একাত্তরের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) লাখ লাখ মানুষের সামনে দেওয়া ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে মুক্তি সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানানোর পরই দৃশ্যপট পাল্টে যায়। তিনি প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান আহূত গোলটেবিল বৈঠকে যোগদানের জন্য শাসক গোষ্ঠীকে চারটি শর্ত দেন পাশাপাশি সংগ্রামী জনতাকে দেন ১০ নির্দেশনা। দেশের মানুষ বুঝে যায় পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ফেলবার সময় এসেছে। ৮ মার্চ থেকেই শুরু হয়ে যায় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্ব। নিরস্ত্র বাঙালি বঙ্গবন্ধুর ডাকে হাতে অস্ত্র তুলে নিতে শুরু করে। ৮ মার্চ থেকেই পাকিস্তানের পূর্বাংশের সব কর্তৃত্ব চলে যায় বঙ্গবন্ধুর হাতে। তিনি আদেশ ও নির্দেশের মাধ্যমে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে নেন।
জেনারেল ইয়াহিয়া খানের ভাষণের বিপরীতে এদিন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে একটি লিখিত বিবৃতি দেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু ইয়াহিয়ার উদ্দেশে বলেন, ১ মার্চ আকস্মিকভাবে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করা হয়। সেই দিন হইতে ৬ মার্চ পর্যন্ত বাংলার মানুষ সামরিক মোকাবিলার অধীনে রহিয়াছে। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আকস্মিক ও অবাঞ্ছিতভাবে স্থগিত ঘোষণা করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদরত নিরস্ত্র বেসামরিক অধিবাসীদের (শ্রমিক, কৃষক ও ছাত্র) ওপর ব্যাপকভাবে গুলি চালানো হইয়াছে।
গত সপ্তাহে যাহারা প্রাণ দিয়াছেন তাহারা শহীদ হইয়াছেন। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন খামখেয়ালিভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করার ফলে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার সংরক্ষণ করিতে যাইয়া তাহারা মৃত্যুবরণ করিয়াছেন। এই শহীদানদের ধ্বংসকারী শক্তি অ্যাখ্যাদান নিঃসন্দেহে সত্যের অপলাপ। প্রকৃতপক্ষে তাহারাই ধ্বংসকারী শক্তি, যাহারা বাংলাদেশের বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টির জন্য দায়ী। ইহা অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, গত সপ্তাহে যে বিভীষিকার সৃষ্টি করা হইয়াছে তাহা দেখার জন্য প্রেসিডেন্ট ঢাকা আসিবার সময় করিতে পারিলেন না। প্রেসিডেন্ট যাহাকে সর্বনিম্ন শক্তি প্রয়োগ বলিয়াছেন তাহাতেই যদি হাজার হাজার লোক হতাহত হইতে পারে তাহা হইলে তাহার অভিহিত ‘পর্যাপ্ত’ শক্তি প্রয়োগের অর্থ কি আমরা সম্পূর্ণ নির্মূল করাই বুঝিব? বঙ্গবন্ধু তার লিখিত বিবৃতিতে শাসকগোষ্ঠীকে ষড়যন্ত্র ও শক্তির পথ পরিহারের আহ্বান জানান।
অন্যদিকে ৮ মার্চ থেকেই পাকিস্তান সরকারের সব কর্মকান্ড কঠিন করে তোলে বাংলার মানুষ। সব কাজ চলতে থাকে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে। মুজিবের ১০ নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে থাকে মুক্তিপাগল জনতা। বঙ্গবন্ধু স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গঠনের নির্দেশ দেন। শেখ ফজলুল হক মণি, সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমেদকে বঙ্গবন্ধু দায়িত্ব দেন যুব ও তরুণ সমাজকে সংগঠিত করতে। সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত বাঙালিদের সংগঠিত করার দায়িত্ব অর্পণ করেন কর্নেল (অব.) আতাউল গনি ওসমানীকে। ছাত্র সমাজকে সংগঠিত করার দায়িত্বভার দেন স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নূরে আলম সিদ্দিকী, আ স ম আবদুর রব, আবদুল কুদ্দুস মাখন ও শাজাহান সিরাজকে। তাদের নেতৃত্বে বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে গড়ে উঠতে শুরু করে প্রতিরোধদুর্গ।#
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন