পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই বইমেলা হয়। এসব মেলার উদ্দেশ্য থাকে বই বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করা। তবে বাঙালীর ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে জড়িত অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্দেশ্য শুধুই বই বিক্রি নয়, বরং এর সাথে জড়িয়ে আছে বাঙালী সমাজের উত্থান, ভাষা আন্দোলন ও জাতীয় চেতনার গল্প। তাই এ মেলায় চেষ্টা করা হয় বাঙালীর ইতিহাস, ঐতিহ্যের বিষয়গুলোর সম্মেলন ঘটানোর। অমর একুশে গ্রন্থমেলার বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে গেলে যে কারো চোখে পড়বে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তরের স্টলটি। স্টলটিকে সাজানো হয়েছে পুরাকীর্তির বিভিন্ন নিদর্শন দিয়ে। এবার এতে স্থান পেয়েছে বঙ্গবন্ধুর পৈতৃক নিবাসের রেপ্লিকা।
প্রতিবছর প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তর দেশের পুরাকীর্তির আদলে তাদের স্টল সাজায়। গত বছর স্টল সাজানো হয়েছিল রোজ গার্ডেনের আদলে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে এবার তার পৈতৃক নিবাসের আদলে প্রতœতত্তে¡র স্টল সাজানো হয়েছে। সাদা চুন আর লাল সুড়কি দিয়ে বানানো বাড়িটি চোখে পড়ার মতো। বঙ্গবন্ধুর পৈতৃক নিবাসের বাড়িটি এখন ঐতিহাসিক পুরাকীর্তি হওয়ায় তার দেখবালের দায়িত্ব পালন করছে প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তর। বাড়িটি দেখভাল করছে।
সরজমিনে স্টল পদক্ষিণ করে দেখা যায়, স্টলের গায়ে বঙ্গবন্ধুর জন্ম পরিচয় লিলিবদ্ধ করা আছে। লেখা আছে, আমার জন্ম হয় এই টুঙ্গিপাড়া শেখ বংশে। শেখ বোরহান উদ্দিন নামে এক ধার্মিক পুরুষ এই বংশের গোড়াপত্তন করেছেন বহুদিন পূর্বে। শেখ বংশের যে একদিন সুদিন ছিল তার প্রমাণস্বরূপ মোগল আমলের ছোট ছোট ইটের দ্বারা তৈরি চকমিলান দালানগুলি আজও আমাদের বাড়ির শ্রীবৃদ্ধি করে আছে। বাড়ির চার ভিটায় চারটি দালান। বাড়ির ভিতরে প্রবেশের একটা মাত্র দরজা, যা আমরাও ছোট সময় দেখেছি বিরাট একটা কাঠের কপাট দিয়ে বন্ধ করা যেতো। একটা দালানে আমার এক দাদা থাকতেন। এই বংশের অনেকেই এখন এ বাড়ির চারপাশে টিনের ঘরে বাস করেন। আমি এই টিনের ঘরের এক ঘরেই জন্মগ্রহণ করি। আমাদের বাড়ির বাড়ির দালানগুলির বয়স দুই শত বৎসরেরও বেশি হবে।
এদিকে বইমেলায় আগত দর্শনার্থীদের এই স্টলের সামনে ভিড় জমাতে দেখা গেছে। তারা বলছেন বিচিত্র্য সাজসজ্জা স্টলটিকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে। মেলায় ঘুরতে আসা ঢাবি অধিভুক্ত রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী ইডেন মহিলা কলেজের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী লিয়া বলেন, ব্যতিক্রমী সাজসজ্জার কারণে এই স্টলটিকে অন্য সব স্টল থেকে আলাদা লাগছে। বঙ্গবন্ধুর পৈত্রিক নিবাসের আদলে তৈরী করাই মেলায় আগতরা এর মাধ্যমে ইতিহাস জানতে পারছে।
প্রতিবছর স্টলটিতে গবেষকদের জন্য বিভিন্ন বিশ্লেষণধর্মী বই স্থান পেলেও গত বছর প্রথম ইতিহাসের সাথে সাধারণ পাঠক ও শিশু-কিশোরদের পরিচয় করিয়ে দিতে প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তরের উদ্যোগে নিয়ে আসা হয়েছে ‘ছোটদের প্রত্মতত্ত্ব’ নামক বই। অধিদপ্তরের অফিসার জিসান আহমেদ ও মো. খায়রুল বাসার স্বপনের রচনায় সহজ ভাষায় বিভাগভিত্তিক ঐতিহাসিক স্থানসমূহ সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত এই বইটিই বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানালেন প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তরের গ্রন্থাগারিক এম এ হামিদ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন