মেঘনা তীরবর্তী নোয়াখালীর উপক‚লীয় ও দ্বীপাঞ্চলে সবুজ বিপ্লবের হাতছানি দিচ্ছে। ধান ও রবিশস্য উৎপাদনে কৃষকরা সফলতা পাচ্ছে। অপার সম্ভাবনাময় এ অঞ্চল ঘিরে আশাতীত সাফল্য অপেক্ষা করছে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের দিক নির্দেশনায় কৃষকরা বৈজ্ঞানিক উপায়ে চাষাবাদের দিকে ঝুঁকছে। যার সুবাদে সাগরের পলিমাটি বিধৌত নোয়াখালীর দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি খাতকে আরো সমৃদ্ধ করে তুলছে।
কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলার দক্ষিণাঞ্চল বিশেষ করে সদর, সুবর্ণচর, হাতিয়া উপজেলায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী, ১৩ হাজার হেক্টরে চিনাবাদাম, ৫ হাজার ৫শ’ হেক্টরে তরমুজ, ৩ হাজার হেক্টরে ফেলন ডাল ও ৬ হাজার হেক্টরে সবজী চাষ হয়েছে। এরমধ্যে সূর্যমুখী চাষ লাভজনক বিধায় কৃষকরা আরো অধিক পরিমাণ ভ‚মিতে সূর্যমুখি চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। নোয়াখালীতে ফসলী জমির পরিমাণ ২ লাখ ২৫ হাজার হেক্টর। প্রতি বছর চাষাবাদযোগ্য ভ‚মির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে মেঘনার বুকে চর জেগে ওঠায় প্রতি বছর আরো দেড় থেকে দুই হাজার হেক্টর ফসলী জমি যুক্ত হচ্ছে।
গত মৌসুমে নোয়াখালীতে ৭৩ হাজার হেক্টরে ইরি বোরো চাষ হলেও চলতি বছর ৭৫ হাজার হেক্টরে চাষ হয়েছে। এ বছর ৩ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সম্ভাবনা দেখছে কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগ। এছাড়া সা¤প্রতিক বছরগুলোতে নতুন ফসল হিসেবে সূর্যমুখী, বিটবেগুন, তরমুজ, আখ, সরিষা চাষ হচ্ছে কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগের তত্ত্বাবধানে। এতে শতভাগ সফলতা পাচ্ছে কৃষকরা।
নোয়াখালীর উপক‚লীয় ও দ্বীপাঞ্চলের লবণাক্ত এলাকায় লবনসহিষ্ণু ধান, সূর্যমুখী, মুগডাল আবাদের ফলে পতিত জমিগুলো ক্রমান্বয়ে চাষাবাদের আওতায় আসছে। যার সুবাদে প্রতি বছর এ জেলায় কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছেন। অপরদিকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষি জমির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেলেও নোয়াখালীতে প্রতি বছর কৃষি জমির পরিমাণ দেড় থেকে দুই হাজার হেক্টর বৃদ্ধি পাচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলে প্রতি বছর যে পরিমাণ ভূমি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে তার অন্তত দশগুণ ভূমি নদীগর্ভে জেগে উঠছে ।
এক সময় চীনের দুঃখ হোয়াং হো নদী এখন আশির্বাদে পরিণত হয়েছে। তেমনিভাবে নোয়াখালী বাসীর দুঃখ ’নোয়াখালী খাল’ খননের মাধ্যমে ২০২২ সালের পর আশির্বাদে পরিণত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগের তত্ত্বাবধানে ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৫ কিলোমিটার খালের সংস্কার কাজ চলছে। প্রকল্পটির কাজ সম্পন্ন হলে আরো ২৫ হাজার হেক্টর জমি চাষের আওতায় যুক্ত হবে।
মেঘনা বেষ্টিত হাতিয়া উপজেলার বর্তমান আয়তন ৪৫০০ হাজার বর্গ কিলোমিটার। হাতিয়াদ্বীপের চর্তুদিকে ছোটবড় মিলিয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক ডুবোচর ও জেগে ওঠা চর রয়েছে। এতে করে ক্রমান্বয়ে ভ‚মির আয়তন বৃদ্ধি পাচ্ছে। জেগে ওঠা ১৮টি চরে ধান, তরিতরকারী ও রবিশস্য চাষাবাদ হচ্ছে। শুধুমাত্র হাতিয়া উপজেলায় উৎপাদিত ধান, চাল, তরকারী ও রবিশস্য স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হচ্ছে। মূলত বঙ্গোপসাগরের পলিমাটি সমৃদ্ধ নোয়াখালীর উপকূলীয়, হাতিয়া দ্বীপাঞ্চল ও চরাঞ্চল চাষাবাদের জন্য সহায়ক বলে স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানিয়েছেন ।
কৃষি সেক্টরে সম্ভাবনাময় উপকূলীয় অঞ্চলে সরকারী উদ্যোগে কৃষি নির্ভর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। এরমধ্যে সুগার ক্রপস গবেষণা উপকেন্দ্র ,বিএডিসি খামার, কৃষি গবেষণা আঞ্চলিক কার্যালয় ও বাংলাদেশ আনবিক কৃষি গবেষনা (বিনা) উপকেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে এ অঞ্চলে হাইব্রিড তরিতরকারী ও ফলমূল উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। এখানে খাটো জাতের নারিকেল (ভিয়েতনাম) ও বারী মাল্টাও চাষ হচ্ছে। কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগ লবণাক্ততা, পানিবদ্ধতা, প্রাকৃতিক দূর্যোগ, কৃষি শ্রমিকের স্বল্পতা, বর্গাচাষী দিয়ে জমি চাষ এবং জমি যতেœর প্রতি বর্গাচাষীদের অনীহা অন্তরায় হিসেবে দেখা হচ্ছে। এসব সমস্যা দূর হলে কৃষি বিপ্লবে নোয়াখালী জেলা মডেল হিসেবে স্থান করে নেবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন