বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আল্টিমেটাম অনশন আর আল্পনায় আন্দোলন

ছাত্রী ধর্ষণে দ্বিতীয় দিনেও উত্তাল ঢাবি

নুর হোসেন ইমন | প্রকাশের সময় : ৮ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

ব্যস্ত সড়ক থেকে তুলে নিয়ে সহপাঠীকে ধর্ষণের শোক সইতে পারছেন না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা। অনশন, আল্টিমেটাম, রাস্তায় ধর্ষণ বিরোধী আল্পনা কখনও বা ধর্ষকের প্রতিকী কুশপুত্তলিকা দাহ করে আন্দোলন করছেন তারা। গতকাল মঙ্গলবার সারাদিনব্যাপী দফায় দফায় আন্দোলন হয়েছে ক্যাম্পাসে। এদিন শিক্ষার্থীদের সাথে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদেরও অংশ নিতে দেখা যায়। ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষকের প্রকাশ্য শাস্তি দাবি করেছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. সাব্বির আহমেদ। সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, ছাত্রলীগ, ছাত্রদল থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিভাগ, অনুষদ, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে দীনব্যাপী উত্তাল ছিলো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।

গতকাল ভোর থেকেই ধর্ষকের দ্রুত গ্রেফতার ও সর্বোচ্চ শাস্তি দাবিতে কর্মসূচি শুরু করে শিক্ষার্থীরা। সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে ধর্ষণের বিরুদ্ধে মৌণ মিছিলের আয়োজন করা হয়। এতে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, মৌণ মিছিলের মাধ্যমে আমরা বিচারহীনতার প্রতি নিরব প্রতিবাদ করছি। সেই সাথে আমরা দাবি করছি সারা দেশের সকল ধর্ষককে যেন আইনের আওতায় আনা হয় এবং ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড নিশ্চিত করা হয়।

বেলা ১২টায় সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যে ধর্ষকের প্রতিকী কুশপুত্তলিকা দাহ করে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এসময় তাদের সাথে বিভাগের শিক্ষকরাও অংশ নেয়। কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে বিভাগের প্রফেসর ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, আজকে যে উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে, সেটা কি রকম উন্নয়ন। যেখানে আমাদের মেয়েদের নিরাপত্তা দিতে পারেনা। এই প্রতিবাদের মাধ্যমে বলতে চাই আমাদের মেয়েকে যে শারীরিক নির্যাতন, ধর্ষনের মত জঘন্য কাজ করা হয়েছে তার অনতিবিলম্বে শাস্তি চাই। প্রকাশ্যে এর শাস্তি দিতে হবে। এমন বিচার চাই যে বিচার ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

৪ শিক্ষার্থীর অনশন অব্যাহত:
ধর্ষণের প্রতিবাদে চার দাবি নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন চার শিক্ষার্থী। ধর্ষণের খবর পাওয়ার পরপরই রোববার রাত থেকে অনশনে বসেন দর্শন বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র মো. সিফাতুল ইসলাম। পরদিন তার সঙ্গে আরও তিন শিক্ষার্থী অনশনে যোগ দেন। মঙ্গলবারও তাদের অনশন অব্যাহত ছিল। অনশনে থাকা অন্য শিক্ষার্থীরা হলেন, মৃত্তিকা-পানি ও পরিবেশ বিজ্ঞানের ছাত্র মো. সাইফুল ইসলাম, তথ্য ও প্রযুক্তি ইনস্টিউটের মোস্তাফিজুর রহমান নাফিজ এবং ইতিহাস বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র মো. আব্দুর রহমান।

রাস্তায় ধর্ষণ বিরোধী আল্পনা:
‘আমি বাংলাদেশ, আমি লজ্জিত’ আল্পনা অঙ্কন করে শিক্ষার্থীরা ধর্ষণের প্রতিবাদ করেছে শিক্ষার্থীরা। সকালে ছাত্রলীগের উদ্যোগে চারুকলা অনুষদের বিভাগের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদী আল্পনা অঙ্কন করে। অল্পনা অঙ্কনে অংশ নেন ছাত্রলীগের ঢাবি ও বিশ^বিদ্যালয় শাখার নেতৃবৃন্দ। সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতে ডাকসুর উদ্যোগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।

ছাত্রদলের আল্টিমেটাম:
ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষকের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করে ছাত্রদল। একইসঙ্গে ২৪ ঘন্টার মধ্যে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে আলটিমেটাম দেয় তারা। অন্যথায় ছাত্রসমাজকে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার হুমকি দেয়া হয় সংগঠনটির পক্ষ থেকে। মঙ্গলবার ছাত্রদলের এ সমাবেশে ঢাবি ছাত্রদলের আহŸায়ক রাকিবুল ইসলামের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসাইন শ্যামল। এতে কেন্দ্রীয়, বিশ^বিদ্যালয় ও বিভিন্ন হল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।

এদিকে ধর্ষণের শিকার ছাত্রীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আর তার সাহস ও বুদ্ধিমত্তার প্রশংসা করেছেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাসিমা বেগম। গতকাল হাসপাতালে দেখতে গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, সে আসমিকে দেখলে চিনতে পারবে। মেয়েটির দেওয়া বর্ণনা থেকে পুলিশ ধারণা পেয়েছে, ধর্ষণকারী একজনই, তার বয়স ২৫-৩০ বছরের মত। মেয়েটির বাবা ক্যান্টনমেন্ট থানায় যে মামলা করেছেন, সেখানেও একজনকেই আসামি করা হয়েছে।

মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, মেয়েটি অত্যন্ত সাহসী, সে সাহসের পরিচয় দিয়েছে। সে যেহেতু আসামির চেহারার একটি বর্ণনা দিতে পারছে, অবিলম্বে একটি স্কেচ এঁকে আসামি শনাক্ত ও গ্রেফতার করার ব্যবস্থা যাতে করা হয় সেটা আমি বলেছি। নাসিমা বেগম বলেন, মেয়েটি দেরি না করে ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে। আলামত নষ্ট হতে দেয়নি। এখন পরীক্ষা করে ডিএনএ মিলিয়ে প্রকৃৃত ধর্ষককে শনাক্ত করা কঠিন হওয়ার কথা নয়। সাহস আর মনের জোরের কারণে মেয়েটির অবস্থার দ্রæত উন্নতি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের পরিচালক একেএম নাসির উদ্দিন বলেছেন, শিক্ষার্থীর সার্বিক অবস্থা উন্নতির দিকে। সাত সদস্যের মেডিকেল বোর্ড চাইলে দুই-তিন দিনের মধ্যে তাকে ছাড়পত্র দেয়া যেতে পারে।
প্রসঙ্গত, গত রোববার সন্ধ্যায় বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে রাজধানীর শেওড়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন ওই তরুণী। কুর্মিটোলায় বাস থেকে নামার পরপরই অজ্ঞাত ব্যক্তি তাকে মুখ চেপে ধরে পাশ^বর্তী নির্জন ঝোঁপে নিয়ে ৪ দফায় ধর্ষণ করে। পরে অজ্ঞান অবস্থায় এ শিক্ষার্থীকে সেখানে রেখে পালিয়ে যায় ধর্ষক। রাত ১০টার দিকে সেখান থেকে অটোরিকশা নিয়ে বান্ধবীর বাসায় গিয়ে বিষয়টি জানান শিক্ষার্থী। পরে সহপাঠীরা তাকে রাতে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। এরপর ওদিন রাত থেকে ধর্ষকের গ্রেফতার চেয়ে আন্দোলন করে আসছে শিক্ষার্থীরা।##

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন