শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

রাসায়নিক বর্জ্যে দূষিত পরিবেশ

কুষ্টিয়ায় জনস্বাস্থ্যের ওপরও বিরূপ প্রভাব

এস এম আলী আহসান পান্না, কুষ্টিয়া থেকে | প্রকাশের সময় : ১১ মার্চ, ২০২০, ১২:০১ এএম

কুষ্টিয়ায় অটোরাইচ মিলের রাসায়নিক বর্জে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। হুমকীর মুখে চাষাবাদ। জনস্বাস্থের উপরও বিরুপ প্রভাব পড়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর নামে কুষ্টিয়াতে সংশ্লিষ্ট একটি বিভাগ থাকলেও এদের কোন কার্যক্রম না থাকায় কুষ্টিয়ায় অটোরাইচ মিলের মালিকরা নির্বিঘেœ মিলের দূষিত বর্জ্য বিভিন্ন স্থানে ফেলছে। এতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, অপরদিকে দূষিত বর্জ্যে মশা মাছির জন্ম হচ্ছে।
জানা যায়, আবাদি জমির উন্নয়নে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন জিকে সেচপ্রকল্পের খাল মানুষের জন্য ভয়াবহ করে তুলছে খাজানগর, কবুরহাট, বল্লভপুর আইলচারা এলাকার অটোরাইস মিলগুলো। মিলের বাধ্যতামূলক ওয়াটার টিটমেন্ট প্লান্ট থাকার নিয়ম থাকলেও কোন অটোরাইচ মিলেই তা নেই। এইসব মিলগুলো ক্ষতি কর রাসায়নিক বজ্যযুক্ত পানি জিকে ক্যানালে সরাসরি ফেলার কারণে সেখানে তীব্র দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। ক্যানালের পাশ দিয়ে চলাচল করা কষ্টকর হয়ে উঠেছে। মুখ টিপে পথ চলে এলাকাবাসী, দুর্গন্ধে নাক-মুখ বুজে সহ্য করতে হচ্ছে।
খাজানগর রাইচমিলগুলোর দূষিত পানি জিকে ক্যানেলে ও মাঠে ঢুকে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। জিকে ক্যানেলের ময়লা দুগন্ধ বর্জ্যে জন্ম দিচ্ছে মশা।
অপরদিকে আইলচারা বাজারের সন্নিকটে অটোরাইচ মিলগুলোর দূষিত পানি বের হয়ে বরিশাল খালে এসে পড়ছে। দূষিত পানির কারণে নদীর মাছতো শেষ হয়েছে। পরিবেশের উপর বিরুপ প্রভাব পড়ে খালের পাশের বসতীদের হাস-মুরগী পশু পাখি মারা যাচ্ছে। এক সময়ে এ খালে মানুষ গোসল করতো, মানুষেরা এই খালের পানি নিত্য কাজে ব্যবহার করতো। কিন্তু এখন সেখানকার পানিতে নামলেই চুলকানী ধরে। সেখানকার পানির কারণে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ দেখা দেয়।
কিছুদিন আগে বড় আইলচারা গ্রামের মন্ডলপাড়ার তোহাব খন্দকারের ৬০টি হাস মারা গেছে। খালের পাড়ের হাস-মুরগী প্রতি নিয়ত মারা যাচ্ছে।
প্রবল প্রভাবশালী মিল মালিকদের কাছে জিম্মি হয়ে রয়েছে এ অঞ্চলের প্রায় লাখাধিক মানুষ। তেমনি কোন প্রকার অভিযোগ করেও ফল হচ্ছেনা।
প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতেই বলা চলে এ অঞ্চলে তিন ফসলী জমি অতি উর্বরতা ছিলো এখন বন্ধ প্রায়, আগে যে জমিতে পঁচিশ ছাব্বিশ মন ধান হত এখন সেখানে সাত আট মন ধান হয়ে থাকে। অনেক চাষি এখন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চাষাবাদ বাদ দিয়ে বিকল্পের সন্ধানেও ব্যর্থ, কি করবে চাষি জমিতে?
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, জিকে ক্যানালের খাল সর্বনিম্ন ত্রিশ ফিট কোথাও পঞ্চাশ ফিট স্থান ভেদে কোথাও সত্তর ফিট।
সরেজমিনে দেখা যায়, এ খালগুলো দখল হতে হতে এখন নালা বা আবর্জনার ড্রেনের রূপ নিয়েছে। অধিবাসীদের ক্ষোভ কয়েক মাস আগে ৩০ লাখ টাকা খরচ করে খাজানগর এলাকার এ খালের সংস্কার করেছেন সরকার কিন্ত মাত্র একদিনের ভেতরে ময়লার পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। একই অবস্থা বটতৈল আনু মোড় থেকে কবুরহাট-বটতৈল বিলের মাঠ পর্যন্ত জিকে ক্যানালের। এই ক্যানাল দীর্ঘদিন ময়লা আবর্জনায় করুন দশাসহ রাতার পাশে বেদখল করে রেখেছে প্রভাবশালী মিল মালিক ও ব্যবসায়ীরা। অধিবাসীদের অভিযোগ খালের উপর দিয়ে যেখানে কালভার্ট রয়েছে সেখানে ময়লা আবর্জনা আটকে থাকে দূষিত পানি ফুলে ওঠে রাস্তায় ওঠে আসে। তখন অধিবাসীদের আবর্জনার পরিস্কার করতে হয়।
পরিবেশ অধিদফতরের এক নীতিমালায় রয়েছে, রাইস মিলের গরম পানি ও বর্জ্য জমি বা জলাশয়ে সরাসরি নির্গমন করা যাবে না। পানি সংরক্ষণাগার নির্মাণ করে তাতে পানি সংরক্ষণ করে ঠান্ডা করতে হবে। এছাড়াও ‘তরল বর্জ্য পরিশোধানাগার’ ও ‘জিরো ডিসচার্জ প্লান’ করতে হবে। কিন্তু কুষ্টিয়ার বটতৈল, খাজানগর-আইলচারায় যে ৪৬টি অটো রাইচ মিল রয়েছে তাদের কারোরই কোন কিছু নেই।
তাই মিলের গরম পানি অনেক জলাশয়ে ঢুকে মাছও মারা যায়।
কিছুদিন আগে বল্লভপুর শান্তি মোড়ের নিকট রুস্তুম বাবুর দিঘীতে মিলের বর্জ্য ঢুকে কয়েক লাখ টাকার মাছ মরে যায়। এলাকাবাসী, দুর্গন্ধে অভিযোগ দিলে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্তারা অভিযুক্ত দের কাছেই যান, ফলত আপ্যায়ন ও তেল খরচের লাখ টাকার উৎকোচে ফিরে যান। এভাবেই চলছে বছরের পর বছর প্রতিকার নেই। কুষ্টিয়ায় অটোরাইচ মিলের রাসায়নিক বর্জে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ফসলী আবাদ। নষ্ট হচ্ছে বসবাসযোগ্য পরিবেশ। এ ব্যাপারে প্রয়োজনী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছে এলাকাবাসী।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন