শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দেশে দেশে মাহে রমজান

প্রকাশের সময় : ২৫ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইউরোপে দীর্ঘ রোজা : প্রথাভঙ্গের সুযোগ রয়েছে কি?
ইনকিলাব ডেস্ক : ইউরোপে এবার জুন মাস এবং রমজান মাস একসাথে পড়ে যাওয়ায় গত তেত্রিশ বছরের মধ্যে দীর্ঘতম রোজা চলছে। দেশভেদে ১৯ থেকে ২২ ঘণ্টা পর্যন্ত রোজা রাখছেন ইউরোপের মুসলমানরা। ব্রিটেনে এবার রোজার শুরুর দিনেই সাহারির শেষ সময় থেকে ইফতারের সময় ছিল ১৯ ঘণ্টা। ইউরোপের উত্তরের দেশগুলোতে, যেমনÑসুইডেন, ডেনমার্ক ও নরওয়েতে এই ব্যবধান আরো বেশি, ২০ থেকে ২১ ঘণ্টা। ইউরোপে মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা এখন কম-বেশি সাড়ে চার কোটি। এই সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু যেসব দেশ থেকে তারা এসেছেন, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে সেসব দেশের তুলনায় ইউরোপে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের মধ্যে ব্যবধান অর্থাৎ দিন-রাতের সময় অনেকটাই আলাদা। সে কারণে গরমের রোজা ১৯-২০-২১ ঘণ্টা। আবার শীতের রোজা ৬-৭-৮ ঘণ্টা, এমনকি নরওয়ের একদম উত্তরে এক ঘণ্টা বা তারও কম হতে পারে। ইউরোপে রোজার সময়কে সামঞ্জস্য করার কোনো রাস্তা আছে কিনা, এ নিয়ে ধর্মের ব্যাখ্যা কীÑএসব নিয়ে ইউরোপের মুসলিমদের কেউ কেউ বিচ্ছিন্নভাবে প্রশ্ন করেন।
কিন্তু বছর দুয়েক ধরে কথা বলার চেষ্টা করছেন ব্রিটেনের বিতর্কিত এক ব্যক্তি, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ড. উসামা হাসান। তার কথাÑভোর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত না খেয়ে থাকার প্রথা মানার প্রয়োজন ইউরোপে নেই। বরঞ্চ মক্কা-মদিনার মানুষ যত ঘণ্টা রোজা রাখেন, ইউরোপে সে মতই রোজা হতে পারে। তাতে ইসলামের বিধান ভঙ্গ হবে না, বরঞ্চ সেটাই ইসলামের বিধান।
পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত ড. উসামা হাসান কুইলিয়াম নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত। কুইলিয়াম ইউরোপের উদার ভাবধারার সাথে মুসলমানদের ব্যবধান কমানোর কথা বলে, ইসলামী বিধানের উদার ব্যাখ্যা করে। ফলে মুসলিমদের অধিকাংশই তাদের সন্দেহের চোখে দেখে।
গরমে দীর্ঘ রোজা এবং তা নিয়ে ড. ওসামা হাসানের কথিত ফতোয়া নিয়ে ইউরোপের সাধারণ মুসলমানরা এবং মুসলিম ধর্মীয় নেতারা মোটেই ভাবেন না।
রোজার দ্বিতীয় দিন। ইংল্যান্ডের পোর্টসমথ শহরের আবিদুর রহমান চৌধুরী, স্ত্রী স্বপ্না রহমান এবং স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া দুই ছেলে সাহারির ১৯ ঘণ্টা পর ইফতার করতে বসেছেন। রাত সোয়া নটা তখন।
স্বপ্না রহমান বলেন, গরমে দীর্ঘ রোজার কথা মাথায় রেখে তিনি বার্ষিক ছুটি এই রোজার মাসে নিয়ে রেখেছেন। বললেন, ১৯ ঘণ্টা রোজা কষ্টের, কিন্তু কোনো অভিযোগ নেই। ভোর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা রাখার প্রচলিত বিধানের বদলে মক্কা-মদিনার মানুষ যতক্ষণ রোজা রাখেন ততক্ষণ রোজা রাখার যে কথা ড উসামা হাসান বলছেনÑসে প্রসঙ্গ তুলতে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে স্বামীর দিকে তাকালেন স্বপ্না রহমান।
দ্রুত ভেবে নিয়ে আবিদুর চৌধুরী বললেন, ‘কুরআনের কোনো পরিবর্তন হয়নি। হবেও না, যত কষ্টটাই হোক না কেন কুরআনের নির্দেশ আমাদের মেনে চলতে হবে...যুগ যুগ ধরে এটা চলে আসছে, এখন আমরা যদি নতুন কিছু সৃষ্টি করি সেটা আল্লাহর ও রাসূলের বিপরীতে চলে যেতে পারে।’ কিন্তু ইসলামের উৎপত্তি যেখানে সেই সউদী আরবেই মানুষ যেখানে ১৩-১৪ ঘণ্টা রোজা রাখছে, ইউরোপের মুসলমানরা ১৯-২০ ঘণ্টা রোজা করছেÑএটাকে কীভাবে দেখেন তিনি? ‘শীতের রোজাতে আবার ইউরোপের মুসলমানরা অনেক কম সময় রোজা রাখে।’ ইউরোপের গরমে দীর্ঘ রোজা আবিদুর পরিবারের কাছে কোনো ইস্যুই নয়। ব্রিটেনের চেয়েও আরো বেশি সময় রোজা রাখতে হচ্ছে ডেনমার্কে। তার চেয়েও বেশি নরওয়েতে।
ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনের বাসিন্দা মুহাম্মদ ফয়সল জানালেন, দীর্ঘ সময়ের কথা মাথায় রেখে সেখানকার অনেক মুসলিম রমজান মাসে তাদের বাৎসরিক ছুটি নিয়ে নেন। নামাজের জন্য কোপেনহেগেনের অন্তত তিনটি মসজিদে যান জনাব ফয়সল। ভোর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা রাখার প্রচলিত বিধানের বিকল্প নিয়ে কেউ কথা বলেন না। ইমামরা খুতবায় বড়জোর পরামর্শ দিচ্ছেন দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার শারীরিক ঝুঁকি কীভাবে সামলানো যায় - সেসব নিয়ে।
ডেনমার্কের চেয়েও আরো বেশি সময় রোজা রাখতে হচ্ছে নরওয়েতে। বিশেষ করে নরওয়ের একবারে উত্তরের জনপদগুলোতে ২২/২৩ ঘণ্টা সূর্য থাকছে এখন। অসলোর বাসিন্দা আল মামুন জানালেন, ঐ সব শহরের মুসলমানদের অনেকেই ভোর থেকে সূর্যাস্তের পরিবর্তে অসলোর সময় অনুসরণ করে রোজা শুরু করছেন এবং ভাঙছেন। তিনি অসলো শহরে কিছু ফিলিস্তিনীকে চেনেন যারা তাদের দেশের সময় হিসেব করে রোজা রাখেন। তবে সিংহভাগ মুসলমান রীতি ভাঙ্গার কথা ভাবেনই না।
‘একটা সুবিধে হলো, এখানে গরমেও তাপমাত্রা পঁচিশ ডিগ্রির বেশি ওঠে না, অত কষ্ট হয়না’।
রোজা নিয়ে কুরআন-হাদীসের নির্দেশ আসলে কী?
পোর্টসমথ জামে মসজিদের ইমাম শেখ মহিউদ্দিন বললেন, রোজা নিয়ে ইসলামের বিধান স্পষ্ট। ‘সুবেহ সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা রাখতে হবে।’ ইউরোপের গরমে অস্বাভাবিক দীর্ঘ সময়ের জন্য রোজা, গরমে উত্তর মেরুর খুব কাছাকাছি অঞ্চলে প্রায় পুরোটা সময় দিনের আলো থাকাÑএই বাস্তবতার সাথে রোজাকে কীভাবে সামঞ্জস্য করবে সেখানকার মুসলমানরা?
শেখ মহিউদ্দিন বললেন, ‘এগুলোর সমাধান ইসলামে ইতিমধ্যেই করা হয়েছে। যেসব জায়গায় দিন ও রাতের মধ্যে পার্থক্য করা যাচ্ছে না, সেসব জায়গায় মুসলমানরা রোজা নামাজের জন্য কাছাকাছি কোনো শহরের সময় অনুসরণ করবেন। সউদী আরবের ফতোয়া বোর্ডের নির্দেশ সেটাই।’
মক্কা-মদীনার সময় অনুসরণের যে কথা ড ওসামা হাসান বলছেন, পোর্টসমথ মসজিদের ইমাম তা একবারেই উড়িয়ে দিলেন। ‘হাজার হাজার মাইল দূরের কোনো শহরের বা দেশের সময় অনুসরণের কোনো সুযোগ নেই, মক্কার সময়ও না।’
ধর্ম পালনে অতিরিক্ত কষ্ট ইসলাম কি সমর্থন করে? এই প্রশ্নে শেখ মহিউদ্দিন বললেন, এই প্রশ্নেরও সমাধান ইসলাম দিয়েছে। অসুস্থতা বা শারীরিকভাবে অপারগ হলে, রোজা পরে সুবিধামত সময়ে করার অনুমোদন রয়েছে। ‘এ নিয়ে আমরা ভাবিই না।’
অপেক্ষাকৃত উদারপন্থী একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি রয়েছে লন্ডনে বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকার ব্রিক লেন মসজিদের। মসজিদ কমিটির চেয়ারম্যান সাজ্জাদ মিয়াসহ আরো কয়েকজনের কাছে প্রসঙ্গটি তুললে, তাদের বক্তব্য ছিলÑরোজা রাখার সময় নিয়ে তারা কখনও ভাবেননি, ভাবতেও চান না। সূত্র : বিবিসি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন