শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

চালের বাজার পর্যাপ্ত মজুদেও বাড়ছে দাম

নজরদারিতে ৪৬ অটোমিল মালিক হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা

এস এম আলী আহসান পান্না, কুষ্টিয়া : | প্রকাশের সময় : ২৭ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৭ এএম, ২৭ নভেম্বর, ২০১৯

দেশে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে কুষ্টিয়া জেলার ৪৬ অটো চালকল মালিক। প্রতি বছর এ সিন্ডিকেট নানা অজুহাতে দাম বাড়িয়ে দিয়ে লুটে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। দুর্বল মনিটরিং ব্যবস্থা আর নানা সুযোগে চালের বাজার অস্থির করে তুলছেন তারা। গত কয়েকদিনের ব্যবধানে কুষ্টিয়া মোকামে সব ধরনের চালে কেজিতে এক টাকা বেড়েছে। চাল সঙ্কট দেখিয়ে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন অনেক মিল মালিক। অথচ কুষ্টিয়া মোকামে গত এক সপ্তাহে ১০ হাজার টন চাল মজুদ আছে বলে তথ্য রয়েছে মিল মালিক ও জেলা প্রশাসনের কাছে। তারপরও দাম বাড়ানোর বিষয়টি পুরোপুরি অযৌক্তিক বলে জানান খুচরা ব্যবসায়ী ও ভোক্তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ধানের দাম বৃদ্ধি ও মোকামে চাল সঙ্কটের অজুহাতে নতুন করে গত কয়েকদিন ধরে অস্থিরতা বিরাজ করছে চালের বাজারে। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি প্রায় পাঁচ থেকে সাত টাকা পর্যন্ত। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। মিল মালিকরা বলছেন, চালের সরবরাহ কমে যাওয়ার সুযোগ নিচ্ছে কিছু সুবিধাবাদী চক্র। যার কারণে ধীরগতিতে চালের দাম বাড়ার পরিবর্তে বেড়েছে দ্রুতগতিতে। ইতোমধ্যে আমন মৌসুম শুরু হলেও সহসা চিকন চালের দাম কমবে না বলেও জানিয়েছেন তারা। নতুন ধান ওঠায় কোনো কোনো জাতের ধানের দাম কমেছে। এছাড়া গত এক সপ্তাহে পরিবহন ধর্মঘট থাকায় কুষ্টিয়া মোকাম থেকে চাল সরবরাহ নিম্ন পর্যায়ে চলে আসে। এই কারণে অটো ও হাসকিং চালকলগুলোতে প্রচুর চাল জমে যায়। যার পরিমাণ ১০ হাজার টনের বেশি। এ চাল শুক্রবার থেকে সরবরাহ শুরু হয়েছে দেশের বড় বড় আড়তে। কুষ্টিয়া পৌর বাজারের সবচেয়ে বড় খুচরা ও পাইকারি চালের ব্যবসায়ী শাপলা ট্রেডার্সের মালিক আশরাফুল ইসলাম বলেন, চালের বাজার কয়েকদিন ধরে স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু হঠাৎ নতুন করে মিল গেটে লোক এসে ফের এক টাকা করে দাম বাড়িয়েছে। বর্তমানে মিনিকেট ৫০ কেজির প্রতি বস্তা ২ হাজার ৩০০ টাকা, বাসমতি ২ হাজার ৫০০ টাকা, কাজললতা ১ হাজার ৮৫০ টাকা, আঠাশ ১ হাজার ৯৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

হাসকিং মিল (চাতাল) মালিকদের অভিযোগ, চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ অটোমিল মালিকদের হাতে। তারা দাম বাড়িয়ে দিলে বাজারে দাম বেড়ে যায়। নতুন ধান ওঠার এ সময় চালের দাম বাড়ার নজির সাধারণত নেই। লিয়াকত রাইস মিলের মালিক লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘হাসকিং মিল মালিকদের হাতে চালের ব্যবসা নেই। অটোমিল মালিকরা সব চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন।

জানা গেছে, রশিদ এক সময় বিএনপি করলেও এখন আওয়ামী লীগের লোক। এ কারণে তার মিলে মনিটরিং চালাতে ভয় পান প্রশাসনের লোকজন। রশিদ ছাড়াও আওয়ামী লীগের বেশ কয়েক নেতার কবজায় রয়েছে চালের বাজার। তারা ইচ্ছামতো চালের বাজার বাড়িয়ে দেন। এছাড়াও কুষ্টিয়ায় ফ্রেস এগ্রো ফুড লি: এর মালিক ওমর ফারুক, ব্যাপারী এগ্রো ফুডের মালিক তোফাজ্জেল, ব্যবসায়ী জিন্নাহ, আইলচারার স্বর্ণা অটো রাইচ মিল মালিক আব্দুস সামাদ, ভিআইপি রাইচ মিলের মালিক হাজী শফি বিশ্বাসের বিরুদ্ধে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ রয়েছে। তবে অভিযুক্তদের সাথে এবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তারা এ অভিযোগ অস্বীকার করেন।

বিভিন্ন সূত্র জানায়, মিল মালিকরা মিনিকেট ধানের মধ্যে বিনা সেভেন, ছাব্বিশ ধান, আটাশ ধান মিশানো হয়। কম দামের ধান মিশিয়ে মিনিকেট বলে চড়া দামে বিক্রি করা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন অটোমিল মালিক বলেন, সারাদেশে অটো মিল মালিকদের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। তারা যোগাযোগ করে দাম বাড়িয়ে দেন। গোয়েন্দা সংস্থার একটি সূত্র জানিয়েছে, জেলার ৪৬টি অটো মিলের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এরমধ্যে পাঁচ থেকে ১০ জন ব্যবসায়ী চালের বাজারে কারসাজি করেন। তাই ধান কেনা থেকে শুরু করে মিলে নিয়ে আসা ও চাল তৈরি পর্যন্ত খরচ ও বিক্রির বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন প্রধান বলেন, পরিবহন এক সপ্তাহ বন্ধ থাকায় চাল সরবরাহ বন্ধ ছিল। শুক্রবার থেকে ফের পরিবহন চলাচল শুরু হয়েছে। সদর উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, নতুন ধান কাটা চলছে। বাজারেও আসতে শুরু করেছে।

ধানের বাজার কিছুটা বাড়লেও সহনীয় রয়েছে। আর কৃষকের ঘরে পর্যাপ্ত ধান নেই এখন। ফড়িয়াদের মজুদ করা ধান বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন বলেন, ‘মিল মালিকদের ডেকে চালের দাম না বাড়াতে অনুরোধ করেছি। যৌক্তিক কোনো কারণ না থাকলেও তারা দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন।অটো মিল মালিকরা এ কাজটি করছেন।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন