পানি উন্নয়ন বোর্ডে চলছে ঠিকাদারী লাইসেন্স ভাড়ার রমরমা ব্যবসা। অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে কোটি কোটি টাকার টে›ন্ডা বাগীয়ে নিয়ে চলছে এ ব্যবস্থা। এসব প্রতিষ্ঠানে কেউ লাইন্সে ভাড়া দিয়ে টাকা কামাচ্ছেন। কেউ বা টেন্ডারে কাজ নিয়ে বিক্রি করে দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ সাব কন্ট্রাকটর নিয়োগ এবং কাজ হাতবদল করে আসছেন। অনেক প্রতিষ্ঠান সময় মত সরকারি প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারছেন না বছরের পর বছর। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে ১১টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) এ তালিকা প্রকাশ করে বলে জানা গেছে।
পানি সচিব কবির বিন আনোয়ার ইনকিলাবকে বলেন, আগামী ১ মাসের মধ্যে যদি উক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো চলমান কাজের অন্তত ৩০% অগ্রগতি না দেখাতে পারে সেক্ষেত্রে আমরা তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত করতে বাধ্য হবো। কেননা এতে রাষ্ট্রীয় অর্থের ক্ষতি সাধিত হয় এবং জনকল্যান ব্যাহত হচ্ছে। লাইসেন্স ভাড়া দেয়া, কাজ বিক্রয়, সাব কন্ট্রাকটর নিয়োগ, কাজ হাতবদল, সময়মত কাজ সমাপ্ত না করা ইত্যাদি বিষয়ে একাধিকবার সতর্ক করার পরেও প্রতিষ্ঠানগুলো আশাব্যঞ্জক কোন পদক্ষেপ নিতে পারেনি।
পানি সচিব বলেন, যারা প্রকল্প মূল্যায়নের সাথে জড়িত এবং সচেতনভাবে এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে উদাসীনতা দেখিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধেও আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিতে আমরা কার্পণ্য করবো না। নতুন ও যোগ্য প্রতিষ্ঠান আসার সুযোগ করে প্রকল্পগুলোকে মানসম্মত ও সঠিক সময়ে শেষ করতে আমাদের এই উদ্যোগ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ইনকিলাবকে বলেন, সুরামগঞ্জ, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, খুলনা, বাগেরহাটসহ বিভিন্ন এলাকার বেশিরভাগ ঠিকাদার। লাইসেন্স ভাড়ার দিয়ে ব্যবসা করে। কেউ বা টেন্ডারে কাজ নিয়ে বিক্রি করে দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ সাব কন্ট্রাকটর নিয়োগ এবং কাজ হাতবদল করে আসছেন।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে এ তালিকা করা হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় অধীনে সংস্থাগুলোর বাস্তবায়নাধীন ৯৪টি প্রকল্পের অধিকাংশ প্রকল্পের অগ্রগতি সন্তোষজনক না হওয়ায় এ জন্য কঠি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে মন্ত্রণালয়। প্রতিষ্ঠানগুলো যথাক্রমে, ওয়েস্টার্ণ ইঞ্জিনিয়ারিং, মেসার্স হাসান এন্ড ব্রাদার্স, মেসার্স তাজুল ইসলাম, মেসার্স মশিউর রহমান, এস.এস ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কন, ডলি কনস্ট্রাকশন লি, মেসার্স আমিন এন্ড কো, মেসার্স খন্দকার শাহীন, মেসার্স শামীমুর রহমান, ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স প্রাঃলিঃ এবং মেসার্স শহিদ ব্রাদার্স।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধিনস্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৪১৬ টি কাজ ১১টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের হাতে রয়েছে। যার তার চলমান প্রকল্পের মধ্যে ১১১ টি কাজের অগগ্রতি ৩০% এরও কম। ৩০-৪৫ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে ৫৩ কাজের, ৪৬-৬৭ ভাগ হয়েছে ৪৭ টি কাজ। চলমান কাজ শেষ না করা পর্যন্ত নতুন করে কোন কাজের জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত যেকোন টেন্ডারে তাদের অংশগ্রহন করতে পারবে না। সেটি পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে অবগক করা হয়েছে। পিপিয়ার-২০০৮ এ অবাধ প্রতিযোগিতা থাকলেও অভিজ্ঞতা ও বার্ষিক টার্নওভার নির্ণায়কের কারনে প্রকৃত অবাধ প্রতিযোগিতার সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। কতিপয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিন্ডিকেট করে মাত্রাতিরিক্ত কাজ নিচ্ছে এবং ওয়ার্কলোড থাকায় সময়মত প্রকল্প শেষ হচ্ছে না বিধায় প্রকল্পের উদ্দেশ্য ব্যহত হচ্ছে। কাজের মান ও নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হলে সেটি পিপিএ ২০০৬ এর ধারা ৬৪(৬) এবং পিপিআর ২০০৮ এর বিধি ১২৭(৪) (গ) চুক্তির মৌলিক শর্ত লংঘন হয়। এ ধরনের ঠিকাদারদের বিষয়ে বিধি ১২৭ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় অধীনে সংস্থাগুলোর বাস্তবায়নাধীন ৯৪টি প্রকল্পের অধিকাংশ প্রকল্পের অগ্রগতি সন্তোষজনক না হওয়ার কারণে মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো. মাহফুজুর রহমান এ বিষয়ে কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন