রাজধানীর দক্ষিণগাঁও, নন্দীপাড় ও মাদারটেকের সড়কগুলোর বেহাল অবস্থা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ‘ফোর ইউনিয়ন সড়ক উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় এ কাজ চলছে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে। দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকয় ড্রেনেজ ও সড়ক উন্নয়নের কাজ চলার কারণে এই সড়কগুলো বর্তমানে প্রায় বন্ধ অবস্থা। চলাচলের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা না করে একসাথে সবগুলো সড়কে কাজ ধরার কারণে ওই এলাকার প্রায় আড়াই লাখ মানুষের দুর্ভোগের সীমা নেই। বৃষ্টি হলে কাঁদা-মাটি মিলে একাকার। রোদ উঠলে বাতাসে উড়ছে ধুলাবালি। এতে শিশু ও বৃদ্ধরা কাশিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
নন্দীপাড়া ও মাদারটেকের সড়কটি দিয়ে সাবেক ইউনিয়ন নাসিরাবাদের প্রায় দেড় লাখ লোক প্রতিদিন রাজধানী শহরে জীবিকার তাগিদে আসা-যাওয়া করতে হয়। এই সড়কটিতেও উন্নয়ন কাজ চলছে দীর্ঘদিন ধরে। অনেকটা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই তাদেরকে এ সড়কটি ব্যবহার করতে হচ্ছে। এই উন্নয়ন কাজের শেষে কবে হবে তাও বলতে পারছে না কেউ। এ ছাড়াও দক্ষিণগাঁও, নন্দীপাড়া ও মাদারটেক এলাকায় রয়েছে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদরাসাসহ বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা, বৃদ্ধ মানুষ ও অসুস্থ রোগীদের জন্য এ সড়কগুলো দিয়ে চলাচল এখন অনেকটা কষ্টসাধ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িছে।
ডিএসসিসি’র অঞ্চল-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ ইনকিলাবকে বলেন, দক্ষিণগাঁও, নন্দীপাড়া ও মাদারটেকের বিভিন্ন সড়কে ফোর ইউনিয়ন সড়ক ও ড্রেনেজ উন্নয়নের কাজ চলছে। এ প্রকল্পের মেয়াদ আগামী জুন মাস পর্যন্ত আছে। তিনি বলেন, আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি যেন জুন মাসের আগেই প্রকল্পের কাজ শেষ যায়। এ সড়কগুলোতে প্রথম বারের মতো সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন কাজ চলার কারণে নানা জটিলতায় আমাদেরকে পড়তে হচ্ছে। তাছাড়াও মাঝে মধ্যে বৃষ্টির কবলে পড়লে সাত থেকে ১০ দিন আর কাজ করা যায় না। তাই কাজের অগ্রগতি কিছুটা কম।
সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর দক্ষিণগাঁওয়ে বিভিন্ন সড়কে চলছে অপরিকল্পিত ও সমন্বয়হীন সড়ক উন্নয়নের কাজ। কোথাও চলছে খোঁড়াখুঁড়ি আবার কোথাও কার্পেটিংয়ের কাজ। এছাড়া রাস্তা কেটে ড্রেনের পাইপ লাইনের কাজ করা জন্য মাটি তুলে রাস্তার উপর রেখে দেয়া হয়েছে। কোথাও আবার রাস্তার উপর নির্মাণসামগ্রী এলোমেলোভাবে রেখে দিতেও দেখা গেছে। যে কারণে এ সড়কগুলো দিয়ে যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল অনেকটাই বন্ধ রয়েছে। এতে এলাকাবাসী পড়েছে চরম ভোগান্তিতে।
জানা গেছে, দক্ষিণগাঁও এলাকার এ সড়কগুলো উন্নয়ন কাজের টেন্ডার হয়ে ছিল ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে। এরপর চলতি বছরের জানুয়ারিতে ওয়ার্ক অর্ডার পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ প্রকল্পের আওতায় অন্তত ৯৫ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে প্রধান সড়ক ও অভ্যন্তরীণ প্রধান সড়কসহ প্রায় ১৮ কিলোমিটার রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে।
দক্ষিণগাঁওয়ের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, এলাকার অধিকাংশ রাস্তা এখনও কাঁচা ও সরু। প্রধান ও অভ্যন্তরীণ বেশির ভাগ রাস্তাই ৬ ফুট থেকে ১২ ফুটের বেশি নয়। একদিকে রাস্তা কেটে পাইপ লাইন বসানো, অন্যদিকে অপ্রশস্ত রাস্তায় রিকশা ও অন্যান্য যানবাহন চলাচল বন্ধ। এতে এলাকাবাসীর ভোগান্তির শেষ নেই।
দক্ষিণগাঁওয়ের ৮নং সড়কটি এই এলাকর প্রধান সড়ক। এ সড়ক থেকে মানিকদিয়া কবরস্থান পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে বেশ কিছু দিন আগে। সড়কের উপর একদিকে ময়লা-আবর্জনা তুলে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রীও নানা স্থানে রেখে দেয়া হয়েছে। যে কারণে এই সড়কটি দিয়ে যান চলাচল তো দুরের কথা হেঁটেও চলাচল করা যাচ্ছে না। এছাড়াও নন্দিপাড়া ব্রিজ থেকে শেখের জায়গা ব্রিজ পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার সড়কের ঢালাই কাজ না করার কারণে এ সড়টিও এখন চলাচলে অনুপযোগি হয়ে আছে। বেগুনবাড়ি ব্রিজ থেকে ওয়াবদা পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার ১০ থেকে ১২ ফুট প্রশস্ত রাস্তার কাজ শুরু করা কথা থাকলেও কবে শুরু হবে তাও কেউ বলতে পরছেন না। এই সড়কটিও অবস্থাও এখন বেহাল।
মানিকদিয়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ শাহ আালম বলেন, দক্ষিণগাঁও এলাকার সড়কগুলোর উন্নয়ন কাজ দেরিতে হলেও শুরু হয়েছে। এটা যেমন আশার কথা ঠিক তেমনি ধীরগতিতে কাজ চলার কারণে আমরা পড়েছি বড়ই দুর্ভোগে।
স্থানীয় তাজউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হোসনে আরা বলেন, রাস্তা কাটার পর থেকে বাচ্চাদের নিয়ে স্কুলে যাওয়া-আসা আমাদের জন্য অনেক কষ্টের হয়ে গেছে। প্রায়ই শিক্ষার্থীরা হাঁটতে গিয়ে ময়লা আবর্জনায় পড়ে যায়। কখনো কখনো গর্তেও পড়ে যচ্ছে। এতে করে এই সড়কগুলো দিয়ে আমরা এখন চলাচলের নামে যুদ্ধ করে যাচ্ছি। একটু বৃষ্টি হলেই কর্দমাক্ত রাস্তায় হাঁটার কোনো উপায় থাকে না।
ডিএসসিসি’র অঞ্চল-২ এর সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ পারভেজ রানা ইনকিলাবকে বলেন, দক্ষিণগাঁও, নাসিরাবাদ, মান্ডা ও ডেমরা এলাকার সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ ১৮ মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে বলে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোতে পাইপ লাইন বসানোর কাজ একযোগে করতে হচ্ছে। তবে দক্ষিণগাঁওয়ের কাজ দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। কাজ শেষ হয়ে গেলে এ এলাকার বাসিন্দারাই এর সুবিধা ভোগ করবে। সে পর্যন্ত একটু কষ্ট শিকার করে নিতে তো হবেই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন