বর্তমান সরকারের সর্বাধিক বয়ান হচ্ছে, জিডিপি, মাথাপিছু আয়, প্রবৃদ্ধি, রিজার্ভ ব্যাপক বেড়েছে। অমুক ক্ষেত্রে, তমুক ক্ষেত্রে দেশ বিশ্ব মডেল হয়েছে। দেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ম্ভর হয়েছে। দেশ ডিজিটাল কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে ইত্যাদি।এসবের মধ্যে জিডিপি, মাথাপিছু গড় আয়, প্রবৃদ্ধি, রিজার্ভ ব্যাপক বেড়েছে কথাটি কিছুটা সঠিক। বিবিএস’র মতে, ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে দেশের জিডিপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর মাথাপিছু গড় আয় হয়েছে ২,৮২৪ মার্কিন ডলার। এক্ষেত্রে প্রথম কথা হচ্ছে, বিবিএস’র তথ্য কেউ বিশ্বাস করে না। দ্বিতীয়ত: জিডিপি নির্ণয়ের ক্ষেত্রে কিছু কারসাজি আছে। যেমন: বিবিএস ২০০৫-০৬ অর্থবছরকে ভিত্তি ধরে ও ১৪টি খাতকে যুক্ত করে ২০১৩ সালে থেকে জিডিপির হিসাব করে আসছে। কিন্তু ২০২১ সালে তা পরিবর্তন করে ২০১৫-১৬ অর্থবছরকে ভিত্তি ও ২৫টি খাতকে যুক্ত করে হিসাব করছে। এছাড়া, দেশ-বিদেশের বিপুল ঋণের কর্মও জিডিপিতে যুক্ত হয়েছে। তাই জিডিপির আকার বেড়েছে অনেক। আর সেটাকে ১৬ কোটি মানুষ ধরে ভাগ করে মাথাপিছু গড় আয় নির্ণয় করেছে। কিন্তু প্রকৃত লোক সংখ্যা ১৮ কোটির কম নয়। তাই লোকসংখ্যা সঠিকভাবে নির্ণয় ও তা দিয়ে জিডিপিকে ভাগ করলেই মাথাপিছু গড় আয় অনেক কমে যাবে। দ্বিতীয়ত: উক্ত মাথাপিছু গড় আয় নির্ণয় করার সময় ১ মার্কিন ডলার সমান ৮৫ টাকা ছিল এবং সে মতে হিসাব করা হয়েছে। কিন্তু এখন ১ মার্কিন ডলার সমান ১০৮ টাকা হয়েছে। ফলে মাথাপিছু গড় আয়ের পরিমাণ কমে প্রায় ৫৮৮ ডলার হয়েছে বলে সম্প্রতি খবরে প্রকাশ। তৃতীয়ত: দেশে আয়বৈষম্য বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। যেমন: সরকারি এক প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ কর্মকর্তার মাসিক সম্মানী ৬.৫ লাখ টাকা।আর একজন চা শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা। এই দুই জনের মোট আয় যোগ করে দুই দিয়ে ভাগ করে মাথাপিছু গড় আয় নির্ণয় করা হলে চা শ্রমিকের মাসিক গড় আয় কত হয়? আর তার প্রকৃত আয় কত? নিশ্চয় আকাশ-পাতাল ফারাক! এই হচ্ছে- মাথাপিছু গড় আয় নির্ণয়ের পদ্ধতি। প্রকৃতপক্ষে অধিকাংশ মানুষের আয় বর্ণিত গড় আয়ের অনেক নীচে, আর নগণ্য সংখ্যক মানুষের আয় বর্ণিত গড় আয়ের চেয়ে হাজার গুণ বেশি!
গত বছরের আগস্টে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অধিক হয়েছিল। তা নিয়ে অনেক ঢাক-ঢোলও পেটানো হয়েছিল। রিজার্ভ থেকে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ পর্যন্ত দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৭ বিলিয়ন ডলারের নীচে। তন্মধ্যে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভের পরিমাণ আরও কম! কারণ, দেয় ঋণ মেয়াদী। তাই প্রত্যাহার করা যাবে না। আর শ্রীলংকাকে দেয় ঋণ দেশটির বর্তমান অবস্থায় পাওয়াই যাবে না। উল্লেখ্য যে, বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহারে ব্যাপক কৃচ্ছ্রতা সাধন করার পরও রিজার্ভ এখন আশংকাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। তাই সরকার দাতাদের কাছ থেকে ৮-৯ বিলিয়ন ডলার ঋণ নেয়ার চেষ্টা করছে। তাতে দাতারাও সাড়া দিচ্ছে। কারণ, দেশ কখনো বিদেশি ঋণের কিস্তি ও সুদ পরিশোধে খেলাপি হয়নি।
তবে, দেশ ঋণের ফাঁদে পড়েছে বলে অনেকেই বলেছেন। তবে সরকার তা নাকচ করেছে। এর কোনটি সঠিক তা বলা কঠিন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, চলতি বছরের মার্চ শেষে দেশের মোট বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল সরকারি খাতের ৯৩.২৩ বিলিয়ন ডলার ও বেসরকারি খাতের ২৪.৯৮ বিলিয়ন ডলারের অধিক। সব মিলে ১১৮.২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এছাড়া, অভ্যন্তরীণ বিপুল পরিমাণের ঋণও রয়েছে সরকারি ও বেসরকারি খাতের। যার মোট পরিমাণ বিদেশি মোট ঋণের চেয়ে অনেক বেশি। সর্বোপরি মার্চের পর আরো প্রায় ৬ মাস হয়েছে। এর মধ্যে দেশ-বিদেশের গৃহীত ঋণ আরো বেড়েছে। সব মিলে দেশের ঋণের পরিমাণ এখন জিডিপির প্রায় অর্ধেক হয়েছে। কিন্তু আইএমএফ ‘টেকসই ঋণ কাঠামোর মানদণ্ড অনুযায়ী, জিডিপির ৫৫% ঋণকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এদিকে, সব ঋণেরই কিস্তি ও সুদ পরিশোধ করতে হয় নির্দিষ্ট সময়ে। নতুবা খেলাপি হয়। তাই চলতি অর্থবছরের বাজেটে ১০২ কোটি ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কিন্তু আগামী ও পরবর্তী অর্থবছর থেকে মেগা প্রকল্পগুলোর ঋণেরও কিস্তি ও সুদ দেওয়া শুরু হবে। যার পরিমাণ দাঁড়াবে বিশাল। অর্থনীতিবিদ আহসান মনসুর সম্প্রতি বলেছেন, ‘ব্যালান্স অব পেমেন্টের দিক বিবেচনায় সরকারের ও বেসরকারি খাতের দেশি-বিদেশি সব ঋণই পরিশোধের দায়বদ্ধতা শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্র ও সরকারের। এ কারণে আগামীতে প্রতি বছর ১০-১২ বিলিয়ন ডলার পরিশোধের চাপ দেশের ঘাড়ে পড়বে’, যা সমগ্র দেশবাসীকেই দিতে হবে। এর পরিমাণ হতে পারে বর্তমানের চেয়ে অনেক বেশি। বর্তমানে মাথাপিছু গড় ঋণের পরিমাণ প্রায় এক লাখ টাকা।
তবুও গত ১৮ সেপ্টেম্বর ইআরডির সেমিনারে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেছেন, ‘বৈদেশিক ঋণে সুদ ০.৭৫% থেকে ১.৫%।এছাড়া, পরিশোধ করার সময়টাও অনেক বড়। অনেক ঋণ আবার ৩১ বছরে পরিশোধ করতে হয়। আর দেশীয় ঋণ যদি ব্যাংক থেকে নেয়া হয়, তাহলে ৭.৫% পর্যন্ত সুদ দেয়া লাগে। তাই বিদেশি ঋণ যদি কম সুদে পাওয়া যায়, তাহলে তা নেয়া উচিত। এখনো ৪৮ বিলিয়ন ডলার পাইপ লাইনে আছে। তন্মধ্যে ১০ বিলিয়ন ডলার পাওয়া গেছে। যেহেতু সস্তায় ও দীর্ঘমেয়াদী বিদেশি ঋণ পাওয়া যাচ্ছে, এজন্য এ ঋণই নিতে হবে’। সভায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আমাদের যে বহিঃসম্পদ বিভাগ আছে তারা চুরি করার জন্য বিদেশ থেকে ঋণ নিয়ে আসে’। যা’হোক, সরকারের বিপুল ঋণ গ্রহণের প্রধান কারণ হচ্ছে, কর জিডিপির হার ১০.৩%। যা এই অঞ্চলের মধ্যে নিম্ন। তাই এটা ১৫%-এ উন্নীত করার জন্য আইএমএফ তাগাদা দিয়েছে। কিন্তু এটা সহজে হবে না। আর যতদিন না হবে ততদিন উন্নয়ন কর্মের জন্য বিপুল বিদেশি ঋণ নিতেই হবে। এছাড়া, বর্তমানে রিজার্ভ অনেক কমে গেছে, যা বাড়ানোর জন্যও বিদেশি ঋণ নেওয়া আবশ্যক। অন্যদিকে, বর্তমানে ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ লাখ কোটি টাকার অধিক বলে ড.মইনুল ইসলাম সম্প্রতি বলেছেন। কিন্তু দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা ছাড়া এর বেশিরভাগ আদায় হবে না। কারণ, এসব ফলস পেপারে ও সরকারি লোকদের তদবিরে হয়েছে। সব খেলাপি ঋণ আদায় না হলে ব্যাংকগুলোর চলতি সংকট চলতেই থাকবে। অন্যদিকে, বছরে পৌনের এক লাখ কোটি টাকার মতো করে অর্থ পাচার হচ্ছে দীর্ঘদিন থেকে, যার মোট পরিমাণ এ পর্যন্ত ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অধিক হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। তবুও এই বিশাল অর্থ ফেরত আনার জোরালো উদ্যোগ নেই। কর ফাঁকি ও অর্থ পাচার রোধে দেশে-বিদেশে সকল প্রকার লেনদেনের স্বয়ংক্রিয় তথ্য আদান-প্রদান সহায়ক ‘কমন রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড’ অবিলম্বে অবলম্বন করার জন্য টিআইবি গত ৯ আগস্ট সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছে, এ পর্যন্ত বিশ্বের ১২০টির বেশি দেশ এটা চালু করে ব্যাপক সুফল পেয়েছে। তবুও এটা দেশে চালু করা হবে কি-না তা বলা কঠিন। তেমনি ব্যবসায়ীদের ভ্যাট ফাকি বন্ধ করার জন্য ইএফডি চালু করা হয়েছে অনেক দিন আগে। কিন্তু এ পর্যন্ত তার বাস্তবায়ন আশানুরূপ নয়। কারণ, বর্তমান সরকার খুবই ব্যবসায়ীবান্ধব। গত অর্থবছরে দেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বর্তমানেও অব্যাহত আছে ও বাড়ছে। জ্বালানি সংকটের কারণে দেশের উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ইউএসডিএ গত ১৫ সেপ্টেম্বর জানিয়েছে, ২০২২-২৩ বাণিজ্য বছরে বাংলাদেশে চাল ও গমের আমদানি হতে পারে প্রায় ৯০ লাখ টন। রেমিটেন্স, রফতানি ও বিনিয়োগেও ভাটা পড়েছে! পর্যটন আয় ও বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ব্যবহার নগন্য। ইন্টারনেটের গতি উগান্ডার চেয়েও কম! শিক্ষা পদ্ধতি সেকেলে ও মান খারাপ। বেকারত্ব, দক্ষতা ঘাটতি ও আবাসন সংকট ব্যাপক। স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ও পরিবহন খাত অপর্যাপ্ত ও ভঙ্গুর। গণতন্ত্র, সুশাসন, ন্যায়বিচার ও আইন শৃংখলা পরিস্থিতি চরম খারাপ।
অপরদিকে, ব্যক্তিগত ঋণেরও অন্ত নেই। করোনা মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধজনিত কর্ম হারানো ও পণ্য মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে দেশে দারিদ্রের হার দ্বিগুণ হয়ে ৪২% হয়েছে এবং মধ্যবিত্তদের বিরাট অংশ নিম্নবিত্তে পরিণত হয়েছে। সব মিলে অর্ধেকের বেশি মানুষ এখন সম্পদ বিক্রি ও দেনা করে অতি কষ্টে চলছে! বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক তথ্য মতে, বাংলাদেশের ৭৩% মানুষের প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাদ্য ক্রয়ের সামর্থ্য নেই। অন্যদিকে, দেশে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, গত জুন পর্যন্ত ব্যাংকগুলোতে এক কোটি টাকার বেশি আমানতকারীর সংখ্যা ১,০৮,৪৫৭টি (১৯৭২ সালে ৫টি, ১৯৭৫ সালে ৪৭টি, ১৯৮০ সালে ৯৮টি, ১৯৯০ সালে ৯৪৩টি, ১৯৯৬ সালে ২,৫৯৪টি, ২০০১ সালে ৫,১৬২টি, ২০০৬ সালে ৮,৮৮৭টি, ২০০৮ সালে ১৯,১৬৩টি, ২০২০ সালে ৯৩,৮৯০টি ও ২০২১ সালে ১,০১,৯৭৬টি ছিল-বিবিএস)। এর বাইরে আরো বহু কোটিপতির বিপুল স্থায়ী সম্পদ রয়েছে দেশ-বিদেশে। বিলাসী জীবন যাপন তো রয়েছেই। অথচ, দেশের আর্থ সামাজিক পরিস্থিতি অনুযায়ী বৈধ পথে এতো কোটিপতি হওয়া সম্ভব নয়।
যা’হোক, দেশের উন্নতির জন্য ঋণ নিতে কারো আপত্তি নেই। কিন্তু সেটা যে কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে, তার অনেকগুলোর প্রয়োজনীয়তা আছে কি-না সেটাই প্রশ্ন। যেমন: দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিরুদ্ধে। বেশিরভাগ ভোটার ও নির্বাচনী কর্মকর্তাও ইভিএম ব্যবহারে অপারগ। তবুও ইসি প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকায় ইভিএম ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাও দেশের চরম আর্থিক সংকটকালে। তাই এটাকে গরীবের ঘোড়া রোগ বলে অভিহিত করেছে অনেকেই। এরূপ ঘটনা বহু রয়েছে। বহু ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে, যাদের সংযোগ সড়ক নেই। ফলে ব্রিজ অব্যবহৃত রয়েছে। তবুও তা করা হয়েছে জেনে-শুনেই। কারণ, সরকারি অর্থ ব্যয় করতে পারলেই ব্যাপক দুর্নীতি করা যায়। তদ্রুপ বিদ্যুতের সরবরাহ ব্যবস্থা বৃদ্ধি না করেই উৎপাদন সক্ষমতা চাহিদার দ্বিগুণ করা হয়েছে। ফলে একদিকে চাহিদা মাফিক বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে না, অন্যদিকে, বহু প্লান্ট বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে চুক্তি মোতাবেক, যার পরিমাণ এ পর্যন্ত ৯০ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। আবার ঋণের সুদ ও কিস্তিও দিতে হচ্ছে। যেমন: পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র। রামপাল ও রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রেরও অবস্থা একই হবে। অপরদিকে, সরকারি কাজের বেশিরভাগই নির্ধারিত সময়ে, ব্যয়ে ও মানে হচ্ছে না। এতে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে অনেক। ঋণের টাকার কাজের ক্ষেত্রেও তথৈবচ। তাই এ নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন উঠেছে। এরূপ ঘটনা মেগা প্রকল্পের ক্ষেত্রেও ঘটছে। অনেকগুলোর প্রয়োজনীয়তা ও রিটার্ন নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে বিস্তর। ড. দেবপ্রিয় গত ২১ জুলাই বলেন, ২০১৪-২০১৮ সালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। তন্মধ্যে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১১টি প্রকল্পের বাস্তবায়নের হার ১০ শতাংশের কাছাকাছি। ২০১৮ সালের পর নেয়া প্রকল্প বাস্তবায়নের হার ১০ শতাংশের নিচে। সাম্প্রতিক খবরে প্রকাশ, পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, পদ্মাসেতুতে রেলসংযোগ, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেলসহ ১২টি বৃহৎ প্রকল্পে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। শেষ পর্যন্ত এসব প্রকল্পের চূড়ান্ত ব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকা। প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে। একে অপচয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। আর বিরোধী দলের নেতারা প্রায়ই বলেন, মেগা দুর্নীতির জন্যই মেগা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি এপির এক রিপোর্টে প্রকাশ, বাংলাদেশের পরিস্থিতি শ্রীলংকার মতো না হলেও একই রকম সমস্যার মুখে পড়েছে। উচ্চাভিলাষী উন্নয়ন প্রকল্পে অতিরিক্ত খরচ, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি নিয়ে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। বাণিজ্যিক ভারসাম্য দুর্বল হয়েছে। এসব প্রবণতা দেশের অগ্রগতিকে ব্যাহত করছে। টিআই’র ‘দুর্নীতির ধারণা সূচক ২০২১’ মতে, ১৮০ দেশের মধ্য বাংলাদেশ ১৩তম, স্কোর ২৬। গত ৪ বছরও স্কোর একই ছিল। এই অবস্থায় জনমনে প্রশ্ন, উন্নতি, দুর্নীতি, ঋণ- কোনটি বেশি?
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
sardarsiraj1955gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন