নেপাল সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসে ২৫ ডিসিপ্লিনে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ নিজেদের সেরা সাফল্য তুলে এনেছে। যেখানে সোনার হাসিতে পুরুষের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন মেয়েরাই। সদ্য সামপ্ত এসএ গেমসের ১৩তম আসরে বাংলাদেশ স্বর্ণ ও মোট পদক জয়ের সংখ্যায় অন্য যে কোন আসরকে ছাড়িয়ে গেছে। নেপালে লাল-সবুজের ক্রীড়াবিদরা ১৯ স্বর্ণ, ৩৩ রৌপ্য ও ৯০টি ব্রোঞ্জসহ ১৪২টি পদক জিতে গেমসে নিজেদের ইতিহাসে রেকর্ডসংখ্যক সোনা এবং পদক জেতার কৃতিত্ব দেখান। যদিও সাত দলের এ আসরে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। তারপরও এসএ গেমসের অন্য সব আসর থেকে এবার স্বর্ণালী হাসিতে উজ্জ্বল ছিলেন লাল-সবুজ ক্রীড়াবিদরা। যে হাসির ঝলক বেশী ছিল মেয়েদের মুখেই। কাঠমান্ডু ও পোখরায় এসএ গেমসে নিজেদের ইতিহাসে সেরা সাফল্য অর্জনে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন নারীরাই। গেমসে বাংলাদেশের পুরুষ ও নারী দলগত থেকে এসেছে ৩টি করে স্বর্ণ এবং মিশ্র দলগত থেকে এসেছে ২টি। দলগত ও মিশ্র দলগত ইভেন্টে সোনা জয়ের ক্ষেত্রে নারীদের সঙ্গে সমানে সমান থাকলেও ব্যাক্তিগতে পিছিয়ে পড়েছেন লাল-সবুজের পুরুষ ক্রীড়াবিদরা। ব্যাক্তিগত ইভেন্ট থেকে যেখানে নারী ক্রীড়াবিদদের হাত ধরে বাংলাদেশ পেয়েছে ৬টি স্বর্ণপদক, সেখানে পুরুষরা জিতেছেন ৫ সোনা। ছেলেদের হয়ে পাঁচ ব্যক্তিগত ইভেন্টে স্বর্ণজয়ীরা হলেন- তায়কোয়ান্ডোর দিপু চাকমা, কারাতেকা আল- আমিন ইসলাম, ভারোত্তোলক জিয়ারুল ইসলাম, আরচ্যার রোমান সানা ও মো. সোহেল রানা। আর ব্যাক্তিগত ইভেন্টে ছয় স্বর্ণজয়ী নারী হচ্ছেন- কারাতেকা মারজান আক্তার প্রিয়া, হুমায়রা আক্তার অন্তরা, ফেন্সিংয়ের ফাতেমা মুজিব, আরচ্যার ইতি খাতুন, সোমা বিশ্বাস ও ভারোত্তোলক মাবিয়া আক্তার সিমান্ত।
দেশে নানা সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও সব ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে দুর্বার গতিতে। ক্রীড়াঙ্গনেও দারুণ সব সাফল্যের ছাপ রাখছে তারা। এখন পর্যন্ত ছেলেরা যেখানে ক্রিকেটে এশিয়া কাপ ট্রফি জিততে পারেনি, সেখানে মেয়েরা ঠিকই দেখিয়ে শ্রেষ্ঠত্ব। গেল চার/পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশ পুরুষ ফুটবল দল ধারাবাহিক ব্যথতার মধ্যে থাকলেও নারী ফুটবলে কিন্তু এসেছে অভাবনীয় সাফল্য। শুধু তাই, এসএ গেমসের আগের আসরে ২০১৬ সালে গৌহাটি-শিলংয়ে বাংলাদেশ যে চারটি স্বর্ণপদক জয় করেছিল তার তিনটিই কিন্তু এসেছিল মেয়েদের হাত ধরেই। তখন সাঁতার থেকে দেশকে জোড়া সোনা উপহার দিয়েছিলেন মাহফুজা খাতুন শিলা এবং ভারোত্তোলন থেকে স্বর্ণ জিতেছিলেন মাবিয়া আক্তার সিমান্ত। অন্য ছেলেদের পক্ষে একমাত্র স্বর্ণটি এসেছিল শ্যুটার শাকিল আহমেদের হাত ধরে।
এবার নেপালে বাংলাদেশের নারী ও পুরুষ ক্রীড়াবিদদের সাফল্য আলাদা করলে দেখা যাবে ১৯ সোনা জয়ের ১১টিইতে ছিল নারীদের প্রতিনিধিত্ব। যার ছয় ব্যক্তিগত ইভেন্ট, তিন দলগত ও দুইটি মিশ্র দলগততে (নারী-পুরুষ)। অন্যদিকে পুরুষদের ১০ স্বর্ণের মধ্যে পাঁচটি ব্যক্তিগত, তিন দলগত ও দুইটি মিশ্র দলগত থেকে এসেছে।
দলগত বিভাগে নারীদের তিন স্বর্ণের একটি এসেছে ক্রিকেট ও অন্য দু’টি আরচ্যারি থেকে। আরচ্যারির রিকার্ভ নারী দলগত ইভেন্ট থেকে বাংলাদেশকে সোনা উপহার দেন ইতি খাতুন, মেহনাজ আক্তার মনিরা ও বিউটি রায়। রিকার্ভ নারী কম্পাউন্ড ইভেন্টে স্বর্ণ জয় করেন সুস্মিতা বণিক, সুমা বিশ্বাস ও শ্যামলী রায়। পুরুষদের দলগতের তিন স্বর্ণের মধ্যে একটি ক্রিকেট ও দু’টি এসেছে আরচ্যারি (রিকার্ভ ও কম্পাউন্ড) থেকে। আরচ্যারির মিশ্র দলগত ইভেন্ট থেকে আসা দু’টি স্বর্ণেই ছিল নারীদের অবদান। রিকার্ভ মিশ্র ইভেন্টে রোমান সানার সঙ্গে জুটি বেঁধে স্বর্ণ জিতে নেন ইতি খাতুন। কম্পাউন্ড মিশ্র ইভেন্টে মো. সোহেল রানার সঙ্গে জুটি বেঁধে লড়ে সাফল্য তুলে আনেন সুস্মিতা বণিক।
নারীদের মধ্যে ব্যক্তিগত ইভেন্টে স্বর্ণজয়ী মাবিয়া আক্তার সিমান্ত এসএ গেমসের টানা দুই আসরে স্বর্ণজয়ের কৃতিত্ব দেখিয়ে ইতিহাস গড়েছেন। এর আগে বাংলাদেশের অন্য কোনো ক্রীড়াবিদ গেমসের টানা দুই আসরে ব্যাক্তিগত ইভেন্ট থেকে সোনা জিততে পারেননি। ইতি খাতুনও গড়েছেন অনন্য এক রেকর্ড। তিনি আরচ্যারির ব্যক্তিগত, দলগত ও মিশ্র দলগত থেকে ৩ সোনা জিতে হ্যাটট্রিক করেছেন। এটা বাংলাদেশের কোনো নারী ক্রীড়াবিদের এক আসরে সর্বাধিক স্বর্ণ জয়ের রেকর্ড। এর আগে ২০১৬ গৌহাটি-শিলং এসএ গেমসে দু’টি ব্যক্তিগত ইভেন্টে স্বর্ণ জয় করেছিলেন সাঁতারু শিলা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন