দুর্নীতি বেড়েছে বাংলাদেশে। সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে ১২তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের স্কোর ১ পয়েন্ট কমে ২৬ থেকে ২৫ হয়েছে। দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে এক ধাপ অবনমন হয়েছে। এ তথ্য প্রকাশ করেছে বার্লিনভিত্তিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই)। যদিও তালিকায় ওপরের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। অর্থাৎ গত বছরের মতো ১৪৭তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এবার ২৫ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে একই অবস্থানে রয়েছে ইরান ও গিনি।
গতকাল মঙ্গলবার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ঢাকার ধানমন্ডিস্থ মাইডাস সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে একযোগে প্রকাশ করে এ তথ্য। সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ড.ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সিপিআই (দুর্নীতির ধারণা সূচক) অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান হতাশাজনক। এ বছর সূচকে নিচের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ১২ এবং ওপরের দিক থেকে ১৪৭। এবার বাংলাদেশ ১০০ স্কোরের মধ্যে ২৫ অর্জন করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার ৮টি দেশের মধ্যে এবারও বাংলাদেশের অবস্থান ও স্কোর দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। এবার আফগানিস্তানেরও স্কোর ১৬ থেকে বেড়ে ২৪ হয়েছে। অথচ বাংলাদেশের স্কোর ঘুরেফিরে ২৫ থেকে ২৮ এর মধ্যে রয়েছে। এর আগে দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই)-২০২১ অনুসারে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২৬।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২২ সালে এ সূচকে অন্তর্ভুক্ত মোট দেশের সংখ্যা ১৮০টি। সিপিআই ২০২১ অনুযায়ী বৈশিক গড় স্কোর ৪৩ হলেও, বাংলাদেশের স্কোর এ বছর ১ পয়েন্ট কমে ১০০ এর মধ্যে মাত্র ২৫ হয়েছে। বাংলাদেশের এবারের স্কোর ২০১৪ ও ২০১৫ সালের অনুরূপ। অবস্থান ২০১০ ও ২০২০ সালের অনুরূপ। অর্থাৎ দুর্নীতি প্রতিরোধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রায় একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার ৮টি দেশের মধ্যে এবারও বাংলাদেশের অবস্থান ও স্কোর যথারীতি বিব্রতকরভাবে আফগানিস্তানের পর দ্বিতীয় সর্বনিম্ন।
সূচক বিশ্লেষণে দেখা যায়, সর্বশেষ এগার বছরে বাংলাদেশের স্কোর ঘুরেফিরে ২৫ থেকে ২৮ এর মধ্যেই রয়েছে। এই সময়কালে সূচকে বাংলাদেশের নিম্ন স্কোর ও অবস্থান সার্বিক কোনো অগ্রগতি নির্দেশ করে না। একই সঙ্গে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণেও অস্বস্তিকর স্থবিরতার প্রমাণ দেয়।
সিপিআই অনুযায়ী, বাংলাদেশ তথা অন্য কোনো দেশকেই দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ বলা যাবে না। বরং সূচকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে তুলনামূলকভাবে দুর্নীতির মাত্রা অধিক বা কম বলা যাবে। কারণ এ সূচক সংশ্লিষ্ট দেশে বিদ্যমান দুর্নীতির ধারণার ওপর ভিত্তি করে তুলনামূলক অবস্থান নির্ণীত হয় কোনো দেশ বা জাতিকে দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে চিহ্নিত করে না।
১৯৯৫ সাল থেকে বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল দ্বারা প্রতি বছর এই সূচক প্রকাশ করা হয়। ২০০১ সালে বাংলাদেশ প্রথম তালিকাভুক্ত হয়। তখন এ তালিকায় ছিলো মাত্র ৯১টি দেশ।
কম দুর্নীতির দেশ ডেনমার্ক- বেশি সোমালিয়া : বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হচ্ছে ডেনমার্ক। দেশটি কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় যৌথভাবে শীর্ষে রয়েছে। দুর্নীতির ধারণা সূচকের ১০০ স্কোরের মধ্যে দেশটি পেয়েছে ৯০ করে।
এর পরের অবস্থান ফিনল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের। সিপিআই ১০০ স্কোরের মধ্যে এই দু’টি দেশ পেয়েছে ৮৭ করে। চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে নরওয়ে। এ দেশ স্কোর পেয়েছে ১০০ থেকে ৮৪। ২০২২ সালের পরিস্থিতি বিবেচনায় টিআই) প্রকাশ করে এই ধারণা সূচক। টিআইবির প্রতিবেদন অনুযায়ী কম দুর্নীতিগ্রস্ত শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে ৮৩ স্কোর নিয়ে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে সুইডেন ও সিঙ্গাপুর এবং ৮২ স্কোর নিয়ে সুইজারল্যান্ড ৭ম অবস্থানে রয়েছে। এছাড়া নেদারল্যান্ডস, জার্মানি এবং আয়ারল্যান্ড ও লুক্সেমবার্গ যথাক্রমে ৮০, ৭৯ ও ৭৭ পয়েন্ট নিয়ে ৮ম, ৯ম ও ১০ম স্থানে অবস্থান করছে। সবচেয়ে বেধি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হচ্ছে সোমালিয়া। দেশটি ১০০ থেকে স্কোর পেয়েছে মাত্র ১২। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সুদান ও সিরিয়া। এছাড়া এশিয়ায় বাংলাদেশের চেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে রয়েছে আফগানিস্তান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন