রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

পাকিস্তানের খেতাব বর্জন করেন বুদ্ধিজীবীরা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৫ মার্চ, ২০২০, ১২:০০ এএম

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে লাগাতার অসহযোগ আন্দোলনের চতুর্দশ দিবসের আজ ছিল দ্বিতীয় পর্যায়ের অষ্টম দিবস। এদিন পাকিস্তানের খেতাব বর্জন করেন বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীরা। দিনটি শান্তিপূর্ণ সভা-শোভাযাত্রা ও সরকারি, আধা-সরকারি অফিস-আদালত বর্জনের মাধ্যমে অতিবাহিত হয়। কিন্তু ভিতরে ভিতরে ছিল চরম উত্তেজনা।

কারণ এ দিন ঢাকায় আসেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। বিমানবন্দরে সামরিক গভর্নর লে. জেনারেল টিক্কা খান তাকে স্বাগত জানান। কোনো সাংবাদিক ও বাঙালীকে এ সময় বিমানবন্দরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
১৪ মার্চে আওয়ামী লীগের নতুন নির্দেশানুযায়ী আন্দোলন ও প্রশাসন চলতে থাকে। ছাটাই ও কোর্ট মার্শালের ভয় উপেক্ষা করে সামরিক প্রতিষ্ঠানের ১১০০ বেসামরিক কর্মচারী কাজে যোগদানে বিরত থাকে। ফলে সামরিক বাহিনী ভেতর থেকে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। তাজউদ্দিন আহমদ বলেন, সারা বাংলাদেশে এখন এক ঐতিহাসিক অভ্যুত্থান ঘটছে।

বিকেলে বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের জনসভায় আ স ম আব্দুর রব বলেন, বাংলাদেশে কেবল বাংলার সর্বাধিনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই কোন নির্দেশ জারি করতে পারেন এবং বাংলার জনসাধারণ কেবলমাত্র সেই বিধিই মেনে চলবে। কেননা বঙ্গবন্ধু সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালীর নির্বাচিত নেতা।

এছাড়া আন্দোলনে নিহত বীর শহীদদের উদ্দেশে শোক এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারণের আশা-আকাক্সক্ষাকে তোয়াক্কা না করে একতরফাভাবে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিতের প্রতিবাদে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে কালো পতাকা উত্তোলিত থাকে।

উত্তাল-অগ্নিগর্ভ পূর্ব পাকিস্তানের পরস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাদা রঙ্গের গাড়িতে কালো পতাকা উড়িয়ে ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে দেখা করতে যান। ১৬ মার্চ শুরু হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব-ইয়াহিয়া খানের পূর্বনির্ধারিত বৈঠক। স্বাধীনতার দাবিতে অটল থেকেই বঙ্গবন্ধু পাক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে আলোচনায় বসার ব্যাপারে সঙ্কল্পবদ্ধ।

সমঝোতার নাটক করতে ইয়াহিয়া খান পূর্ব পাকিস্তানে আসলেও মুক্তিকামী বাঙালী তাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রস্তুতি অব্যাহত রাখে। দেশবাসীকে তাদের অধিকার বঞ্চিত করার প্রতিবাদস্বরূপ শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীরা তাদের খেতাব বর্জন অব্যাহত রাখেন। চারদিকে শিল্পী এবং বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে এ নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেখা যায়। শিল্পাচার্য জয়নুলের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে সাংবাদিক-সাহিত্যিক আবুল কালাম শামসুদ্দীন এবং অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী তাদের রাষ্ট্রীয় খেতাব বর্জন করেন। বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে এ খেতাব বর্জনের বিষয়টি ব্যাপক সাড়া ফেলে।

পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো করাচিতে সাংবাদিক সম্মেলনে নতুন দাবি উত্থাপন করে বলেন, কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও পিপলস পার্টির সমন্বয়ে কোয়ালিশন সরকার গঠন করতে হবে। তিনি বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠতাভিত্তিক সরকার পাকিস্তানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কিন্তু করাচিতেই অন্য এক জনসভায় কয়েকজন প্রখ্যাত রাজনৈতিক নেতা এই দাবির প্রতিবাদ জানান।

এদিকে ঢাকা নগরীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভুয়া স্বেচ্ছাসেবকরা গোলযোগ তৈরির চেষ্টা করলে এদিন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান আব্দুর রাজ্জাক বিবৃতিতে বলেন, কিছুসংখ্যক দুষ্কৃতকারী আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর পোশাক ও টুপি নকল করে জনসাধারণের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে। এসব দুষ্কৃতকারিকে ধরে আওয়ামী লীগ অফিসে প্রেরণ করতে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।#

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন