 0
কারন যোগ্যতা নয় চাটুকারী করে ভিসি হয়েছেন। যোগ্যতার মাপকাটি যখন চাটুকারী তখন এমন হওয়াটা স্বাভাবিক।
Total Reply(0)
Shariful Islam Sohel ৮ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫৩ এএম says : 0
শুধুমাত্র দলীয় যোগ্যতা বিবেচনায় নিয়োগ করার ফল
Total Reply(0)
Islamic magazine ৮ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫৩ এএম says : 0
ভিসি তো নয়,, সব জামালপুরের DC
Total Reply(0)
Md Mostafizur Rahman ৮ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫৪ এএম says : 0
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মকর্তাদের পিএসসির পরিক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া দরকার।এসএসসি ও এইচএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে ছাত্র ভর্তি করা দরকার।
Total Reply(0)
Ash Kawser ৮ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫৫ এএম says : 0
দেশের সমস্ত ভিসিদের কার্যকলাপ পর্যালোচনা করার সময় এসেছে তারা কি আসলেই শিক্ষক হওয়ার যোগ্য?
Total Reply(0)
Furkan Ullah ৮ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫৫ এএম says : 0
নিয়োগের পদ্ধতি ও রাজনীতি হল বড় সমস্যা।চোর বাটপারকে রাজনৈতিক পরিচয়ে নিয়োগ পদ্ধতি অনুসরণ না করে, নিয়োগ করলে এমন হবেই।
Total Reply(0)
Shohidul Emon ৮ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫৫ এএম says : 0
ভিসিদের কর্মকাণ্ডের জন্য তারা নিজেদের মর্যাদা রক্ষা করতে পারছেনা৷
Total Reply(0)
ash ৮ নভেম্বর, ২০১৯, ৪:৪২ এএম says : 0
SHORKAR DESH TAKE SHOB DIK DIE TOLANITE NIE JACHE, EVEN UNIVERSITY GOLO O REAHAI PAHCE NA ! JUBO SHOMAJ KE MEDHA HIN, MARUDONDO HIN , CHADA BAJ,MADOK SHEBI, DORSHOK, KHUNI HISHABE ODER TOIRI KORCHE AI HASINA SHORKAR
Total Reply(0)
Nadim ahmed ৮ নভেম্বর, ২০১৯, ১১:১২ এএম says : 0
I disagree with editor for 1 comment about shibir. In fact, SHIBIR never carried arms. They never depended on arms, they depended on idiology, character and discipline. That's why, the education was in higher level whichever institute was controlled by SHIBIR. This is true.
Total Reply(0)
Md. Ibrahim ৮ নভেম্বর, ২০১৯, ৩:২১ পিএম says : 0
দলবাজি করে নিয়োগ নিয়ে বেহায়ার মত কাজ, কথা বার্তা বলে পদের অমর্যাদা করছে। দলেরও বদনাম করছে। এমন অযোগ্য, প্রাণীলোর বিরুদ্ধে তড়িৎ ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন