মোহাম্মদ আবু নোমান
১৯৮৭ সালের ১১ জুলাই পৃথিবীর জনসংখ্যা ৫০০ কোটিতে উন্নীত হয়। এর পর থেকে প্রতিবছর ১১ জুলাই বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালন করা হয়। আজ পৃথিবীব্যাপী ক্রমেই জনসংখ্যা বেড়েই চলেছে। জাতিসংঘের ইকোনমিক অ্যান্ড সোস্যাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগ জানিয়েছে, ২০২০ সালে ৭৬৭ কোটি ৪৮ লাখ ৩৩ হাজার, ২০২৫ সালে ৮০১ কোটি ১৫ লাখ ৩৩ হাজার, ২০৩০ সালে ৮৩০ কোটি ৮৮ লাখ ৯৫ হাজার, ২০৩৫ সালে ৮৫৭ কোটি ৫ লাখ ৭০ হাজার, ২০৪০ সালে ৮৮০ কোটি ১১ লাখ ৯৬ হাজার, ২০৪৫ সালে ৮৯৯ কোটি ৬৩ লাখ ৪৪ হাজার এবং ২০৫০ সালে বিশ্বজনসংখ্যা ৯১৪ কোটি ৯৯ লাখ ৮৪ হাজারে গিয়ে ঠেকবে। কিন্তু এত মানুষ দুনিয়ার কোত্থেকে আসছে, আসবে? তারা কি আসমান থেকে পড়েছে, না জমিন ভেদ করে উঠে এসেছে? সবাই স্বীকার করবেন যে, এর কোনোটিই হয়নি। এ সংখ্যা বৃদ্ধি কি হঠাৎ করে ঘটেছে? তাও তো নয়। দুনিয়ার লোকসংখ্যা বৃদ্ধি একটা ক্রমিক পদ্ধতিতে হয়ে আসছে এবং হচ্ছে। যেমনÑ আজকের এ সংখ্যাটি বিগত বছরের এ দিনটিতে নিশ্চয়ই ছিল না। আজ থেকে একশ’, দুশ’, চারশ’ বছর পূর্বে লোকসংখ্যা নিশ্চয়ই আজকের তুলনায় অনেক কম ছিল। আর যতই পেছনের দিকে যাওয়া যায়, লোকসংখ্যা ততই কম ছিল বলে নিঃসন্দেহে ধরে নিতে হয়।
ইতিহাসের বিভিন্ন অধ্যায়ে কত দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক, অর্থনীতিবিদ মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি প্রতিরোধ করার জন্য কতই না যুক্তি, পরামর্শ, প্রস্তাবনা পেশ করেছেন, আর কত সরকার তা সত্য মনে করে জনসংখ্যা প্রতিরোধে কার্যকর(?) পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর জন্য আবিষ্কৃত কতই না প্রক্রিয়া অবলন্বিত হয়েছে। কত মানুষই সদ্যজাত সন্তানকে জীবন্ত প্রোথিত করেছে। অগণিত কিংবা তার পূর্বেই সংহার করেছে তার ইয়াত্তা নেই। কিন্তু কি আশ্চর্য এতসব উপায় অবলম্বন সত্ত্বেও জনসংখ্যা হ্রাসের পরিবর্তে দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাজার রকমের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি একদিকে এবং অপরদিকে অতীতে এবং বর্তমানেও যুদ্ধবিগ্রহ, হত্যা, জাতিগত, বর্ণগত দ্বন্দ্ব ও সহিংসতাসহ ব্যাপক মানুষ হত্যা চলছে। এরপরও কোনোক্রমেই জনসংখ্যার ক্রমবৃদ্ধি রোধ করা যায়নি, যাচ্ছে না। তার কারণ কি? হ্যাঁ, নিশ্চয়ই তার একটা কারণ আছে এবং সে কারণটি এতই প্রবল যে, দুনিয়ার মানুষ যতদিন থাকবে, ততদিন সে কারণটিও অপ্রতিরোধ্য হয়ে থাকবে; পরিভাষায় তাকে বলা হয়, মানবীয় দৈহিক, মানসিক প্রকৃতি ও মেজাজ বা ন্যাচার। কারণ মানুষের প্রকৃতি হলো- সন্তান জন্মদান ও সন্তানের মা-বাবা হওয়ার প্রচ- আকুলতা যা একান্তই স্বাভাবিক ব্যাপার। মানব বংশের ধারা এই প্রকৃতির বলেই স্থায়ী হয় ও অব্যাহত ধারায় সম্মুখের দিকেই চলতে থাকে।
সামাজিক জীবনের সুষ্ঠুতা নির্ভর করে পারিবারিক জীবনের সুষ্ঠুতার ওপর। পরিবার রাষ্ট্রের প্রথম স্তর। সামগ্রিক জীবনের প্রথম ভিত্তি প্রস্তর পরিবারেরই বিকশিত রূপ রাষ্ট্র। আবার সুষ্ঠু পারিবারিক জীবন একটি সুষ্ঠু রাষ্ট্রের প্রতীক। পরিবারকে বাদ দিয়ে যেমন সমাজের কল্পনা করা যায় না তেমনি সমাজ ছাড়া রাষ্ট্রও অচিন্তনীয়। তিনতলাবিশিষ্ট প্রাসাদের তৃতীয় তলা নির্মাণের কাজ প্রথম ও দ্বিতীয় তলা নির্মাণের পরই সম্ভব। তার পূর্বে নয়। একটি প্রাসাদের দৃঢ়তা, স্থায়িত্ব তার ভিত্তির ও স্থায়িত্বের ওপর নির্ভরশীল। সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে মানব সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রাথমিক ভিত্তি এই পরিবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবার ও সমাজের সুসংবদ্ধ দৃঢ়তার ওপর রাষ্ট্রের দৃঢ়তা ও স্থায়িত্ব তেমনি নির্ভরশীল।
গত ৪০ বছরে আমাদের দেশের জনসংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। বহুল জনসংখ্যার এই পরিস্থিতিতে দেশে যে সামগ্রিক সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, তা মহাদুর্গতির চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়। সর্বোপরি বিশ্বজনসংখ্যা বোমার রূপ ধারণ করছে। অত্যধিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে মানুষের মৌলিক চাহিদা অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থানসহ রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা হ্রাস পাচ্ছে। ফলে সমাজে বাড়ছে দারিদ্র্য, বেকারত্ব, বাসস্থান সংকট, খাদ্য সমস্যা, অপরাধ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, অপুষ্টি, পতিতাবৃত্তি, ভিক্ষাবৃত্তি, মাদকাসক্তি, নিরাপত্তাহীনতাসহ আরো নানাবিধ সমস্যা। দারিদ্র্য ও অশিক্ষাও এর পেছনে মূল ভূমিকা রাখছে। শঙ্কার ব্যাপার এতটা থাকত না, যদি এ বর্ধিত জনসংখ্যাকে কার্যকর জনশক্তিতে রূপান্তরের একটা যথাযথ সুপরিকল্পিত উদ্যোগ থাকত। পরিতাপের সঙ্গে বলতে হয়, এই জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে পরিণত করার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও অন্য সব ক্ষেত্রের মতো এ ক্ষেত্রটিতেও আমাদের তেমন কোনো সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নেই। অনাগত এ রকম অনিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতির ভবিষ্যৎ নিয়ে আসলে আমরা কতটা ভাবছি? এই বর্ধিত জনগোষ্ঠীকে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করার সুপরিকল্পিত উদ্যোগই বা কতটা নেয়া হচ্ছে।
বলা হয়ে থাকে, ‘তারুণ্যে বিনিয়োগ, আগামীর উন্নয়ন’। তাই জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তর করতে পারলেই দেশের সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। বেকারদের প্রশিক্ষণ ও যুগোপযোগী কর্মসংস্থানের বিভিন্ন উদ্যোগ এবং প্রজেক্ট ঘোষণা ও বরাদ্দ দেয়ার পর যথাযথ তদারকি গ্রহণ না করলে গৃহীত উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের সফল বাস্তবায়ন হবে না। দেশে রয়েছে ৩০ হাজার স্যাটেলাইট ক্লিনিক, পরিবার পরিকল্পনা এবং মা ও শিশুস্বাস্থ্য বিষয়ে সেবা ও পরামর্শ প্রদান কেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা খাতের বিভিন্ন ব্যবস্থাপনা। যেখানে হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। আমরা এসব উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের গুরুত্বের ব্যাপারে শুধুই বক্তব্য-বিবৃতি ও সভা-সেমিনার করছি। কিন্তু খাতাকলমে আমরা যতই উন্নয়ন করছি, কর্মক্ষম বেকারদের অধিক চাপে সেসব উন্নয়ন মলিন হয়ে যাচ্ছে। ফলে দেশ থেকে বেকারত্ব, দারিদ্র্য বিমোচন করার কাজও কঠিন হয়ে পড়ছে। ফলে সমাজে দেখা দিচ্ছে নানাবিধ সামাজিক অপকর্ম। মূলত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণই আমাদের দেশের জন্য হতে পারত সরকারের অন্যান্য গৃহীত উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের চেয়ে কল্যাণকর পদক্ষেপ।
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ তরুণ প্রজন্ম। এদের শিক্ষা, সুস্বাস্থ্য ও কর্মদ্যোগের ওপর নির্ভর করছে দেশের ভবিষ্যৎ সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন। ভবিষ্যতের কা-ারি হিসেবে তাই এই তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ, সুশিক্ষিত ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হিসেবে গড়ে তোলা আবশ্যক। কিশোরকাল হচ্ছে জীবন গঠনের সঠিক ও উপযুক্ত সময়। কিশোর-কিশোরীরা যাতে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে সে জন্য তাদের শৈশব থেকেই দেশপ্রেমের মহান শিক্ষাসহ সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে হবে। তাদের সামাজিক ও নৈতিক শিক্ষার পাশাপাশি প্রজনন স্বাস্থ্যবিষয়ক শিক্ষা নিশ্চিত করাও জরুরি। তরুণ সম্প্রদায়ের শিক্ষা, কারিগরি জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির কর্মস্থান জরুরি। কারিগরি পর্যায়ে বিভিন্ন সেক্টরে মানব সম্পদের ব্যাপক চাহিদা ও সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এবং শিক্ষিত বেকারে পরিপূর্ণ থাকলেও সমস্যা সমাধানে যেন কোনো উদ্যোগ নেই। অধিকার বঞ্চিতদের অধিকার পুনঃ প্রতিষ্ঠা ও বেকারকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে সম্পদে পরিণত করতে হবে। সুতরাং দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য জনসংখ্যাকে দক্ষ জনশক্তি তথা মানব সম্পদে পরিণত করা ছাড়া গত্যন্তর নেই।
দেশের অধিকাংশ মানুষ শিশু ও তরুণ বয়সী। যেখানে ২৫ বছর বয়সীরা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫৫ শতাংশ, সেখানে ৬৫ বছরের বেশি বয়সীরা মাত্র ৩ শতাংশ। তবে একটা কথা বলে রাখা প্রয়োজন, একমাত্র পরিবেশ বা জনসংখ্যার কারণেই কোনো দেশ বা সভ্যতা অতীতে ব্যর্থ হয়েছে এমন কোনো উদাহরণ জানা নেই। সব সময়ই এর সাথে অন্যান্য আরও কিছু কারণ জড়িত থাকে। মানব সম্পদ উন্নয়নে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করে যদি এদেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে সুস্থ, শিক্ষিত, দক্ষ, অভিজ্ঞ করে গড়ে তোলা যায় তাহলে এ জনসংখ্যা বিশাল মানব সম্পদে পরিণত হতে পারে। অন্যথা অশান্তি বিশৃঙ্খলা, হত্যা, সন্ত্রাস, ধর্ষণের মতো অপকর্ম কমবে না।
আমাদের সংবিধানে দেশের জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ সরকার জনসংখ্যা ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি হাতে নেয়। ২০০৪ সালের জনসংখ্যা নীতি প্রণয়ন করা হয়েছিল কয়েকটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে। বলা হয়েছিল জনসংখ্যা বৃদ্ধি হ্রাস করতে মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্যসেবা, শিশু স্বাস্থ্যসেবা ও প্রজনন সেবা নিশ্চিতকরণ এবং জীবনযাত্রার মানকে আরো উন্নত করা জরুরি। এর লক্ষ্যমাত্রা আজো অর্জিত হয়েছে বলে মনে হয় না। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা, জবাবদিহিতা, দুর্নীতিমুক্ত জনপ্রশাসন এবং যুগোপযোগী পদ্ধতি। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও বেসরকারি অর্গানাইজেশনের কার্যকর এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
আমাদের নগরগুলোতে লোকসংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকাতে বৃদ্ধির হার বেশি। কারণ এখানেই তুলনামূলক সহজে কিছু না কিছু কাজ মেলে। এ ভরসায় শহরমুখী হচ্ছে মানুষ। অন্য কোনো শহরের প্রতি ঢাকার মতো আকর্ষণ নেই। এর ফলে নাগরিক সুযোগ-সুবিধার ওপর প্রচ- চাপ সৃষ্টি হচ্ছে।
বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ তাদের নিজ নিজ দৃষ্টিকোণ থেকে মানবসম্পদের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। অর্থনীতিবিদদের ভাষায়- The greatest natural resource of our country is its people. আধুনিক অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, অন্যান্য সম্পদের মতো মানুষও জাতীয় সম্পদ। বিভিন্ন অর্থনৈতিক সমীক্ষা ও বিশ্লেষণ থেকে দেখা গেছে, সমাজে বসবাসকারী মানুষের উন্নয়ন ছাড়া সামষ্টিক অর্থনীতির উন্নয়ন কোনোক্রমেই সম্ভব নয়। সুতরাং মানবসম্পদ উন্নয়ন সব উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি। এখন মানব সম্পদ উন্নয়ন কি? আধুনিক অর্থে মানবসম্পদ উন্নয়ন হলো মানুষের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ। অর্থাৎ উৎপাদন কর্মে প্রয়োজনীয় উপকরণ হিসেবে মানুষের কারিগরি দক্ষতা বা ব্যবহারের উপযোগিতা বৃদ্ধিকরণ।
চীনে হাউজহোল্ড ইকোনমি খুব জনপ্রিয়, যেখানে প্রতিটি পরিবার কিছু না কিছু শিল্প বা সেবা উৎপাদন করছে। এতে দেশের প্রয়োজন মিটছে, আবার দেশের বাইরেও যাচ্ছে। আমাদের রয়েছে ১৬ কোটি লোকের ৩২ কোটি হাত। এদের মধ্যে এখন উৎপাদনক্ষম অংশই বেশি। তারা উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পেলে এবং কাজের ব্যবস্থা করা গেলে আমরাও শিল্প বিপ্লবের পাশাপাশি পরিবারভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তুলতে পারব। এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে নারীদের প্রতি। এখন সমাজে নারী ও পুরুষের সংখ্যা মোটামুটি সমান। একসময় পুরুষের সংখ্যা কিছুটা বেশি ছিল। প্রতিটি নারীই যেন হয়ে উঠতে পারে সমাজের সার্বিক বিকাশের কর্মী, সেটা নিশ্চিত করা চাই। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নারী। সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী নারী। স্পিকার নারী। স্কুলে ছাত্র ও ছাত্রী সংখ্যা সমান। কাজেই নারী রাষ্ট্র ও সমাজ কাঠামোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এ জন্য নারীদের ইজ্জত-আব্রুর নিরাপত্তার সাথে স্বতন্ত্র শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
ইসলাম হলো মানবতার জন্য বিশ্বজনীন এক ধর্ম। এ ধর্ম মানুষকে সর্বদা নীতি-নৈতিকতা শিক্ষা দেয়। এই নীতি-নৈতিকতার দ্বারা একজন মানুষ নিজেকে সচ্চরিত্রের অধিকারী করতে পারে। চরিত্রকে সুন্দর করা নবুয়তের একটি অংশ। রাসূল (সা.) বলেন, ‘সৎস্বভাব, ধীর স্থিরতা এবং মধ্যমনীতি অবলম্বন করা হলো নবুয়তের চব্বিশ ভাগের এর ভাগ’। আল্লাহর কাছে ওই ব্যক্তি সর্বোত্তম হবে যে তার নিজ চরিত্রকে সুন্দর করে। এ ব্যাপারে হাদিসে এসেছে, ‘তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে চরিত্রের দিক দিয়ে সুন্দর হয়’।
ইসলাম কর্মপ্রেরণার মাধ্যমে হালাল উপার্জনের প্রতি বিশেষভাবে উৎসাহ প্রদান করেছে। আর এই কর্মপ্রেরণা মানুষকে শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবনযাপন অতিবাহিত করতে বিশেষভাবে সহায়তা করে থাকে। হালাল উপার্জন বলতে আমরা বৈধ উপার্জনকে বুঝে থাকি। প্রত্যেক নবী-রাসূল হালাল উপার্জনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। হযরত আদম (আ.) কৃষিকাজ করতেন, নূহ (আ.) কাঠমিস্ত্রি ছিলেন, ইদ্রিস (আ.) তাঁতী ছিলেন, যাকারিয়া (আ.) ছিলেন কাঠমিস্ত্রি, দাউদ (আ.) ছিলেন কামার, ইব্রাহিম (আ.) ছিলেন কাপড় ব্যবসায়ী এবং মূসা (আ.) এবং মুহাম্মদ (সা.) মেষ চড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করেছেন।
ইসলাম ধর্ম মানবসম্পদ উন্নয়নের প্রতি অত্যধিক গুরুত্বারোপ করে থাকে। সাধারণভাবে বলা হয়ে থাকে, একটি জাতির উন্নতি ঘটে চারটি বস্তুর সমন্বয়ে যা হলো- কর্মদক্ষতা, কর্ম অনুযায়ী কর্ম-সম্পাদন, কর্মক্ষমতা সৃষ্টি এবং ইতিবাচক কর্মস্পৃহা। একটি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য মানবসম্পদ উন্নয়ন অতিগুরুত্বপূর্ণ। মানবসম্পদ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য আবশ্যকীয় মৌলিক উপাদান। প্রচুর অর্থ সম্পদ ও ভৌতসম্পদ থাকা সত্ত্বেও যদি মানবসম্পদের দুষ্প্রাপ্যতা থাকে তাহলে উন্নয়নের প্রক্রিয়া ও গতি স্তিমিত হয়ে পড়ে। মানবসম্পদ উন্নয়নের মুখ্য উপকরণ হলো শিক্ষা। শিক্ষা এমন এক মাধ্যম যার সাহায্যে মানব সম্পদের উন্নয়ন ঘটে। এ কারণেই শিক্ষাকে জাতীয় উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি বলা হয়েছে। শিক্ষা মানুষের জ্ঞান-অভ্যাস, আচরণ ও মূল্যবোধকে প্রভাবান্বিত করে। শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষতা অর্জিত হয়। বলা হয়ে থাকে যে,Education is key for the development. শিক্ষা অর্জনের ব্যাপারে ইসলাম বিশেষভাবে উৎসাহ প্রদান করে থাকে।
আল-কোরআনের প্রথম আয়াত হলো ‘ইকরা’ অর্থাৎ পড়। এ ছাড়াও কোরআন-হাদিসের আরও বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষা অর্জনের ব্যাপারে ইসলাম বিশেষভাবে তাগিদ প্রদান করেছে। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান হতে পারে? জ্ঞানীগণ উপদেশ গ্রহণ করে থাকে’ (যুমার)।
মানবসম্পদ উন্নয়ন একটি প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশের জনগোষ্ঠী একটি বিশাল সম্পদে পরিণত হতে পারে। মানবসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে একটি মানব গোষ্ঠীর সুপ্ত প্রতিভা, প্রচ্ছন্ন শক্তি, লুকায়িত সামর্থ্য, যোগ্যতার প্রসার ঘটে। মানবসম্পদের উন্নয়নের মাধ্যমে মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা পূর্ণ হয়। মানুষকে যেখানে সম্পদ হিসেবে ধরা হয় সেখানে তার অর্থনৈতিক উন্নয়নে মানবসম্পদের উন্নয়ন ঘটে অন্যথায় তা ব্যর্থ হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন