প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর অন্তরঙ্গ সঙ্গী এবং প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) স্বল্পকালীন খেলাফত আমলে বহু ফেতনা খতম করেন, বহু মিথ্যা নবী ও মোর্তাদকে নির্মূল করেন এবং ইরাক ও সিরিয়া জয় করেন। হিজরি ১৩ সালের ২২ জমাদিউস সানিতে (৬৩৩ খ্রি.) তিনি ইন্তেকাল করেন এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পাশেই সমাহিত হন। হজরত সিদ্দীকে আকবর (রা.) ইতিহাসে ‘মোনকিযুল ইসলাম’ বা ইসলামের রক্ষক ও দুশমনের হাত হতে উদ্ধারকারী হিসেবে পরিচিত। তার এ নামে প্রসিদ্ধি লাভ করার মূল কারণ ইতিহাসের এক আলোড়ন সৃষ্টিকারী সুদূরপ্রসারী ঘটনা, যাতে যাকাত অস্বীকারকারী, মিথ্যা নবুওয়াতের দাবিদার এবং মোর্তাদদের বিরুদ্ধে দমনসহ বহু অভিযান চালাতে হয়েছিল। এ অভিযানসমূহে সর্বমোট সত্তর হাজার মোর্তাদ নিহত হয়েছিল বলে ইতিহাস হতে জানা যায়। এর ফলে খলিফা ইসলামকে সকল প্রকারের ইসলামদ্রোহী ও মোর্তাদ এবং মোশরেকের আগ্রাসন হতে মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
হজরত সিদ্দীকে আকবর (রা.) খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণের সাথে সাথে তার সামনে কয়েকটি বড় বড় জটিল সমস্যা দেখা দেয়। হুজুর (সা.)-এর ওফাতের ফলে তার ঘোষিত সর্বশেষ অভিযান স্থগিত হয়ে যাওয়া, যাকাত অস্বীকারকারীদের উদ্ভব এবং মিথ্যা নুবওয়াতের দাবিদারদের উপদ্রব, যেমন উপরে ইঙ্গিত করা হয়েছে, তিনি ইসলামের এ নাজুক পরিস্থিতিতে হুজুর (সা.)-এর ঘোষিত এবং স্থগিত অভিযান প্রেরণের দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করেন এবং অভিযান প্রেরণ করেন।
অতঃপর যাকাত অস্বীকারকারী ও মোর্তাদদের সঠিক পথে আসার জন্য বুঝাতে চেষ্টা করেন এবং এ উদ্দেশ্যে বিভ্রান্তদের নিকট প্রতিনিধি দল প্রেরণ করেন। যারা খলিফার আহŸানে সাড়া না দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করে, তাদের দমনের জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করেন এবং যারা এসব অভিযান ঠেকাতে সশস্ত্র যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল তাদেরকে দমন করেন। তারা ছিল আরবের নানা গোত্র ও নানা স্থানের বিভ্রান্ত লোক। তাদের মধ্যে অনেকে আত্মসমর্পণের পর ইসলাম গ্রহণ করে।
যারা মিথ্যা নবুওয়াতের দাবিদার ছিল এবং যে সব গোত্র মোর্তাদ হয়ে গিয়েছিল তাদের মধ্যে বনু হানিফার মোসায়লামাতুল কাজ্জাব, ইয়েমেনে আসওয়াদ আনাসী, তামীম গোত্রে সাজাহ বিনতে হারেস, বনি ইয়ারবু গোত্রে মালেক ইবনে নোভায়রা প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। আরো সে সব গোত্র মোর্তাদ হয়ে যায়, সেগুলোর মধ্যে তাই গোত্র, কিন্দাবাসী, বাহরায়নবাসী, আম্মানবাসী, মোহরাবাসী এবং কোবাবাসী প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
খলিফা হজরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) এ সকল ভন্ড নবী ও মোর্তাদ গোত্রদের দমনের জন্য ঐ সকল স্থানে বহু অভিযান প্রেরণ করেন এবং সকলকে সময়োচিত শিক্ষা দেন। এ সকল যুদ্ধে সর্বমোট সত্তর হাজার মোর্তাদ মোশরেক নিহত হয় এবং প্রায় দশ হাজার মুসলমান শহীদ হন। ইয়ামামা যুদ্ধে মোসায়লামতুল কাজ্জাব নিহত হয়। কোনো কোনো ভন্ড নবী এবং তাদের অনুসারীরা মুসলমান হয়ে যায়। ইয়ামামা যুদ্ধের অপর নাম ‘হাদীকাতুল মওত’ বা মৃত্যুর বাগান।
ইসলামের প্রথম খলিফার আমলে মোর্তাদ ও ভন্ড নবীদের তৎপরতা নির্মূল হলেও পরবর্তী কালে যুগে যুগে এ বিষবৃক্ষ নতুন নতুন শাখা বিস্তার করে মানুষকে বিভ্রান্ত ও বিপথগামী করতে তৎপর এবং তা কোথাও সীমাবদ্ধ নয়, মোসায়লামাদের প্রেতাত্মাগুলো আজও নানা স্থানে সক্রিয় এবং তৎপর।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন