সূর্যোদয় সূর্যাস্তের বেলাভূমি কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত রক্ষায় একদিকে সরকার চেষ্টা করছেন। অপরদিকে বেরিবাঁধ মেরামতের নামে অবৈধভাবে সমুদ্রের বালু নিয়ে অন্যত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। সমুদ্রের কোলঘেঁষে অবস্থিত স্থানীয় মানুষজন নিজেদের প্রয়োজনে ১ ভ্যান বালু নিয়ে ব্যবহার করতে পারছেন না। অথচ জেলা প্রশাসন কিংবা স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই চায়না সিকো কোম্পানি হাজার হাজার সিএফটি বালু ট্রাক ভরে নিয়ে যাচ্ছে। গত ১ সপ্তাহ ধরে চলছে এমন অবৈধ কর্মকান্ড। তবে কোম্পানির স্থানীয় প্রতিনিধি মিং জ্যাং এর মুখপাত্র ইমন ইসলাম জানান, তাদের এ বালু নেয়ার অনুমতি দিয়েছেন প্রকল্পের বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) প্রকৌশলী। বাপাউবো প্রকল্পের ৪৮ নং পোল্ডারের দায়িত্বরত প্রকৌশলী বালু নেয়ার অনুমতি কাউকে দেয়া হয়নি বলে অস্বীকার করেন। পুরো বিষয়টি নিয়ে লুকোচুরি খেলা চলছে।
জানা যায়, উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প, ফেজ-১ (সিইআইপি-১)র আওতায় কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত লাগোয়া ঝুঁকিপূর্ণ ৪৮ নং পোল্ডারের সংস্কার কাজ চলছে। এ বেরিবাঁধ নির্মাণ কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না সিকো কোম্পানি। এ কোম্পানির দায়িত্বরত প্রজেক্ট ইনচার্জ মিং জ্যাং কাজের ক্ষেত্রে কোন নিয়ম কানুনই মানছেন না। যেমন খুশি তেমন কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। কাজের মান নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন।
বিদেশি ওই কোম্পানির স্থানীয় প্রতিনিধিদের সহায়তায় বেরিবাঁধের কোলঘেঁষে অবস্থিত হোটেল সাগর কন্যা, বেঙ্গল গেষ্ট হাউজ ও সিভিউ হোটেলের সম্মুখ ভাগ থেকে সমুদ্রের বালু রাতে দিনে ট্রাক ভরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অন্যত্র। প্রায় বিশ থেকে পঁচিশটি ট্রাকে করে গত ১ সপ্তাহ ধরে এ বালু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে লতাচাপলী ইউনিয়নের আমখোলাপাড়া এলাকায়। এর আগেও এ কোম্পানি সমুদ্র সৈকত থেকে বালু নিয়ে অন্যত্র কাজে লাগিয়েছেন। পরে উপজেলা প্রশাসনের বাধার মুখে তখন বালু নেয়া বন্ধ হয়ে যায়। এরপর কিছুদিন বন্ধ থাকলেও এখন আবার নেয়া হচ্ছে সমুদ্রের বালু।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. মুজিবুল হক ওরফে মধু, সাউথ বীচ হোটেলের কেয়ার টেকার আনোয়ারসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, গত ক’দিন যাবত রাতে ও দিনে ২০-২৫ ট্রাকে করে স্কুভিটার (ভেকু) দিয়ে বালু কেটে নেয়া হচ্ছে। ১০ চাকার এসব ট্রাকের প্রতিটিতে ৬শ থেকে ৭’শ ফুট বালু ধারণক্ষমতার ভারী যানের শব্দে রাতে পর্যটকসহ স্থানীয়রা ঘুমাতে পারেন না।
চায়না সিকো কোম্পানির স্থানীয় প্রজেক্ট ইনচার্জ মিং জ্যাং এর মুখপাত্র দো-ভাষী মো. ইমন ইসলাম এ প্রতিনিধিকে জানান, বেরিবাধেঁর স্লোপের নিচের বালু নেয়ার অনুমতি রয়েছে তাদের। অনুমতিপত্র আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বাপাউবো প্রজেক্ট প্রকৌশলীর অনুমতিক্রমেই বালু অন্যত্র নেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে উপকূলীয় বাধঁ উন্নয়ন প্রকল্প, ফেজ-১ (সিইআইপি-১) ৪৮ এবং ৪৭/২ পোল্ডারের দায়িত্বরত প্রকল্প প্রকৌশলী মো. মজিবর রহমান (সিএসই) বলেন, বেরিবাঁধের কোলঘেঁষে থাকা সমুদ্রের বালু নেয়ার বিষয় তিনি জানেন না। আর এ বালু নেয়ার অনুমতি তিনি বা তার অফিস কাউকে দেয়নি। চায়না প্রজেক্টের ইনচার্জের মুখপাত্র মিথ্যা বলেছেন বলে তিনি জানান। তিনি সেলফোনে বালু নিতে নিষেধ করে দিবেন বলে জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন