আপোসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় অভিযুক্ত করে, জেলে বন্দি রাখা হয়েছে। তাকে কারাগারে আটকে রেখে রাতের আঁধারে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে গণতন্ত্রের টুঁটি চেপে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে আজ হত্যা করা হয়েছে। অথচ, বাংলাদেশের ষোল কোটি মানুষের প্রাণপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এরশাদ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সফল ব্যক্তিত্ব। তিনি গণতন্ত্র রক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিটি আন্দোলনে সফল হয়েছেন, এবারো হবেন। আপোসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রাণ। তিনি সর্বোচ্চ জনপ্রিয়তা নিয়ে তিন তিনবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম ও মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় মহিলা প্রধানমন্ত্রী।
১৯৮১ সালের ৩০ মে সামরিক বাহিনীর কতিপয় দুর্বৃত্তের হাতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শাহাদাৎ বরণ করার পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা কর্মীদের আহ্বানে বেগম খালেদা জিয়া ১৯৮২ সালে ৩ জানুয়ারি বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন। ১৯৮৩ সালের ১ এপ্রিল দলের বর্ধিত সভায় তিনি প্রথম বক্তৃতা করেন। বিচারপতি সাত্তার অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ সালের ১০ মে পার্টির চেয়ারপার্সন নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তার নেতৃত্বেই মূলতঃ বিএনপির পূর্ণ বিকাশ হয়।
আন্দোলন বেগম খালেদা জিয়ার অবদান: ১৯৮৩ সালের বেগম জিয়ার নেতৃত্বে সাত দলীয় ঐক্যজোট গঠিত হয়। একই সময় এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। বেগম জিয়া প্রথমে বিএনপিকে নিয়ে ১৯৮৩ এর সেপ্টেম্বর থেকে ৭ দলীয় ঐক্যজোটের মাধ্যমে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন শুরু করেন। একই সময় তার নেতৃত্বে ৭ দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৫ দলের সাথে যৌথভাবে আন্দোলনের কর্মসূচি শুরু করে। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ দফা আন্দোলন চলতে থাকে। কিন্তু ১৯৮৬ সালের ২১ মার্চ রাতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এরশাদের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে বাধার সৃষ্টি হয়। ১৫ দল ভেঙ্গে ৮ দল ও ৫ দল হয়। ৮ দল নির্বাচনে যায়। এরপর বেগম জিয়ার নেতৃত্বে ৭ দল, পাঁচ দলীয় ঐক্যজোট আন্দোলন অব্যাহত রাখে এবং নির্বাচন প্রত্যাখান করে। ১৯৮৭ সাল থেকে খালেদা জিয়া ‘এরশাদ হটাও’ এক দফার আন্দোলন শুরু করেন। এর ফলে এরশাদ সংসদ ভেঙ্গে দেন। পুনরায় শুরু হয় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। অবশেষে দীর্ঘ আট বছর একটানা নিরলস ও আপোসহীন সংগ্রামের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে বিএনপি। সেই নির্বাচনে খালেদা জিয়া মোট পাঁচটি আসনে অংশ নিয়ে পাঁচটিতেই জয়লাভ করেন।
১৯৯১ সালের ১৯ মার্চ বেগম খালেদা জিয়া গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। তার সরকার দেশে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার কায়েম করে। ২ এপ্রিল তিনি সংসদে সরকারের পক্ষে এই বিল উত্থাপন করেন। একই দিন তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদকে স্বপদে ফিরে যাবার ব্যবস্থা করে একাদশ সংশোধনী বিল আনেন। ৬ আগস্ট ১৯৯১ সালের সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে দুটি বিল পাশ হয়। ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে বেগম খালেদা জিয়া দ্বিতীয় বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে বিএনপি সরকার গঠন করে। খালেদা জিয়া তৃতীয় বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হিসেবে দলে যোগ দেবার পর থেকে মোট চার বার তিনি গ্রেফতার হন। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর, ১৯৮৪ সালের ৩ মে, ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর গ্রেফতার হন। এরপর তিনি ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর ৩ তারিখে দুই পুত্রসহ গ্রেফতার হন। ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বার তিনি হাইকোর্টের নির্দেশে মুক্তিলাভ করেন। তাঁর বিরুদ্ধে চলতে থাকা কোনো মামলার তদন্তে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই প্রমাণিত হয়নি, হবেও না।
২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর বেগম জিয়াকে এক কাপড়ে তার ২৮ বছরের আবাসস্থল ছাড়তে বাধ্য করে আওয়ামী লীগ সরকার। বলতে গেলে বলপ্রয়োগ করেই তাকে বাসা থেকে বের করে দেয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সাল থেকে অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল হিসেবে জিয়াউর রহমানের সাথে শহীদ মইনুল সড়কের ৬ নম্বর বাড়িতে উঠেছিলেন খালেদা জিয়া।
বিএনপি চেয়ারপার্সন ও ২০ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ২০১৫ সালে প্রায় তিনমাস তার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সরকার অবরুদ্ধ করে রাখে। নিরাপত্তার কথা বলে তালা মেরে দেওয়া হয় তার অফিসের গেটে। তার চলাফেরার পথ বন্ধ করার জন্য বাসার সামনে রাখা হয় বালুর ট্রাক। সংঘাত এড়াতে ‘সরকারি’ অবরোধের কবলে পড়ে দেশ ও রাজধানী ঢাকা।
আমরা এর আগেও কয়েকবার এ রকমটি দেখেছি। ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর বিরোধী দলের ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ ঠেকাতে দুই দিন আগে থেকে রাজধানীর প্রবেশপথগুলো আটকে দেয়া হয়েছিল। তার আগে ফেব্রুয়ারি মাসেও আরো একবার একই ধরনের পরিস্থিতির মুখে পড়ে সাধারণ মানুষ। দেশজুড়ে সড়ক, নৌ ও রেলপথের যাতে বিরোধী দলের সমর্থকরা ব্যবহার করতে না পারে, তার জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল সেসবের চলাচল।
কয়েক বছর ধরে আমরা বিরোধী দলের মোকাবিলায় সরকারকে অনৈতিক জবরদস্তির আশ্রয় নিতে দেখছি। বিরোধী নেত্রীকে বাসায় আটকে রাখা, সভা-সমাবেশ করতে না দেয়া, কর্মসূচি ঘোষণাকারী নেতাদের গ্রেফতার করা, নেতাকর্মীদের নামে ডজন-ডজন মামলা দিয়ে হয়রানি করা নৈমিত্তিক বিষয় করে তুলেছে সরকার।
সরকারি দল উন্নয়নের যে স্বপ্ন দেখছে, কিন্তু শুধু উন্নয়ন নয়, একটি সরকারের সফলতা নির্ভর করে দেশের নিরবচ্ছিন্ন স্থিতিশীল পরিবেশ, শান্তি ও সুশাসনের ওপর। বিরোধী দলকে অপদস্থ আর অস্বীকার করে সেটা অর্জন সম্ভব হয় না। আমরা আশা করি, সরকার সেটা অনুধাবন করবে এবং দেশের স্বার্থে বিরোধী দলকে আস্থায় নিয়ে সংকট উত্তরণের প্রচেষ্টা নেবে।
একটি কথা না বললেই না, ক্ষমতা মানুষকে অন্ধ করে দেয়, ইদানীং আওয়ামী লীগ নেতেদের কথা শুনলে এমনটাই মনে হয়, যে আওয়ামী লীগ জনগণের গণতন্ত্রের কথা বলে, মানুষের ভোটাধিকারের কথা বলে বারবার বাংলাদেশের মানুষের সাথে বেঈমানী করেছে, বারবার বাংলাদেশের গণতন্ত্র সেই দলই ক্ষত বিক্ষত করেছে, শুরু থেকে আওয়ামী লীগে কখনো গণতন্ত্র ছিল না, আজও নেই। আওয়ামী লীগ কখনো গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, তারা একনায়কতন্ত্রে ও বাকশালী ধ্যান-ধারণায় বিশ্বাস করে, ইদানীং আওয়ামী লীগের হাইব্রিড নেতাদের কথা শুনলে এমনটাই মনে হয়। আওয়ামী লীগের হাইব্রিড নেতারা খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কথা বলে, কিন্তু তারা হয়তো জানেন না খালেদা জিয়া বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সফল ব্যক্তিত্ব। তার নেতৃত্বেই এরশাদ সরকারের পতন হয়েছিলো। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী লীগের নেত্রী শেখ হাসিনা বেঈমানি করেছিলো। কিন্তু বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের নয়ন মনি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সবসময় জনগণের পাশে থেকেছেন। তিনি কোনো অপশক্তির কাছে মাথা নত করেননি। নিজের কথার উপর অটল থেকেছেন। দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে রাজপথে নেমে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন।
পরিশেষে বলছি, কারা অন্তরীণ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অসুস্থ। এ অবস্থায় খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার প্রয়োজন। আমরা তার নিঃশর্ত মুক্তি চাই, যাতে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।
লেখক: মুক্তিযুদ্ধা ও রাজনীতিবীদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন