শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কক্সবাজার পৌর মেয়রসহ ৩৭ জনের বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন চেয়েছে দুদক

কক্সবাজারে পানি শোধনাগার প্রকল্পে দুর্নীতি

কক্সবাজার জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৪ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

কক্সবাজার পানি শোধনাগার প্রকল্পে ভ‚মি অধিগ্রহণে দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত কক্সবাজার পৌর মেয়রসহ ৩৭ জনের বিরুদ্ধে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে দ্বিতীয়বারের মত মামলা দায়েরের অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। যা কমিশনের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমোদন সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন। জানা যায়, কক্সবাজার পানি শোধনাগার প্রকল্পে ভ‚মি অধিগ্রহণে আলোচিত দুর্নীতির অনুসন্ধান করতে গিয়ে রোষানলে পড়েছিলেন চাকরিচ্যুত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন। তার অনুসন্ধানে পৌর মেয়র ও আমলাসহ অনেকের সম্পৃক্ততা উঠে এসেছিল। কিন্তু অদৃশ্য কারণে মামলার অনুমোদন আর হয়নি। এরপর পুনরায় অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। এতে অনুসন্ধান কর্মকর্তা পরিবর্তন হলেও প্রতিবেদনে বড় পরিবর্তন আসেনি বলে জানা গেছে।
যাদের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করা হয়েছে তারা হলেন, কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মজিবুর রহমান, কক্সবাজারের সাবেক ডিসি (বর্তমানে যুগ্ম-সচিব, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়) মো. কামাল হোসেন, সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) (বর্তমানে উপ-সচিব, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়) মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার, সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বর্তমানে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এএইচএম মাহফুজুর রহমান, সাবেক সহকারী কমিশনার ভ‚মি মোহাম্মদ নূর হোসেন, কক্সবাজার ভ‚মি অফিসের সাবেক কানুনগো বাচ্চু মনি চাকমা, সাবেক ইউনিয়ন ভ‚মি উপ-সহকারী কর্মকর্তা মিজবাহ উদ্দিন, কক্সবাজার সদরের সাবেক সহকারী কমিশনার রাশেদুল ইসলাম, সাবেক সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) ও বর্তমানে সিনিয়র সহকারী সচিব (সাময়িক বরখাস্ত) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নাজিম উদ্দিন, উপজেলা ভ‚মি অফিসের কানুনগো বসন্ত কুমার চাকমা, ইউনিয়ন সহকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহেদ ও আবুল হোছাইন, ইউনিয়ন ভ‚মি উপ-সহকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সৈয়দ নূর, উপজেলা ভ‚মি অফিসের রেকর্ড কিপার জসীম উদ্দিন, সার্ভেয়ার মো. জাহাঙ্গীর আলম সহ ৩৭ জনকে আসামি করার সুপারিশ করেছেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপ-পরিচালক আলী আকবর।

প্রতিবেদনে বলা হয়; ২০১৫ সালে কক্সবাজার পৌরসভার তৎকালীন মেয়র সরওয়ার কামাল জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের আওতায় কক্সবাজার পানি শোধনাগার প্রকল্পের জন্য বাঁকখালী নদীর উত্তরপাড়ে প্রায় ১ কোটি ২৩ লাখ টাকা মূল্যের জমি বাছাই করেন। তার দায়িত্ব শেষ হওয়ার পর নতুন মেয়রের দায়িত্ব পান মুজিবুর রহমান। প্রকল্প নির্মাণে আগের বাছাই করা জমি বাদ দিয়ে বাঁকখালী নদীর দক্ষিণপাড়ে ৩৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা মূল্যের জমি বাছাই করেন। নতুন করে বাছাই করা জমির মধ্যে বেশির ভাগ জমি ছিল সরকারি রিসিভারে থাকা জমি। মেয়র কৌশলে জমি অধিগ্রহণের আগে রিসিভারকৃত জমির ১ দশমিক ৭২ একর তার স্ত্রী ও শ্যালকের নামে ব্যক্তিগত জমিতে রূপান্তর করেন। সরকারি রিসিভারকৃত জমি ব্যক্তির জমিতে রূপান্তর করতে মেয়রকে সহায়তা করেন কক্সবাজারের সদরের সাবেক সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) শাহরিয়ার মোক্তারসহ আরও দুজন সহকারী কমিশনারসহ (ভ‚মি) জেলার বিভিন্ন পদের কর্মকর্তারা।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে; ২০১৫ সালের ১৮ মে কক্সবাজার জেলার এলএ মামলার প্রস্তাবিত বাঁকখালী নদীর উত্তরপাড়ের জমি গ্রহণ না করে সরকারি অর্থের অপচয়, কারচুপি ও আত্মসাতের উদ্দেশ্যে বাঁকখালী নদীর দক্ষিণপাড়ে ৩০ গুণ বেশি মূল্যের জমিতে প্রকল্প নির্মাণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এরপর ৩০ সেপ্টেম্বর বৈঠক ডেকে ভ‚মি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পের জন্য বাছাই করা জমির ২ দশমিক ১৯ একরের মধ্যে ১ দশমিক ৭২ একর জমি মেয়র মুজিবুর রহমান পূর্বপরিকল্পিতভাবে আদালতের রিসিভারি থাকা জমি মেয়রের স্ত্রী ফারহানা আক্তার ও স্ত্রীর বড় ভাই মিজানুর রহমানের নামে দখল দেখিয়ে নামজারির মাধ্যমে ব্যক্তিগত জমিতে রূপান্তর করেন। একইসঙ্গে নামজারি ও জমাভাগের মামলার মূল নথি গায়েব করেন। এছাড়া ২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবরের দায়ের করা রিট পিটিশনের আদেশকে মিসগাইড করে সহকারী কৌশলী মোহাম্মদ ইসহাকের সহায়তায় মিজানুর রহমানকে ২০২০ সালের ৯ জুলাই জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ বাবদ ৭ কোটি ১৬ লাখ ৮৯ হাজার ৭৯৪ অবৈধভাবে প্রদান করা হয়।

অন্যদিকে বিমানবন্দর স¤প্রসারণ প্রকল্পের ক্ষতিগ্রস্ত জসিম উদ্দিন গং ক্ষতিপূরণ বাবদ ২ কোটি ২২ লাখ চার হাজার ১৮৭ টাকা পান, সেই টাকা থেকে কমিশন বাবদ এক কোটি ৪৮ লাখ টাকা সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে নিয়েছেন মেয়র মুজিবুর। এ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকার চেক দেন স্ত্রীর ভাই মিজানুর রহমানকে। দুদকের অনুসন্ধানে দালিলিক ও সাক্ষ্য প্রমাণ দ্বারা তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে ৩৭ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়েরের সুপারিশ করা হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন