শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

চাষাবাদ চলছে নদীগুলোতে জয়পুরহাটের ছোট যমুনা, তুলশীগঙ্গা, হারাবতি ও চিরি নদী এখন মরা খাল

মো. আবু মুসা, জয়পুরহাট থেকে | প্রকাশের সময় : ৬ মার্চ, ২০২০, ১২:০৩ এএম

প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে নেমে আসা পলি জমে জয়পুরহাট জেলার নদীগুলো মরে যাচ্ছে। ভরাট হয়ে যাওয়ায় নদীর বুকে চাষাবাদ করা হচ্ছে ধান, মিষ্টি আলুসহ নানা ফসল। চরানো হচ্ছে গরু ছাগল। খেলার মাঠ হিসেবে নানা ধরণের খেলায় মেতে উঠছে শিশু-কিশোর। পলি জমে নদীর বুক উঁচু হয়ে উঠায় বর্ষার পানি ভাটাতে নামতে পারছে না। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই নদীর পানি জনপদে ঢুকে স্থায়ী পানিবদ্ধাতার সৃষ্টি হয়। এতে প্রতি বছর অস্বাভাবিক বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। নদীগুলো সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই।
জানা যায়, ভারতীয় সীমানার অভ্যন্তরে সৃষ্ট হয়ে বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে জেলার মধ্যে প্রবেশ করেছে ছোট যমুনা, তুলশীগঙ্গা, চিরি ও হারাবতি নদী। এক সময় সারা বছর পানিতে ভরা থাকত নদীগুলো। নৌকা চলত গান গাইত মাঝি। সড়ক পথের চাইতে নদী পথগুলো বেশি ব্যবহার করত এ জেলার মানুষ। পাশ্ববর্তী জেলার সাথে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ছিল এই নদীগুলো। প্রতিবছর উজানে থেকে বন্যার পানির সাথে বিপুল পরিমাণ পলিও নেমে আসে। পলি জমে নদীগুলোর বুক উঁচু হয়ে উঠেছে। বর্ষা মৌসুমে বন্যার পানি ভাটাতে নামতে পারে না এতে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে অস্বাভাবিক বন্যার সৃষ্টি হয়। সৃষ্টি হয় স্থায়ী জলাবদ্ধতা। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। হাজার হাজার মানুষ পানীবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করে। জেলা ত্রাণ ও কৃষি বিভাগের তথ্যমতে অকাল বন্যায় প্রতি বছর প্রায় ২০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়। গত ১০ বছরে প্রায় ২ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
অপর দিকে শুস্ক মৌসুমে নদীর পানি ব্যবহার করে সেচ কাযক্রমের পরিকল্পনা থাকলেও বর্তমানে জেলার ৪টি নদী শুকে গেছে। বোরো মৌসুমে নদীতে পানি না পেয়ে নদীর বুকে গভীর নলকূপ স্থাপন করে সেচ কাজ করছে কৃষকরা। নদীর বুকে ধান ও মৌসুমী ফসল চাষ করছে চাষিরা। জেলার নদীগুলো দিন দিন মরে গেলেও নদী বাঁচাতে সরকারি ও বেসরকারি কোনো উদ্যোগ নেই। ১৯৮২ সালে তৎকালীন সরকারের আমলে জেলার তুলশীগঙ্গা নদী খনন কাজ শুরু হলেও অজ্ঞাত কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। বাকি ৩টি নদী জন্মের পর কোনো দিনই খনন করা হয়নি বলে জানিয়েছে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বিভাগ।
জয়পুরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী আবু মোহাম্মদ সেলিম জানান, প্রতি অর্থ বছরে জেলার নদী খননের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়। ২০০৯-১০ অর্থ বছরে ছোট যমুনার ২৭ কিলোমিটার, তুলশীগঙ্গার ৩১ কিলোমিটার, হারাবতির ২০ কিলোমিটার ও চিরির ১৬ কিলোমিটারসহ মোট ৪টি নদীর ৯৪ কিলোমিটার অংশ খননের জন্য ২২ কোটি ৩৯ লাখ টাকার একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। পানি উন্নয়ন বিভাগে কর্মরত পানি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, নদী খনন করে পানি প্রবাহ সৃষ্টি করতে না পারলে আগামী ৩০ বছরের মধ্যে এ অঞ্চলে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে। স্থায়ী মরুভূমিতে পরিণত হবে জয়পুরহাটসহ বিস্তীর্ণ এলাকা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন