‘দিল্লি-মেঘালয়সহ ভারতজুড়ে সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধ করো’, ‘ফেলানীসহ সীমান্ত হত্যার বিচার কর’ ইত্যাদি স্লোগান ও ব্যানারসহ মিছিল নিয়ে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন ভারতীয় দূতাবাসের সামনে অবস্থান নিতে গেলে পুলিশ বাধা দিয়েছে। কিছুদূর যাওয়ার পরই পুলিশি বাধার মুখে পড়ে মিছিলটি। পরে সড়কেই বিক্ষোভ মিছিল ও বক্তৃতার মাধ্যমে কর্মসূচি শেষ করেছেন নেতারা। বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) দুপুর সাড়ে ১২টায় নতুনবাজার বাঁশতলা বাসস্ট্যান্ডে জমায়েত হয়ে দূতাবাস অভিমুখে রওনা হন তারা।
পুলিশি বাধার পর সিনিয়র নেতারা পুলিশ সদস্যদের বোঝানোর চেষ্টা করেন, কেন এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া উচিত। কিন্তু পুলিশ সদস্যরা তাদের অবস্থানে অনড় থাকেন। তাদের ভাষ্য, নিরাপত্তার খাতিরে আর সামনে এগিয়ে যেতে দেওয়া হবে না এবং ভারতীয় দূতাবাসের সামনে অবস্থান করা যাবে না।
এ সময় ফেডারেশনের নেতাকর্মীরা পুলিশ সদস্যদের বলেন, বিশ্বের কোনও দেশে হত্যাকা-, নিপীড়ন, মানবতাবিরোধী কর্মকা- হয় তাহলে সে দেশের দূতাবাসের সামনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ প্রতিবাদ জানিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। আমরা অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাতে চাই। আমাদের অবস্থান করার সুযোগ দিন। এভাবে আধা ঘণ্টার বেশি সময় পুলিশ ও নেতাকর্মীদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। শেষে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে না পেরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন নেতাকর্মীরা।
সমাবেশে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, অত্যন্ত লজ্জাজনক ও মর্মান্তিক ঘটনা, আমাদের দেশের পুলিশ কার পক্ষে দাঁড়িয়েছে? আমরা হত্যাকা-ের প্রতিবাদ করতে এসেছি। আমাদের সে প্রতিবাদ করতে দেওয়া হচ্ছে না। জনগণের টাকায় যারা চলছে, তারা জনগণের বিপক্ষে দাঁড়াচ্ছে। তারা নিপীড়কদের পক্ষ নিচ্ছে, দুর্নীতিবাজদের পক্ষ নিচ্ছে। মানবিকতার পক্ষে, দেশের পক্ষে যারা কথা বলছে তাদের বাধা দেওয়া হয়। সংবিধানে রয়েছে কোথাও নিপীড়ন ঘটলে বাংলাদেশ নিপীড়িতের পক্ষে কথা বলবে। পৃথিবীর যেকোনও প্রান্তে নিপীড়নের বিরুদ্ধে আমি কথা বলা আমার সাংবিধানিক অধিকার। এই সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা করার জন্য পুলিশের সহযোগিতা ও নিরাপত্তা দেওয়ার কথা। কিন্তু তারা তা করছে না।
তিনি বলেন, আমরা অনেক আশা নিয়ে ভারতে চলমান হত্যাকা-ের প্রতিবাদ জানাতে এসেছি। তাদের প্রতি দাবি জানাতে এসেছি, আপনারা এই হত্যাকা- বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। গত বিশ বছরে বাংলাদেশের সীমান্তে ১৩শ’র বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। ফেলানিসহ সব হত্যাকা-ের বিচার দাবিতে আমরা এখানে এসেছিলাম। পুলিশ আমাদের বাধা দিয়েছে, আমাদের সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক অধিকার খর্ব করা হয়েছে। আমরা এর নিন্দা জানাই।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যে সম্পর্ক সেখানে সমতার মর্যাদা নেই। আছে দাসত্বের সম্পর্ক। সরকারের নতজানু অবস্থার কারণে সমতার সম্পর্ক তৈরি করতে পারেনি। আমরা মনে করি, একটা দেশের অভ্যন্তরে যখন গণতন্ত্র থাকে না তখন কোনও দেশের সঙ্গেই সে গণতান্ত্রিক সম্পর্ক রাখতে পারে না। আজকে দেশে গণতন্ত্র থাকলে ভারতের সাহস হতো না বাংলাদেশের মানুষকে হত্যা করার। নেপালের একজনকে হত্যা করার পর ভারত সেদেশে গিয়ে ক্ষমা চেয়েছে।
দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা সাম্প্রদায়িকতার ফাঁদে পা দেবেন না। সতর্ক থাকবেন। যে দেশের সরকার প্রধান আমার দেশের মানুষকে বর্ডারে প্রতিনিয়ত রক্তাক্ত করে তাকে রাষ্ট্রীয় সফরে অনুমোদন করছি না। আমরা তাকে প্রত্যাখ্যান করছি।
সমাবেশে ঘোষণা দেওয়া হয় আগামী ১১ মার্চ সকাল ১১টায় অপরাজেয় বাংলা থেকে মিছিল নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে সংগঠনটি। এতে দাবি জানানো হবে, সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিক হত্যার বিচার করতে হবে; দিল্লি-মেঘালয়সহ ভারতজুড়ে সাম্প্রদায়িক হত্যাকা- বন্ধ করতে হবে; ৫৪ নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে হবে; বাণিজ্যঘাটতি কমাতে হবে; দেশের তরুণদের বেকার রেখে ভারতীয় কর্মী নিয়োগ চলবে না; উপকূলে রাডার স্থাপনসহ সব অসম চুক্তি বাতিল করতে হবে; ভারতে মুসলিমবিদ্বেষী সাম্প্রদায়িক এআরসি ও সিএএ বাতিল করতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন