মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ভার্চুয়াল জগতে চলছেই শিক্ষামন্ত্রীর সমালোচনা

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির মুখোশ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ মার্চ, ২০২০, ১২:০০ এএম

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতির মুখোশ পরে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে বরণ করেছে বগুড়া পুলিশ লাইন্স স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু একাডেমিক ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রীকে বরণ করে নেয়ার এমন ছবি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরলে সমালোচনার ঝড় শুরু হয়। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই সমালোচনা এখনো চলছেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও মন্ত্রী সভার বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রীর এমন অনুষ্ঠানে বিরক্ত ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষোভ প্রকাশের পর গতকাল যেসব গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয় সেগুলোতে পাঠকরা তাদের নিজেদের ক্ষোভ তুলে ধরেন।

বঙ্গবন্ধুকে যেমন তেমন ব্যবহার করা নিয়ে এক লেখায় সাংবাদিক প্রভাষ আমিন বলেন, ‘সময় এসেছে কোনটা বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানানো আর কোনটা অবমাননা, তার একটা সীমা নির্ধারণের। গত কয়েকবছর ধরেই বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করার নামে বাড়াবাড়ি করে তাঁকে আসলে অবমাননাই করা হচ্ছে।’

সাবিনা ইয়াসমিন নামের একজন ফেসবুকে লিখেছেন- ‘আর এই দেখা বাকী ছিলো, শিক্ষামন্ত্রীর উপস্থিতিতে একটি অনুষ্ঠান। বুকের ভিতরটা কেমন খা খা করে উঠল। বুদ্ধি হওয়ার পর যখন থেকে বঙ্গবন্ধুকে জানি এই বিশাল মাপের মানুষটারে বুকে লালন করছি চরম শ্রদ্ধার সাথে। সেই মানুষটাকে যখন এভাবে দেখি নিজেকে সান্তনা দেয়ার ভাষা খুঁজে পাইনা! নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নামে একজন লিখেছেন, শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষাবাণিজ্য বন্ধ করতে পারছেন না, কিন্ডার গার্ডেন স্কুলে মাত্রাতিরিক্ত বইয়ের বাণিজ্য ও অতিরিক্ত ফি বন্ধ করতে পারছেন না, বেপরোয়া শিক্ষকদের ক্লাসে ফেরাতে পারছেন না, ক্লাসের পড়া ক্লাসে হচ্ছেনা, প্রাইভেট বাণিজ্য/কোচিং বাণিজ্যের বিষয়ে নির্বিকার, শিক্ষার মান নিয়ে নির্বিকার, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সরকারি স্কুল বাড়ানো নিয়ে নির্বিকার জনগণও উনার উপর বিরক্ত। সবশেষ কথা হলো আমাদের বিরক্তিতে উনার কিছু আসে যায়না !

কাওসার আহমেদ লিখেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে যেকোন কিছু করার আগে সকলকে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। কারণ তিনি আমাদের বড় আবেগের জায়গায় আছেন। মাসুম লিখেছেন, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির কাছ থেকে আমরা এমনটা কখনও প্রত্যাশা করি নাই। পারভেজ লিখেছেন, যারা এই কাজটি করেছেন, তাদের কি আদৌ জ্ঞান-বুদ্ধি আছে, সেটাই ভাবছি। বাবুল লিখেছেন, একজন শিক্ষামন্ত্রীর আরও বিচক্ষণ হওয়া জরুরি। নাবিল লেখেন, মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি কি আস্তে লোপ পাচ্ছে? আরিফুল ইসলাম লিখেছেন, নিন্দা জানানোর ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।

সোয়েব আহমেদ আগের শিক্ষামন্ত্রীর সাথে বর্তমান শিক্ষামন্ত্রীর তুলনা করে লিখেছেন, এর আগে যিনি শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন, নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি জাতীয় পতাকা খচিত কেক কাটতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। আর আমাদের এখনকার শিক্ষামন্ত্রী এটা কি করলেন?

সাংবাদিক সিদ্দিকুর রহমান খান দুই মন্ত্রীর ঘটনা তুলে ধরে লিখেছেন, ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের ১৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যা। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের অডিটরিয়াম। আইডিয়াটা জামাত-বিএনপিপন্থী শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের। শিক্ষামন্ত্রীর সুনজরে থাকা আর চমকে দেয়াই ছিল তাদের লক্ষ্য। টেবিলের ওপর রাখা ৪৬ কেজি ওজনের এক কেক। ৪৬তম বিজয় দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে কাটা হবে কেকটি। ৪৬টি মোমবাতিও প্রস্তুত। কেকের টেবিলের চারপাশে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালকসহ কয়েকডজন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা অপেক্ষা করছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের জন্য। মন্ত্রী আসলেন। ৪৬ কেজি ওজনের কেকের বাক্স খোলা হলো। কিন্তু কেক কাটার চাকু নিয়ে কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে থাকলেন মন্ত্রী। সবাইকে অবাক করে দিয়ে মন্ত্রী বললেন “আমি বাংলাদেশী। আমি রাজনীতিবিদ। আমি মন্ত্রী। আমাকে দিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ওপর ছুরি চালানোর এই কুপরিকল্পনা কার? আমাদের জাতীয় পতাকা আমি কাটবো? এ তো আমার বাংলাদেশ। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে পাওয়া লাল-সবুজ পতাকা।

নূরুল ইসলাম নাহিদ রাজনীতিবিদ। তার প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা, দূরদর্শিতা, বৈষয়িক জ্ঞান ইত্যাদির কাছে প্রজাতন্ত্রের মেধাবী কর্মকর্তারা সবাই ধরাশায়ী। শুরু হলো দোষারোপ। কে বানিয়েছে কেক? কোন কর্মকর্তার আইডিয়া? অর্ডার দিয়েছে কে? ইত্যাদি। ক্ষুব্ধ শিক্ষামন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন। সেদিন যদি ওই কেকটি কাটতেন শিক্ষামন্ত্রী! কমিউনিস্ট পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়া নাহিদের পরিণতি কি হতে পারতো একটু ভেবে দেখুন।

এবার ২০২০ খ্রিস্টাব্দের ২৯ ফেব্রুয়ারি বগুড়ার পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রধান অতিথি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকও তিনি। শিক্ষামন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতির মুখোশ পড়ে শত শত শিক্ষার্থীকে দাঁড় করানোর দায়ে কাউকে তিরস্কার করতে শুনলাম না। এমন বিকৃত ও অযৌক্তিক অভ্যর্থনা ও শুভেচ্ছা গ্রহণ থেকে কেন বিরত থাকতে পারলেন না সাবেক পররাষ্ট্র ও বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি? #

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন