করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে লকডাউন ঘোষণা না করলেও ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। রাজধানীর অসংখ্য মানুষ গ্রামে চলে গেছে। যারা আছে, তারা নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও বেশ তৎপর রয়েছে। বলা যায়, রাজধানী এক প্রকার অবরুদ্ধ। এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে, দিনমজুর, হতদরিদ্র, নিম্নআয়ের মানুষ এমনকি ভ্রাম্যমাণ ভিক্ষুক শ্রেণিও। জাতির উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে অসহায় মানুষদের সহায়তা প্রদান ও পুনর্বাসনের কথা বলা হয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনার বাস্তবায়ন এখনো শুরু হয়নি। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে তা বিলম্বিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সারাদেশে ২৪ হাজার ১২১ ম্যাট্রিক টন চাল এবং নগদ সাড়ে আট কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও তার বিতরণ কার্যক্রম জেলাপ্রশাসকসহ অন্যান্য কর্তৃপক্ষ শুরু করেনি। রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনেরও কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। ফলে শ্রমজীবী এবং স্বল্প আয়ের মানুষ খাদ্য সংকটের শঙ্কায় ভুগছে।
একদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের ভয় অন্যদিকে কর্মহীন হয়ে খাদ্যাভাবে পড়ার শঙ্কায় দিন মজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষের নিদারুন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে পতিত হয়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে আশু মুক্তি মিলবে কি না তা তাদের অজানা। বিশেষ করে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষদের জীবন বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকি বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২১ ভাগ অর্থাৎ সাড়ে তিন কোটি মানুষ দরিদ্র শ্রেণির। এর মধ্যে দারিদ্র্যসীমার নিচের মানুষও রয়েছে, যাদের পক্ষে তিন বেলা খাবার যোগাড় করা অসম্ভব। বর্তমানে কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই মানুষগুলো সবচেয়ে বেশি কষ্টের মধ্যে পড়েছে। তাদের পক্ষে খাদ্য সংরক্ষণ দূরে থাক, দিনের খাবার দিনে যোগাড় করতেই কষ্ট করতে হচ্ছে। কর্মহীন হয়ে পড়া এসব মানুষের পাশে দাঁড়ানোই এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি। তা না হলে, ক্ষুধার জ্বালায় খাদ্যের সন্ধানে অনেকে এ অবস্থার মধ্যেও বের হয়ে পড়তে পারে। যে সব দেশে ইতোমধ্যে করোনা সংক্রমিত হয়েছে সেসব দেশের সরকার জনগণের সহায়তায় আর্থিক সহযোগিতাসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে। পাকিস্তান সরকার এক কোটি নিম্নআয়ের মানুষকে ৪ মাসের সহায়তা হিসেবে এককালীন ১২ হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ভারতও দরিদ্র জনগোষ্ঠির সহায়তায় আর্থিক সহযোগিতা দিচ্ছে। কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালিসহ উন্নত বিশ্বের দেশগুলো তাদের জনগণকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে। বিশ্বের শীর্ষ বিশ অর্থনৈতিক দেশের নেতারা অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঠেকাতে ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের ফান্ড ঘোষণা করেছে। এ ফান্ড থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলোকেও অর্থের যোগান দেওয়া হবে। আমাদের দেশে সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক ও খাদ্য সহযোগিতার ঘোষণা দিলেও তা এখন পর্যন্ত পুরোপুরিভাবে শুরু না করা দুঃখজনক। অথচ এই কার্যক্রম অতিদ্রুত ব্যাপক পরিসরে শুরু করা দরকার। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে শ্রমশক্তি রয়েছে ৬ কোটি আট লাখ। এরমধ্যে ৫ কোটি ১৭ লাখ ৩৪ হাজার অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত। অর্থাৎ তারা দৈনিক ভিত্তিতে আয় করে। এদের বেশির ভাগই এখন কর্মহীন হয়ে বিপন্ন অবস্থার মধ্যে পড়েছে।
কর্মহীন হয়ে পড়া বিশাল সংখ্যক মানুষকে যদি সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতার আওতায় দ্রুত আনা না হয় তবে দেশ এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে। তখন করোনা মোকাবেলায় নেওয়া পদক্ষেপও অকার্যকর হয়ে পড়তে পারে। এক করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে গিয়ে আরেক মহাসংকটে পড়ার আগেই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। যত দেরি হবে কর্মহীন অসহায় মানুষের সংকটও তত তীব্র হয়ে উঠবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এ কাজ শুধুমাত্র একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নয়, এটি এখন পুরো সরকারের দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতোমধ্যে রাজধানীতে ব্যক্তি পর্যায়ে, দলগতভাবে এবং কয়েকটি বেসরকারি সংস্থ্যাকে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে। তবে বিচ্ছিন্ন এসব উদ্যোগের পাশাপাশি সমন্বিত উদ্যোগ সবচাইতে বেশি জরুরি। এই ব্যাপারে জন প্রতিনিধিদের এগিয়ে আসতে হবে। অসহায় মানুষের সাহায্যার্থে এলাকাভিত্তিক ত্রাণ তহবিল গঠন করতে হবে। এক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রেখে প্রকৃত অসহায় মানুষের সহযোগিতা করতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন