মোহাম্মদ আবু নোমান
ইসলাম আল্লাহ প্রদত্ত একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। এ জীবন ব্যবস্থায় সালাতের গুরুত্ব যেমন অপরিহার্য তেমনি জাকাতের গুরুত্বও অনস্বীকার্য। জাকাতভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সুখী সমৃদ্ধিশালী ও কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব। আল্লাহর বাণী ‘নামায কায়েম কর, জাকাত আদায় কর এবং রুকূ’কারীদের সাথে একত্রিত হয়ে রুকু কর (অর্থাৎ জামায়াতের সাথে নামায আদায় কর)। পবিত্র কোরআনে নামায ও জাকাতের কথা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৮২ বার, প্রত্যক্ষভাবে ৩২ বার, একত্রে ২৮ বার ছাড়াও মোট ১৯টি সূরার ২৯টি আয়াতে জাকাত শব্দটি এসেছে।
ইসলাম সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের ধর্ম। ইসলাম চায় ধনী-গরিব সবাই স্বচ্ছন্দে জীবন-যাপন করুক। তাই দরিদ্রের প্রতি লক্ষ্য করে জাকাতের বিধান প্রবর্তন করা হয়েছে। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন- ‘তাদের মধ্যে যারা ধনী তাদের থেকে গ্রহণ করা হবে। আর তাদের মধ্যে যারা দরিদ্র বা অভাবী তাদের মধ্যে বণ্টন করা হবে’ (বুখারী)। জাকাত গরিবের প্রতি কোন করুণা নয় বরং তার হক- যা ধনী ব্যক্তিকে অবশ্যই আদায় করতে হবে। আবু বকর (রা.) বলেছেন, ‘যারা রাসূল (সা.)-এর যুগে একটি উটের রশিও জাকাত হিসেবে আদায় করত আর এখন তারা যদি জাকাত দিতে অস্বীকার করে আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলাম’ (বুখারী)। তার এ ভাষণের মর্মার্থই ছিল, মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা যাতে কেউ কাউকে তার অধিকার হতে বঞ্চিত করতে না পারে।
জাকাতের সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার দারিদ্র্য বিমোচন, যা সামাজিক নিরাপত্তার মূল চালিকা শক্তি। জাকাত বণ্টনের ৮টি খাতের মধ্যে ৪টি খাতই (ফকির, মিসকিন, দাসমুক্তি, ঋণগ্রস্ত) সর্বহারা, অসহায়, অভাবগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জন্য নিবেদিত। আমাদের দেশসহ পৃথিবীর বহু দেশের অসংখ্য মানুষ শুধু দারিদ্র্যের কারণে এনজিওদের প্রলোভনে পড়ে ধর্ম ত্যাগ করছে। ‘দারিদ্র্য মানুষকে কুফরীর দিকে নিয়ে যায়’। মহানবী (সা.) বলেন, হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট কুফরী ও দরিদ্রতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
আশ্চর্যের বিষয় হলো, দারিদ্র্যের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকলেও বিশ্বের মোট সম্পদের পরিমাণ মোট জনসংখ্যার প্রয়োজনের তুলনায় কম নয়, বরং অনেক বেশি। আসলে মূল সমস্যা হলো বণ্টন ব্যবস্থায়। যে সমস্যার সমাধানে ইসলামের জাকাত ব্যবস্থার কার্যকারিতা ঐতিহাসিক প্রমাণিত। জাকাতভিত্তিক সমাজে কারো পক্ষে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার কোন সুযোগ নেই। আবার কারো পক্ষে গরীব থাকার সম্ভাবনাও নেই। ইসলাম একটি পরিপূর্ণ ভারসাম্যপূর্ণ জীবন বিধান।
সমাজ বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে প্রত্যেকটি মানুষের ব্যক্তিগত কল্যাণ তার সামাজিক বৃহত্তর কল্যাণের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একজনের কাছে যে অর্থ আছে তা যদি অন্য এক ভাইয়ের সাহায্যার্থে ব্যয়িত হয় তবে এ অর্থই আবর্তিত হয়ে অভাবিতপূর্ব কল্যাণ নিয়ে পুনরায় তার হাতেই ফিরে আসবে। পক্ষান্তরে নিতান্ত সংকীর্ণ দৃষ্টির বশবর্তী হয়ে যদি সে তার নিজের কাছেই সঞ্চয় করে রাখে, কিংবা নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থজনিত কাজে ব্যয় করে, তবে ফলত সে অর্থ ক্ষয়প্রাপ্ত হবে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, একটি ইয়াতীম শিশুকে আপনি যদি লালন-পালন করে এবং উপযুক্ত শিক্ষা-দীক্ষা দিয়ে উপার্জনক্ষম করে দেন, তবে তাতে সামাজিক সম্পদ বৃদ্ধি পাবে। আপনিও তা থেকে অংশ লাভ করতে পারবেন। কারণ, আপনিও সেই সমাজেরই একজন লোক। হতে পারে সেই ইয়াতীমের বিশেষ যোগ্যতার ফলে আপনি যে অর্থ লাভ করেছেন তা কোনো হিসেবের সাহায্যে, হয়ত আপনি আদৌ জানতে পারেননি। কিন্তু প্রথমেই তার লালন-পালন করতে এবং তাকে শিক্ষা-দীক্ষা দিতে আপনি যদি অস্বীকার করেন এবং বলেন যে, আমি তার সাহায্য করবো কেন, তবে তো সে উদভ্রান্তের ন্যায় ঘুরে বেড়াবে, ছন্নছাড়া হয়ে নিরুদ্দেশ হাতড়িয়ে মরবে, অকর্মণ্য হয়ে যাবে এবং সামাজিক সম্পদ বৃদ্ধি করার মতো কোনো যোগ্যতাই সে লাভ করতে পারবে না। বরং সে অপরাধ প্রবণ হয়ে একদা স্বয়ং আপনার ঘরেই সিঁদ কাটতে প্রস্তত হবে। এর অর্থ এ দাঁড়ায় যে, আপনি সমাজেরই এক ব্যক্তিকে অকর্মণ্য ও অপরাধ প্রবণ বানিয়ে কেবল তারই নয়-আপনার নিজেরও ক্ষতি সাধন করলেন।
জাকাত নামক এ ইবাদতে মালি বা অর্থনৈতিক ইবাদত আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং তাঁর অনুগ্রহ ও রহমতকে ত্বরান্বিত করে। কোরআনে করিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘জাকাত আদায় করা আল্লাহর সাহায্য লাভের পূর্বশর্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়’ (সূরা আরাফ)।
‘জাকাত’ অর্থ পবিত্রতা এবং পরিচ্ছন্নতা, শুদ্ধি ও পরিবর্ধন (এৎড়ঃিয)। নিজের ধন-সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ গরীব-মিসকীন ও অভাবী লোকদের মধ্যে বণ্টন করাকে ‘জাকাত’ বলা হয়। পরিভাষায় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে শরিয়ত নির্ধারিত পরিমাণ সম্পদের নির্দিষ্ট অংশ কোরআনে বর্ণিত ৮ প্রকারের কোন এক প্রকার লোক অথবা প্রত্যেককে দান করে মালিক বানিয়ে দেয়াকে জাকাত বলে। কারণ এর ফলে সমগ্র ধন-সম্পত্তি এবং সেই সাথে তার নিজের আত্মার পরিশুদ্ধি হয়ে থাকে। যে ব্যক্তি আল্লাহ প্রদত্ত ধন-সম্পদ তার বান্দাদের জন্য নির্দিষ্ট অংশ ব্যয় করে না, তার সমস্ত ধন অপবিত্র এবং সেই সাথে তার নিজের মন ও আত্মা পংকিল হতে বাধ্য। এমন ব্যক্তি দুনিয়ায় খালেছভাবে আল্লাহর জন্য না কোনো কাজ করতে পারবে, না তার দ্বীন ও ঈমান রক্ষার্থে কোনোরূপ আত্মত্যাগ ও কুরবানি করতে প্রস্তুত হতে পারবে। কাজেই একথা বলা যেতে পারে, যে ব্যক্তি জাকাত আদায় করে না তার দিল নাপাক, আর সেই সাথে তার সঞ্চিত ধন-মালও অপবিত্র, তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।
রাসূল (সা.)-এর ইন্তেকালের পর যখন আরবের কোনো এক গোত্রের লোক জাকাত আদায় করতে অস্বীকার করেছিল, তখন হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) তাদের বিরুদ্ধে-কাফেরদের বিরুদ্ধে যেমন করতে হয় ঠিক তেমনি-যুদ্ধের কথা ঘোষণা করেছিলেন। অথচ তারা নামায পড়তো, আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলের প্রতি তাদের ঈমানও বর্তমান ছিল। এতে নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয় যে, জাকাত আদায় না করলে নামায-রোজা ইত্যাদি তার কোনো কাজই আল্লাহর কাছে গৃহীত হতে পারে না। আল্লাহর পথে খরচ করতে যে ব্যক্তি কুণ্ঠিত হবে, এরূপ খরচকে যে নিজের ওপরে জরিমানা বলে মনে করবে, কৌশল ও শঠতা করে তা থেকে যে আত্মরক্ষা করতে চায়, আর কিছু খরচ করলেও সে জন্য লোকের প্রতি নিজের অনুগ্রহ প্রকাশ করে মনের জাল মিটাতে চায় কিংবা নিজের বদান্যতার কথা দুনিয়ায় প্রচার করতে চায়, প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ ও পরকালের প্রতি এমন লোকদের আদৌ ঈমান থাকতে পারে না।
জাকাতের গুরুত্ব এতবেশি যে, নামাজকে অস্বীকার করলে যেমন কাফের হতে হয়, অনুরূপভাবে জাকাত দিতে অস্বীকার করলে তাকে শুধু কাফেরই হতে হয় না, সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম একমত হয়ে তার বিরুদ্ধে জিহাদও করেছেন। আব্দুল্লাহ বিন উমর (রা.) হতে বর্ণিত রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন- ‘আমাকে মানুষের সাথে যুদ্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে যতক্ষণ না তারা সাক্ষ্য দেয়Ñ আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসূল আর নামাজ কায়েম করে এবং জাকাত আদায় করে’ (বুখারী, মুসলিম)। রাসূল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তা’আলা যাকে সম্পদ দিয়েছেন অথচ সে তার জাকাত আদায় করে না, কিয়ামত দিবসে তার সম্পদকে দুই চোখ বিশিষ্ট বিষাক্ত সাপে পরিণত করা হবে। তারপর সাপটিকে কিয়ামতের দিবসে তার গলায় জড়িয়ে দেয়া হবে। সাপ তার দুই মুখে দংশন করতে করতে বলতে থাকবে, আমি তোমার বিত্ত, আমি তোমার গচ্ছিত সম্পদ’ (বুখারী)।
কোরআন মজীদ থেকে জানতে পারা যায়, প্রাচীনকাল থেকে প্রত্যেক নবীর উম্মাতের প্রতিই সমানভাবে নামাজ ও জাকাত আদায় করার কঠোর আদেশ করা হয়েছিল। দ্বীন ইসলামের কোনো অধ্যায়েই কোনো নবীর সময়ে কোনো মুসলমানকেই নামাজ ও জাকাত থেকে রেহাই দেয়া হয়নি। হযরত ইসমাঈল (আ.) সম্পর্কে বলা হয়েছে : ‘তিনি তাঁর লোকদেরকে নামাজ এবং জাকাত আদায় করার আদেশ করতেন এবং আল্লাহর দরবারে তিনি বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন ছিলেন’ (সূরা মরিয়ম)। মূসা (আ.) সম্পর্কে বলা হয়েছে : ‘যদিও আমার রহমত সকল জিনিসের ওপরই পরিব্যাপ্ত আছে; কিন্তু তা কেবল সেই লোকদের জন্যই নির্দিষ্ট করবো যারা আমাকে ভয় করবে এবং জাকাত আদায় করবে, আর যারা আমার বাণীর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে’ [সূরা আরাফ]। হযরত রাসূলে করীম (সা.)-এর পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) সর্বশেষ নবী ছিলেন। আল্লাহ তাআলা তাঁকেও একই সাথে নামাজ এবং জাকাতের হুকুম দিয়েছেন। সূরা মারিয়ামে বলা হয়েছে : ‘আল্লাহ আমাকে মহান করেছেন-যেখানেই আমি থাকি এবং যতদিন আমি জীবিত থাকবো ততদিন নামাজ পড়া ও জাকাত আদায় করার জন্য আমাকে নির্দেশ করেছেন’।
আল্লাহর রাস্তায় যা-ই খরচ করা হবে তা আল্লাহর কাছে করযে হাসান (ধার) হিসেবে মওজুদ থাকবে। এক কথায় এটা দ্বারা ঠিক আল্লাহকে ধার দেয়া হয়, আর আল্লাহ মানুষের কাছে ঋণী হন। অনেক স্থানে একথাও বলা হয়েছে যে, আল্লাহর রাস্তায় তোমরা যা কিছু দেবে তার বিনিময় দেয়ার দায়িত্ব আল্লাহর, তিনি তোমাদের শুধু ততটুকু পরিমাণই ফিরিয়ে দেবেন না; তদপেক্ষা অনেক বেশি পরিমাণ দান করবেন।
রাসূল (সা.) দুজন স্ত্রীলোকের হাতে স্বর্ণের কংকন দেখে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তারা জাকাত আদায় করে কিনা। একজন উত্তরে বললো না। হযরত (সা.) বললেন, জাকাত আদায় না করলে কিয়ামতের দিন তোমার হাতে আগুনের কংকন পরতে তুমি রাজী হবে কি? উম্মে সালমা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তাঁর কাছে পাঁজেব নামক এক প্রকার স্বর্ণের অলংকার ছিল। তিনি রাসূল (সা.)কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, এটা কি সঞ্চিত ধনের শামিল? রাসূল (সা.) বললেন, এর পরিমাণের ওপর যদি জাকাত ফরয হয় আর তা থেকে জাকাত আদায় করা হয়; তবে ওটা নিষিদ্ধ সঞ্চয় নয়। এ উভয় হাদীস থেকে জানা যায় যে, সোনা-রূপার অলংকার হলেও তাতে জাকাত ফরয হবে।
কোরআন পাকে জাকাতের অর্থ ব্যয়ের ৮টি খাত উল্লিখিত হয়েছে-
১. গরীব : যাদের কাছে কিছু না কিছু ধন-সম্পদ আছে কিন্তু তা তাদের যাবতীয় প্রয়োজেন পূর্ণ করার পক্ষে যথেষ্ট নয়, খুবই টানাটানির ভেতর দিয়ে যাদের জীবন অতিবাহিত হয়, তদুপরি কারো কাছে কিছু চাইতেও পারে না, এরা গরীব।
২. মিসকীন : সহায়-সম্বলহীন হৃতসর্বস্ব ব্যক্তি যার নিকট নগদ অর্থ বলতে কিছুই নেই পরের কাছে হাত পাততে বাধ্য হয় তারাই মিসকীন।
৩. জাকাত বিভাগের কর্মচারী : ইসলামী রাষ্ট্র জাকাত আদায়ের জন্য যাদেরকে কর্মচারী নিযুক্ত করবে, তাদেরকেও জাকাতের অর্থ থেকেই বেতন দেয়া হবে।
৪. যাদের মন রক্ষা করতে হয় : ইসলামের সহায়তার জন্য কিংবা ইসলামের বিরোধিতা বন্ধ করার জন্য যাদেরকে টাকা দেয়ার প্রয়োজন তারা এর অন্তর্ভুক্ত। যাতে তাদের অন্তর ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে। সেই সকল নও-মুসলিমও এর অন্তর্ভুক্ত জাতির সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে মুসলমানদের সাথে মিলিত হবার কারণে বেকার সমস্যা বা আর্থিক অনটনে পড়ে গেলে তাদের সাহায্য করা মুসলমানদের একটি জাতীয় কর্তব্য।
৫. গোলাম ও কয়েদীদের মুক্তি বিধান : যে ব্যক্তি দাসত্ব শৃঙ্খলে বন্দি হয়ে আছে এবং যে মুক্তি পেতে চায়, তাকেও জাকাতের অর্থ দেয়া যায়। উক্ত অর্থের বিনিময়ে সে মালিকের দাসত্ব শৃঙ্খলা থেকে নিজেকে মুক্ত করে নেবে। বর্তমানে যেসব লোক কোন ব্যাপারে জরিমানা আদায় করতে অক্ষম বলে কয়েদ ভুগতে বাধ্য হয়, জাকাতের অর্থ দিয়ে তাদের মুক্তি বিধান করা যেতে পারে।
৬. ঋণী ব্যক্তির ঋণ শোধ : যেসব লোক ঋণী অথবা ঋণ আদায় করার সম্বল যাদের নেই, তাদেরকেও জাকাতের টাকা দ্বারা ঋণ ভার থেকে মুক্তি দেয়া যাবে।
৭. আল্লাহর পথে : যারা আল্লাহর পথে বিভিন্নভাবে জিহাদরত তাদের সার্বিক সাহায্যার্থে জাকাতের অর্থ প্রদান করা যাবে। নবী করীম (সা.) বলেছেন যে, ধনী ব্যক্তির পক্ষে জাকাত গ্রহণ জায়েয নয় কিন্তু ধনী ব্যক্তিই যদি জিহাদের জন্য সাহায্য গ্রহণ করতে বাধ্য হয়, তবে তাকেও জাকাত দিতে হবে।
৮. পথিক-প্রবাসী : ধনী ব্যক্তি পথে বা প্রবাসে অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়ে, বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছার মত কোন সম্বল তার সঙ্গে নেই। তবে তাকে জাকাতের টাকা দেয়া যাবে।
কোন ব্যক্তি নিজের পিতা বা পুত্রকে জাকাত দিতে পারে না, স্বামী স্ত্রীকে এবং স্ত্রী স্বামীকে জাকাত দিতে পারবে না। যেসব নিকটাত্মীয়ের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব রয়েছে; যারা উত্তরাধীকারী, তাদেরকে জাকাত দেয়া যাবে না। উত্তরাধীকারী ছাড়া নিকট-আত্মীয় জাকাত পাবার অধিকারী অন্যান্য লোকদের অপেক্ষা বেশি স্বীকৃত হবে। জাকাত কেবল মুসলমানই পেতে পারে। অমুসলমান গরীবকে সাধারণ দান-খয়রাত করা যাবে।
জাকাত ওই সব লোকের ওপর ওয়াজিব হয় যাদের নিকট সাড়ে ৭ তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে ৫২ তোলা রৌপ্য অথবা তৎসমান অর্থ প্রয়োজনের অতিরিক্ত এক বছর যাবৎ জমা আছে। দরিদ্র, অসহায় ও মিসকিনদের সুবিধা বিবেচনায় রুপার মূল্যই জাকাত ওয়াজিব হওয়ার ক্ষেত্রে বিবেচনা করা উচিৎ।
ইসলামী সোনালী শাসনকালের ইতিহাসে এমন এক সময় ছিল যখন জাকাত নেয়ার মতো লোক ছিল না। শাসকবর্গ জাকাতের অর্থ জাকাত খাতভুক্ত কল্যাণমূলক কাজে ব্যয়ের জন্য সরকারি কোষাগারে জমা রাখত। এখনও সে পরিবেশ আসতে পারে, যদি জাকাতভিত্তিক অর্থনীতি এবং সুষম বণ্টননীতি নিশ্চিত করা যায়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন