শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

আউটসোর্সিংয়ের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৮ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০২ এএম

প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, দেশের তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) ও প্রযুক্তি খাতটি খুব দ্রæত সম্প্রসারিত হওয়ায় এ খাতের আয় খুব অল্প সময়ের মধ্যে গার্মেন্ট খাতের আয়কে ছাড়িয়ে যাবে। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিআইসিসি হলে তিন দিনব্যাপী ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেছেন। তিনি আরো বলেছেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে আমাদের দেশেও ফাইভ-জি প্রযুক্তি চালু হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের এই মেয়াদেই তা চালু করা হবে। আমরা আমাদের গত আমলে ফোর-জি, তার আগে থ্রি-জি চালু করেছি। ফাইভ-জি চালু করতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সজীব ওয়াজেদ জয়ের এই বক্তব্য নিঃসন্দেহে অত্যন্ত আশাপ্রদ। সারাবিশ্বে প্রযুক্তির অব্যাহত উৎকর্ষ ও অগ্রগতির সাথে আমাদের তাল মিলিয়ে চলার বিকল্প নেই। প্রযুক্তির এ যুগে কোনো কিছুই আর ধরাছোঁয়ার বাইরে নয়। তরুণ-শিক্ষিত সমাজ থেকে শুরু করে প্রায় সবশ্রেণীর মানুষ ক্ষেত্রটির সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েছে এবং ব্যাপকভাবে উপকৃত হচ্ছে। ব্যবসা, বাণিজ্য থেকে শুরু করে তথ্যের আদান-প্রদান এবং কর্মসংস্থানের ব্যাপক কর্মযজ্ঞ এ মাধ্যমে চলছে। এ খাতের রফতানি থেকে প্রতি বছর দেশ এক বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করছে। আধুনিক বিশ্বের সাথে সঙ্গতি রেখে ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধি করা গেলে তা দেশের এক নম্বর রপ্তানি খাতে পরিণত হতে খুব বেশি সময় লাগবে না।

দেশে ইন্টারনেটভিত্তিক কর্মকান্ড ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্য ও আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে উপার্জনের ক্ষেত্র ক্রমবর্ধমান হারে দ্রæত গতি লাভ করছে। বিপুল মানুষ এ মাধ্যমে জড়িয়ে উপকৃত হচ্ছে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, এই মাধ্যমে বিশ্বের বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে এবং উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অ্যামাজন এখন সারাবিশ্বে বৃহৎ এবং ধনী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও অনলাইন ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে। বলা হয়, এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে বিশ্ব অর্থনীতির বড় অংকের অর্থ রয়েছে, যা আগামীতে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করবে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এক সময় অকার্যকর হয়ে যেতে পারে। প্রযুক্তির এই উৎকর্ষ এবং অগ্রগতিকে উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের দেশেও ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি বড় অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। পাশাপাশি অসংখ্য অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে এবং নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান যুক্ত হচ্ছে। ব্যক্তিগত পর্যায়েও অনেকে এ মাধ্যমে ঘরে বসে ব্যবসা পরিচালনা করছে। অনেক গৃহিনীও তাদের অবসর সময়ে অনলাইন ব্যবসা করছে। এ ধরনের কত সংখ্যক মানুষ বা প্রতিষ্ঠান জড়িয়ে রয়েছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান জানা নেই। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য যেমন হচ্ছে, তেমনি কর্মসংস্থানও হচ্ছে। প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে পণ্য ডেলিভারি দেয়ার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এর ফলে ক্রেতারা যানজট এড়িয়ে বাসায় বসে কাক্সিক্ষত পণ্য সহজে ক্রয় করতে পারছে। শুধু ব্যবসা-বাণিজ্যই নয়, আউটসোর্সিংয়েরও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। শিক্ষিত তরুণ প্রজন্ম এমনকি একজন শিক্ষার্থীও পড়াশোনার পাশাপাশি উপার্জন করছে। নিজের পড়ার খরচ চালানো এবং পরিবারকে সহযোগিতা করতে পারছে। অনেকে এর মাধ্যমে স্বাবলম্বী হচ্ছে। তবে যারা ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে এ খাত থেকে উপার্জন করছে, তাদের আইডেন্টিটি সংকট রয়েছে। পেশা হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে না। অনেকটা টিউশনি করার মতো হয়ে গেছে। এর মাধ্যমে উপার্জন করা গেলেও পেশা বলা যায় না। যেহেতু ইন্টারনেটভিত্তিক এই ফ্রিল্যান্সিং এবং আউটসোর্সিং ব্যাপক লাভ ও উপার্জনের একটি শক্তিশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে, তাই এর সাথে যারা জড়িত তাদেরকে একটি প্ল্যাটফর্মে আনা জরুরী। ডাটাবেজের মাধ্যমে তাদেরকে নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মে আনা যায়। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্পবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বেশ কয়েক মাস আগে এ বিষয়টি উপলব্ধি করে এ প্রযুক্তির সাথে জড়িতদের একটি ডাটাবেজ তৈরি করার কথা বলেছেন। এ কাজটি করা হলে এর সাথে জড়িতরা একদিকে পেশাগত স্বীকৃতি পাবে, অন্যদিকে এটি দেশের অন্যতম শক্তিশালী একটি অর্থনৈতিক খাত হিসেবে পরিচিতি পাবে। তবে এক্ষেত্রে শক্তিশালী নেটওয়ার্কের বিকল্প নেই। দেশে ফোর-জি কার্যকর রয়েছে বলে বলা হচ্ছে এবং বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলো তা বাস্তবায়নের কথা বলে ইচ্ছা মতো ব্যবসা করছে। অথচ বাস্তবের সাথে তার কোনো মিল নেই। ফোর-জি’র গতি দূরে থাক, তাদের নেটওয়ার্ক টু-জি, থ্রি-জি’র মতোই ধীর গতির হয়ে রয়েছে। এটা গ্রাহকদের সাথে একধরনের প্রতারণা ছাড়া কিছুই নয়। বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, কাগজে-কলমে ফোর-জি’র কথা বলা হলেও তা বাস্তবে দৃশ্যমান নয়। গ্রাহকরা নির্দিষ্ট মূল্যে ডাটা কিনে ঠিকমতো নেটওর্য়াক না পেলেও মোবাইল কোম্পানিগুলো ঠিকই টাকা কেটে নিচ্ছে। এ নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে ক্ষোভ-অসন্তোষ বিরাজ করলেও প্রতিষ্ঠানগুলো তা আমলে নিচ্ছে না। তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই।

দেশের অমিত সম্ভাবনাময় তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রটিকে ডাটাবেজের মাধ্যমে এক প্ল্যাটফর্মে এনে একটি পরিপূর্ণ ক্ষেত্রে পরিণত করা অত্যন্ত জরুরি। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের উদ্যোগে তথ্যপ্রযুক্তি যুগের যে সূচনা এবং প্রসার লাভ করছে, তা যথাযথভাবে এগিয়ে নিতে যুগোপোযোগী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। মোবাইল অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে সঠিক মাত্রায় নিরবিচ্ছিন্নভাবে নেটওয়ার্ক বজায় রাখে এবং তাদের ফাঁকিবাজি বন্ধ করা হয়, এ ব্যাপারে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। আমরা আশা করব, ফোর-জি বলবৎ থাকার যে কথা বলা হচ্ছে, তার সেবা গ্রাহকদের নিশ্চিত করা হবে। এই নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করা হলে ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক চালুর প্রক্রিয়াটি সহজ হয়ে যাবে। ফোর-জি, ফাইভ-জি কার্যকরের যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। দেশে এখন যে হারে ইন্টারনেটভিত্তিক ফ্রি ল্যান্সিং ও আউটসোর্সিংয়ে তরুণ প্রজন্ম জড়াচ্ছে এবং অর্থনীতির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে, তা এগিয়ে নিতে দ্রুত গতির নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন