জলাব্ধতায় ডুবে গেছে কৃষকের স্বপ্ন। হতাশা, হাকাকার আর দুঃখ-কষ্টে অঝোর ধারায় ঝরছে কৃষকের চোখের পানি। যে আবাদ নিয়ে কৃষক স্বপ্ন দেখেছিলেন। এখন সেখানে হাহাকার। তিস্তার বানের পানির সাথে চোখের পানি একাকার হয়ে গেছে। পানিতে ডুবে আছে ১০টি গ্রামের পাঁচ হাজার পরিবার, আমনসহ ৫০ হাজার হেক্টর জমির উঠতি ফসল ও ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। এমনটি হয়েছে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ও তাম্বুলপুর ইউনিয়নের তিস্তা পাড়ে অপরিকল্পিতভাবে একটি সড়ক নির্মাণের ফলে। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল উজানে তিস্তার ভাঙন নিরসনে একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণের। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড উজানে বেড়িবাঁধ নির্মাণ না করে ভাটিতে একটি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে যাতায়াতের সড়ক নির্মাণে সহযোগিতা করে। সড়কটি নির্মাণ হওয়ায় পানি নেমে যেতে না পারায় স্থায়ী পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকা ঘুরে জানা গেছে, ১৯৮৮ সালে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা ও নদী ভাঙন দেখা দেয়। এতে উপজেলার ছাওলা, তাম্বুলপুর ও কান্দি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। পানিবন্দি হয়ে পরে হাজার হাজার পরিবার। পরে ওই ইউনিয়নগুলোর বেশির ভাগ গ্রামকে বন্যা থেকে রক্ষার জন্য ১৯৯০ সালে ছাওলা ইউনিয়নের বোল্ডারের মাথা থেকে তাম্বুলপুর ইউনিয়নের সাহেব বাজার পর্যন্ত প্রায় ৮ কিলোমিটার তিস্তা ডান তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে ওই বাঁধের উজানে দায়সারাভাবে ২০০ মিটার একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। ২০০৭ সালে তিস্তার তীব্র ভাঙনে ওই বেড়িবাঁধসহ একের পর এক জনপদ বিলীন হয়ে যায়। ওই সময় থেকেই এলাকাবাসী দাবি করে আসছেন উজানে শিবদেব চরে একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণের। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড গুরুত্ব না দেয়ায় গত বছরও শিবদেবচর গ্রামের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবারের বাড়িঘর, আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় এবং তিনটি ইউনিয়নের ৩৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে ১৮ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। চলতি বছরেও ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
সম্প্রতি তিস্তা নদীর ভাটিতে পাশর্^বর্তী সুন্দরগঞ্জ উপজেলার খোদ্দা ও লাটশালার চরে একটি বেসরকারি সৌর বিদ্যুতকেন্দ্রে যাতায়াতের জন্য সাহেব বাজার থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার একটি সড়ক নির্মাণ করা হয়। ওই সড়কটি নির্মাণ করা হলেও উজানে শিবদেব চর এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ না করায় এ সড়কটি এলাকাবাসীর সুখ কেড়ে নিয়েছে। উজানে বেড়িবাঁধ না থাকায় গত দুই মাস আগে তিস্তার পানি ওই গ্রামগুলোতে ঢুকে পড়েছে। কিন্তু নতুন ওই সড়ক নির্মাণের কারণে পানি নেমে যেতে পারছে না। ফলে দেখা দিয়েছে স্থায়ী পানিবদ্ধতা। তিস্তা নদীর পানি বেড়ে ছাওলা ইউনিয়নের শিবদেব চর, জুয়ান, সদরা, পূর্ব ছাওলা, জুয়ানের চর, দক্ষিণ গাবুড়া, আমিন পাড়া ও বৈরাগীপাড়াসহ ১০টি গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। এ ছাড়া ওই এলাকার প্রায় ৫০ হাজার একর জমির আমনসহ উঠতি ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। ছাওলা ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আব্দুল হাকিম জানান, একটি বেড়িবাঁধ হলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। এ ব্যাপারে পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাউজুল কবির জানান, বিষয়টি আমি জেনেছি। দ্রুত সমস্য সমাধানের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
গাইবান্ধা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, তিস্তার ভাঙন রোধে শিবদেব চরে একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য আলাদা কোনো বরাদ্দ নেই। বরাদ্দ পেলে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন