শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

গোপন নথি ঠিকাদারকে দিলেন প্রকৌশলী

কুড়িগ্রাম পাউবোতে ঘুষ কেলেঙ্কারি নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এমপির চিঠি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ জুলাই, ২০২১, ১২:০৫ এএম

প্রকল্পের গোপন নথি ঠিকাদারের হাতে তুলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কুড়িগ্রাম জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। পছন্দের ঠিকাদারদের কাছ থেকে ৮ থেকে ১২ শতাংশ হারে ঘুষ নিয়ে তিনি এসব করছেন বলে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ জানিয়েছেন কুড়িগ্রামের বাসিন্দারা। দুদক অভিযোগটি আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্পের দরপত্রে অনিয়ম করার অভিযোগ এনে প্রধানমন্ত্রীর দফতর, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক, পাউবোর রংপুর অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ করেছেন কুড়িগ্রাম-২ আসনের এমপিসহ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি।

কুড়িগ্রাম-২ আসনের এমপি পনির উদ্দিন আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, অনিয়মের বিষয়টি জানার পর সংশ্লিষ্ট দফতরকে লিখিতভাবে অবহিত করেছি। এ বিষেয়ে জানতে চাইলে পাউবোর রংপুরের প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ বলেন, ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ আমার জানা নেই। তবে যারাই কাজ পেয়েছে নিয়ম অনুযায়ী কাজ করতে হবে। এটা টাস্কফোর্স মনিটরিং করছে। সেখানে ফাঁকি দেওয়ার কোন সুযোগ নেই।

মো. খোরশেদ আলম নামে একজন ঠিকাদার অভিযোগ করে বলেন, কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পে ৫টি প্যাকেজের কাজ দেওয়ার কথা বলে গোপন মিটিংয়ে বসেন জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম। তিনি ৬০ কোটি টাকার একটি কাজ দেওয়ার কথা বলে ১০ শতাংশ হাতের ঘুষ দাবী করেন। নির্বাহী প্রকৌশলী পাউবোর গোপন ইস্টিমেট কস্ট তার নিজ মেইল থেকে আমার মেইলে পাঠান। আমি ওই কস্ট অনুযায়ী সরকারি নিয়ম মেনে ১০ শতাংশ লেসে টেন্ডারে অংশ নেই। তিনি আমাকে ৫টা প্যাকেটে ৫৯ কোটি টাকার কাজ দেওয়ার জন্য গোপন চুক্তি করেন। দরপত্রে অংশ নেওয়ার ২০ দিন আগে তিনি আমাকে ২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর ইস্টিমেট কস্ট দেন। তিনি আমার থেকে কাছ থেকে ঘুষ বাবদ এক কোটি টাকা নেন। পরে আমি আরও তিনটি প্যাকেজে (ধরলা আইডি নং ৩৯-৪১) কাজ দেওয়ার কথা বলে টেন্ডারে অংশ নিতে বলেন। তিনি আমাকে কাজ না দিয়ে ঢাকার রাব্বানী এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেন। এজন্য রাব্বানী এন্টারপ্রাইজ থেকে তিনি ১২ শতাংশ হারে ঘুষ নেন। ঠিকাদার অভিযোগ করেন বলেন, আমাকে কাজ না দিয়ে আমার আড়াই কোটি টাকার বিডি আটক করে রেখেছেন নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম। সে আমার কাছে থেকে নেওয়া ঘুষের টাকা ফেরত দিচ্ছে না, বিডির আড়াই কোটি টাকাও দিচ্ছে না কিংবা কাজও দিচ্ছে না। আমার সঙ্গে কথা হয়েছিল আমি ঘুষ বাবত তাকে ২ শতাংশ টাকা দিবো। কিন্তু রাব্বানীর কাছ থেকে তিনি ঘুষ নিয়েছে ১২ শতাংশ হারে। আমি তার কথা মতো দরপত্রে অংশ নিয়ে যাচ্ছি। কাজগুলো আমার এলাকার। আমার ইচ্ছে ছিল কাজগুলো ভালোভাবে মানসম্মত করবো। আমি তার চাহিদামতো ঘুষ না দিতে পারায় আমাকে কাজ না দিয়ে অন্যজনকে দিচ্ছেন।

কুড়িগ্রাম জেলাকে নদীভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজগুলো চেয়ে নিয়েছেন। মানসম্মত কাজ করতে গেলে এখানে বেশি ঘুষ দেওয়া সম্ভব নয়। তিনি অন্য এলাকার ঠিকাদারদের ৮ থেকে ১২ শতাংশ হারে ঘুষ নিয়ে কাজ দিতে পারেন। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম নিয়ে গত ১৬ জুন এলাকাবাসীর পক্ষে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ জমা দেন ওয়াহিদুজ্জামান নামে এক ব্যক্তি। অভিযোগে বলা হয়, নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম ও উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ওমর ফারুক মো. মোক্তার হোসেন এবং রফিকুল ইসলামসহ একটি চক্র ঘুষের কারবারের মাধ্যমে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ ভাগাভাগি করে নিচ্ছে। ঘুষ নেওয়ার মাধ্যমে বিতর্কিত ঠিকাদার বিশ্বাস বিল্ডার্স, আরাধন এন্টারপ্রাইজ ও রাব্বানী এন্টারপ্রাইজকে এসব কাজ বন্টন করে দিয়েছে। এতে স্থানীয় মানুষের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ইতোপূর্বে পাউবোর বিভিন্ন প্রকল্পে নিম্নমানের কাজ করে বিল তুলে নেওয়ার অভিযোগ থাকার বলা হয় দুদকের অভিযোগে।

কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য পনির উদ্দিন আহমেদ নিম্নমানের কাজ ও দরপত্রে অনিয়মের অভিযোগ এনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ জমা দেন। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে দেওয়া অভিযোগে বলা হয়, কুড়িগ্রাম জেলাকে নদী ভাঙ্গন ও বন্যা থেকে রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রী ৫৯৫ কোট টাকার একটি প্রকল্প দিয়েছেন। যার বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে। জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী নানা অনিয়ম ও অর্থের বিনিময়ে প্রকল্পের গোপন নথি ঠিকাদারদের হাতে তুলে দিয়েছেন। টেন্ডার পক্রিয়ায় যারা কাজ পেয়েছে তাদের অধিকাংশেই বিএনপি জামায়াতের আশীর্বাদপুষ্ঠ ঠিকাদার। যার ফলে প্রকল্পে নিম্নমানের কাজ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যা পরবর্তীতে জেলার উন্নয়নে বড় ধরনের বাধার সৃষ্টি করবে। বিষয়টি তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন