সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

পুত্রের প্রতি মহাত্মা লোকমান

মুনশী আবদুল মান্নান | প্রকাশের সময় : ২০ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:১৪ এএম

মহাত্মা লোকমান প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি ছিলেন। ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বেহের মতে, তিনি হযরত আইয়ুব আ. এর ভাগ্নে ছিলেন। তিনি দীর্ঘায়ূ লাভ করেছিলেন। তিনি হযরত দাউদ আ. এর পূর্ববর্তী ছিলেন এবং জীবিত ছিলেন তার সময় পর্যন্ত। কথিত আছে, মহাত্মা লোকমান লোকদের উপদেশ দিতেন এবং তৎকালীন শরীয়তী বিষয়ে ফতোয়া প্রদান করতেন। হযরত দাউদ আ. এর নবুওয়ত প্রাপ্তির পর তিনি ফতোয়া প্রদান বন্ধ করে দেন। বলেন, এখন আর এর প্রয়োজন নেই। কোনো কোনো বর্ণনায় আছে, তিনি ইসরাইল গোত্রের বিচারপতি ছিলেন। তার জ্ঞানগর্ভ বাণী ও উপদেশসমূহ লিপিবদ্ধ আছে। ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বেহ বলেছেন, তিনি তার ১০ হাজারের বেশি অধ্যায় পড়েছেন।

মহাত্মা লোকমান সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক বলেছেন: আমি লোকমানকে প্রজ্ঞা দান করেছিলাম (আর বলেছিলাম), তুমি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে তো তা নিজের জন্যই করে। (সূরা লোকমান : আয়াত ১২)। মহাত্মা লোকমান তার পুত্রকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপদেশ দান করেন, যা পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক উল্লেখ করেছেন। উপদেশগুলো সার্বজনীন। সে কালের জন্য যেমন, তেমনি একালের জন্যও প্রযোজ্য ও অনুকরণীয়। উপদেশগুলো হলো:
এক. হে বৎস! আল্লাহর কোনো শরীক করো না। নিশ্চয় আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা তো চরম অন্যায়। (সূরা লোকমান : আয়াত ১৩)।

দুই. হে বৎস, কোনো বস্তু যদি সরিষার দানা পরিমানও হয়, অতঃপর তা যদি থাকে প্রস্তর গর্ভে, অথবা আকাশে অথবা ভূগর্ভে, তবে আল্লাহ তাও উপস্থিত করবেন। নিশ্চয়, আল্লাহ গোপন ভেদ জানেন ও সব কিছুর খবর রাখেন। (সূরা লোকমান : আয়াত ১৬)।
তিন. হে বৎস, যথারীতি নামায পড়, সৎকাজের নির্দেশ দাও, অসৎকাজে বাধা দান করো এবং আপদে-বিপদে ধৈর্য ধারণ করো। নিশ্চয়ই এটি দৃঢ় সংকল্পের কাজ। (সূরা লোকমান : আয়াত ১৭)।

চার. অহঙ্কারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করোনা এবং পৃথিবীতে উদ্ধতভাবে বিচরণ করো না। কারণ, আল্লাহ কোনো উদ্ধত, অহংকারীকে ভালবাসেন না। (সূরা লোকমান : আয়াত ১৮)। মহাত্মা লোকমান তার পুত্রকে উপদেশচ্ছলে যা বলেছেন, কেউ তা অনুসরণ করলে তার ইহ ও পরকালীন জীবন সন্দেহাতীতভাবেই সফল ও কল্যাণময় হয়ে উঠতে পারে।

কে না জানে, আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা সবচেয়ে বড় গোনাহ। ওই গোনাহর কখনো মাফ নেই। শরীককারীদের হবে অনন্তকাল দোযখবাস। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আল্লাহপাক পরবর্তী দুই আয়াতে (১৪-১৫) পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন। সন্তানের জীবনে পিতা-মাতার ভূমিকা ও অবদানের কথা স্মরণ করিয়ে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন। পিতা-মাতা যদি কোনো কিছুর সঙ্গে আল্লাহকে শরীক করার জন্য পীড়াপীড়ি করে তবে তা না শোনার কথা বলেছেন আল্লাহপাক। আল্লাহর কোনো শরীক নেই। ইসলামের মূলমন্ত্র হলো, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম¥াদুর রাসূলুল্লাহ’। আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, মুহাম্মাদ সা. তার রাসূল।

মহাত্মা লোকমানের দ্বিতীয় উপদেশ আকাইদ সম্পর্কিত। প্রত্যেকটি মানুষের এই বিশ্বাস থাকতে হবে যে, আকাশ ও পৃথিবী এবং এর মাঝখানে যা কিছু আছে (ক্ষুদ্র বা বৃহৎ) সবকিছুই আল্লাহপাকের অসীম জ্ঞানের আওতাধীন এবং সব কিছুর ওপরই তার ক্ষমতা ও অধিকার বিদ্যমান। মোটকথা, আল্লাহপাকই যে বিশ্ব ও জগৎসমূহের স্রষ্টা এবং সবকিছুই তার নিয়ন্ত্রণে, এটা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করা ও তার ইবাদতে নিমগ্ন হওয়া মানুষের অপরিহার্য কর্তব্য।

মহাত্মা লোকমানের তৃতীয় উপদেশে তিনটি নির্দেশনা আছে। প্রথমত, নামাজ কায়েম করতে বলা হয়েছে। নামাজ শ্রেষ্ঠতম ইবাদত হিসাবে গণ্য। দ্বিতীয়ত, পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন স্থানে সৎকর্ম করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। শুধু সৎকর্ম নয়, অসৎকর্ম প্রতিরোধ করার ওপরও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সৎকর্মময় একটা সমাজ বা দেশ প্রতিষ্ঠা করতে হলে অসৎকর্মের উৎসাদনের বিকল্প নেই। তৃতীয়ত, সবর করা একটা মহৎ গুণ। এই গুণের অধিকারী সহজেই সফলকাম হতে পারে।

মহাত্মা লোকমানের চতুর্থ উপদেশ বাণীতে দু’টি প্রসঙ্গ এসেছে। প্রথমত, অহংকারবশত: মানুষকে অবহেলা না করতে এবং দ্বিতীয়ত, গর্বভরে পথ না চলতে বলা হয়েছে। মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত। আল্লাহপাকের প্রিয়তম সৃষ্টি। মানুষের প্রতি ওই নিরিখে সম্মান ও শ্রদ্ধাপোষণ করা সকলের কর্তব্য। আতরাফ বা নিচু মনে করে কারো প্রতি উপেক্ষা করা ঠিক নয়। তা মানবতার খেলাপ। নম্রভাবে হাঁটাচলা বা পদচারণা করা শিষ্টাচারের অংশ। পক্ষান্তরে গর্বভরে, উগ্র ও উদ্ধতভাবে পদচারণা করা সভ্যতা ও শালীনতার পরিপন্থী। পবিত্র হাদিস শরীফে আছে, দ্রুতগতিতে চলা মুমিনের সৌন্দর্য ও মর্যাদাহানিকর।

মহাত্মা লোকমানের পুত্রের উদ্দেশে দেয়া উপদেশ অনুসরণ ও মান্য করার তাওফিক আল্লাহপাক সকলকে দান করুন, এটাই কামনা করি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Jahid Hasan ২০ নভেম্বর, ২০১৯, ১:০৬ এএম says : 0
আল্লাহ্‌ তায়ালার সাথে কাউকে শরীক করা যাবেনা। মাতা পিতার সাথে সদ্ব্যবহার ও তাদের আনুগত্য করা ফরজ। তবে তারা যদি শিরক করতে বাধ্য করতে করতে চান, তবে সে কথা মানা হারাম হয়ে যাবে। তথাপি দুর্ব্যবহার না করে সাধ্যমত ভালো আচরণ করতে হবে।
Total Reply(0)
Naim Uddin ২০ নভেম্বর, ২০১৯, ১:০৬ এএম says : 0
মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুকণা আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিনের আওতাধীন। তিনি চাইলে কাছের দূরের যে কোন বিষয় আমাদের সামনে নিয়ে আসতে পারেন, যেমনটি তিনি বিচার দিবসে করবেন।
Total Reply(0)
নাবিল ২০ নভেম্বর, ২০১৯, ১:০৮ এএম says : 0
মহাত্মা লোকমানের পুত্রের উদ্দেশে দেয়া উপদেশ অনুসরণ ও মান্য করার তাওফিক আল্লাহপাক সকলকে দান করুন, আমিন
Total Reply(0)
মনিরুল ইসলাম ২০ নভেম্বর, ২০১৯, ১:০৮ এএম says : 0
কোন মানুষকে অবজ্ঞা করা যাবেনা, চলাফেরায় কথা বার্তায় অহঙ্কার প্রকাশ করা যাবেনা, সংযতভাবে কথা বলতে হবে।
Total Reply(0)
কামরুজ্জামান ২০ নভেম্বর, ২০১৯, ১:০৯ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদের আমল করার তউফিক দান করুক।
Total Reply(0)
তফসির আলম ২০ নভেম্বর, ২০১৯, ১:০৯ এএম says : 0
অমুল্য, অমুল্য! আমরাও পালন করবো, আমাদের বাচ্চাদেরও শেখাবো।
Total Reply(0)
ইমরান ২০ নভেম্বর, ২০১৯, ১:১০ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদের সকলকে অন্ধকারাচ্ছন্ন কবরের কঠিন্‌ আজাব আর হাশরের ময়দানের মহাবিপদময় মুহূর্তগুলোতে তার অপার করুণাধারা বর্ষণ করুন। এখনকার মত, যে অপার করুনার কারনে আমরা পৃথিবীতে এত অপরাধ করেও ভালভাবে বেচে আছি। আল্লাহ! আমাদের দুনিয়া ও আখেরাতে রক্ষা করুন, ' আমরা কেবল আপনারই প্রার্থণা করি আর শুধুমাত্র আপনার কাছেই সাহায্য চাই। আপনিই সর্বশ্রেষ্ঠ রক্ষাকারী।
Total Reply(0)
আল আমীন ২০ নভেম্বর, ২০১৯, ৬:৩৯ এএম says : 0
কুরআনের আয়াতগুলো প্রথম নিজের জন্য মাঝে আনি
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন