রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ব্যানার-ফেস্টুন-বিলবোর্ড সরাতে হবে

এ টি এম মোসলেহ উদ্দিন জাবেদ | প্রকাশের সময় : ১০ মার্চ, ২০২০, ১২:০২ এএম

পরিবেশের সমস্যা বহুমাত্রিক। পরিবেশ দূষণের কথা এলেই বায়ু, পানি ও শব্দ দূষণের কথা বলা হয়। কিন্তু এসব ছাড়াও বর্তমানে আরেকটি দূষণের কথা বলা হচ্ছে, সেটি হলো ‘দৃশ্য দূষণ’। দৃশ্য দূষণ একটি নান্দনিক সমস্যা। এটি দূষণের প্রভাবগুলিকে বোঝায়, যা একটি দৃশ্য বা দৃষ্টিভঙ্গি উপভোগ করার ক্ষমতা হ্রাস করে। দৃশ্য দূষণ প্রাকৃতিক পরিবেশে ক্ষতিকারক পরিবর্তন তৈরি করে মানুষের দর্শনীয় স্থানগুলিকে বিরক্ত করে। যত্রতত্র পোষ্টার, বিলবোর্ড, অবৈধ দেয়াল লিখন, আর্বজনা, অ্যান্টেনা, বৈদ্যুতিক তার, ভবন এবং যানবাহনগুলির উন্মুক্ত অবস্থান প্রায়শই দৃশ্য দূষণ হিসাবে বিবেচিত হয়। কোনও অঞ্চলে অতিরিক্ত লোকজনও দৃশ্য দূষণের কারণ হয়। চাক্ষুষ দূষণের সংস্পশের্র প্রভাবগুলির মধ্যে রয়েছেঃ বিক্ষিপ্ততা, চোখের ক্লান্তি, মতামতের বৈচিত্র্য হ্রাস এবং পরিচয় হ্রাস। এ ধরণের দৃশ্য দূষণের আরেকটি ফলাফল হচ্ছে পর্যটন বিমুখতা। বর্তমান যুগ বিজ্ঞাপনের যুগ। বহু বছর আগে কবি শঙ্খ ঘোষ লিখেছিলেন, ‘মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে’। বিজ্ঞাপনে ঢেকে যাচ্ছে আমাদের সভ্যতা। শুধু যে রাজধানী ঢাকা বা অন্য মহানগরে এটা ঘটছে তাই নয়, মফস্বলেও আজকাল যেদিকে তাকাই সেদিকেই কুৎসিতভাবে ঢাকা পড়ে যায় প্রকৃতি। আকাশ ঢেকে গেছে নানারকম তারে। সুন্দর সুন্দর বাড়িঘরের সামনে ঝুলছে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন। বিভিন্ন স্থাপনায় থাকে নানান ধরনের পোস্টার, ব্যানার, অবৈধ দেয়াল লিখন, ফেস্টুন ও প্লাকার্ড।

রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন বড় বড় শহরগুলোতে রাস্তায় বের হলেই শুধু চোখে পড়ে বিভিন্ন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের বড় বড় ব্যানার, পোস্টার। রাস্তার পাশের স্থাপনাগুলোর দেয়াল, বৈদ্যুতিক খুঁটি, উড়ালসেতুর পিলার সর্বত্র পোষ্টার, ব্যানার ইত্যাদির ছড়াছড়ি। এছাড়া রয়েছে বিদ্যুতের তার, ইন্টারনেটের তার, ডিশ লাইনের তার। আর এ যেন পুরো শহরকে মাকড়শার জালের মতো জড়িয়ে রেখেছে। ফলে রীতিমতো এক ধরনের আতঙ্ক নিয়েই বাস করতে হয়।

রাজনৈতিক নেতাদের পোস্টার, ব্যানার, অবৈধ দেয়াল লিখন, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ডের সয়লাব দেখা যায় রাজধানীসহ সারা দেশেই। নির্বাচন থাকুক বা না থাকুক সারা বছর ধরে বৈদ্যুতিক খুঁটি, গাছ ও দেয়ালে ঝুলতে থাকে এসব পোস্টার, ব্যানার, প্ল্যাকার্ড। নেতাদের ছবি যুক্ত করে এগুলো তৈরি করা হয়। আমাদের দেশ ও আমাদের প্রতিবেশি দু-একটি দেশ ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও এ ধরনের চিত্র দেখা যায় না। পরিবেশ বা নগরীর সৌন্দর্য বিনষ্টকারী এসব উপকরণ এখন যেমন মানুষের মাঝে বিরক্তিভাব সৃষ্টি করছে, তেমনি বিব্রতকর পরিস্থিতির মাঝে ফেলে দিচ্ছে এর বিষয়বস্তু ও উপস্থাপনের ধরন।

আমরা অনেকেই দেশ-বিদেশে ভ্রমণে গেলে কোথাও এই ধরনের দৃশ্য দূষণ তথা যত্রতত্র পোস্টার, বিলবোর্ড, আবর্জনা, অ্যান্টেনা, বৈদ্যুতিক তার, ভবন এবং অটোমোবাইলগুলির উন্মুক্ত অবস্থান দেখতে পাইনা। দৃশ্য দূষণ না থাকার কারণে ওই দেশগুলোতে পরিবেশ দূষণ যেমন কমছে, তেমনি শক্তিশালী ভিতের উপর দাঁড়িয়েছে তাদের পর্যটন শিল্প। ঐ দেশগুলোর তুলনায় পরিবেশ রক্ষা ও পর্যটন উভয় ক্ষেত্রেই আমরা দিন দিন পিছিয়ে পড়ছি।

আমাদের বড় শহরগুলোতে বেশিরভাগ বাড়িঘরগুলোর দিকে তাকালে কোনো সৌন্দর্য ফুটে উঠে না। বেশিরভাগ বাড়িঘর ঘিঞ্জি, পর্যাপ্ত জায়গা না রেখেই বাড়িঘরগুলো বানানো হয়েছে। তাই পরিকল্পিত সুন্দর বাড়িঘর নির্মাণে আইনের যথাযথ প্রয়োগের ক্ষেত্রে আমাদের আরো কঠোর হতে হবে। বড় শহরগুলোতে পর্যাপ্ত ও সুশৃঙ্খল গাড়ি পাার্কিং ব্যবস্থা করতে হবে, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং আমাদের সড়কগুলোতে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। সেই সাথে রাস্তায় যথাযথ লেনে গাড়ি চালনা নিশ্চিত করতে আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে। আমাদের দেশের বেশিরভাগ নাগরিক সুযোগ সুবিধা ও কর্মসংস্থান বড় বড় দুটি শহরকেন্দ্রিক। তাই বড় বড় দুটি শহরে মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যা। জনসংখ্যার এই চাপ কমাতে আমাদের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে বিকেন্দ্রীকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা না ফেলে নগরগুলোর বর্জ্যব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন করতে হবে। পরিকল্পিত সুন্দর ঘরবাড়ি, সুশৃঙ্খল সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা, পরিমিত জনসংখ্যাও দৃশ্য দূষণ রোধে এবং সুস্থ্য মনন গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

বর্তমানে আমাদের দেশের বড় শহরগুলোতে বিলবোর্ড নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এটি একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। কিন্তু বড় শহরগুলোর বাইরে বের হলেই হাইওয়েগুলোর দু’ধারে, জেলা শহর ও মফস্বলে এখনো মিলছে বড় বড় বিলবোর্ড। অতীতে আমরা দেখেছি, ঝড়ে বিলবোর্ড ভেঙ্গে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হয়েছে। তারপরও এধরনের বিলবোর্ড চিরতরে বন্ধের উদ্যোগ দেখতে পাচ্ছি না। বড় বড় এই বিলবোর্ডগুলো একদিকে যেমন দৃশ্য দূষণ করছে একইভাবে মানুষের প্রাণহানির কারণও হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতা দৃশ্য দূষণের আরেকটি কারণ। বেশিরভাগ বিলবোর্ড, পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই এগুলো লাগানো হয়।

আমাদের চারপাশে ঘিরে থাকা সামাজিক ও প্রাকৃতিক সব কিছু নিয়েই আমাদের পরিবেশ। আজ আমরা সবদিকেই দূষণের শিকার। কেবলমাত্র বস্তাপচা বুলি আওড়ে, নিয়ম বানিয়ে এর হাত থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়, প্রয়োজন আইনের সঠিক প্রয়োগ। দেয়াল লিখন ও পোস্টার নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১২ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। দৃশ্য দূষণ প্রতিরোধে অবৈধ দেয়াল লিখন, পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড অপসারণে অভিযান জোরদার করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
jack ali ১০ মার্চ, ২০২০, ১১:৪৮ এএম says : 0
After liberation not we did't a leader who know how to rule a country.. We muslim used to rule half of the world by the Law of Allah.. Bangladesh is populated by Muslim and our Beloved Country must be ruled by the Law of our Creator.. then we can test the real Independence....
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন