করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার কারণে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যে বহু দেশ থেকে কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে। কোটি কোটি মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। ফলে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বাড়বে। এর প্রভাব আমাদের দেশেও পড়েছে। করোনাভাইরাসের প্রকোপে ৬২ শতাংশ মানুষ কাজ হারিয়েছে। এদের মধ্যে বেশির ভাগই কাজ হারিয়েছে গত বছরের এপ্রিল-মে মাসে। অনেকে কাজে ফিরলেও তাদের আয় কমে গেছে। সেই সঙ্গে কমেছে কর্মঘণ্টা। আয় কমে যাওয়ায় ৫২ শতাংশ মানুষ খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। আবার অনেকের ঋণ বেড়েছে। কেউ কেউ সম্পদ বিক্রি করে দিয়েছে।
এদিকে, জীবন-জীবিকা বাঁচাতে করোনা মহামারীর শুরু থেকেই সরকার সচেষ্ট। দেশের বড়, মাঝারি ও ছোট ব্যবসায়ী, নিম্ন আয়ের মানুষ, দরিদ্র, এমনকি কর্মহীন মানুষের জন্য আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে অর্থ প্রদানে সদ্দিচ্ছার ঘাটতি দেখা যায়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে তদারকি জোরদার করেছে। তদারকি এখনো থেমে নেই। প্যাকেজ বাস্তবায়ন ও প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের শনাক্তে সরকারের সদিচ্ছারও অভাব নেই। কিন্তু এক্ষেত্রে বড় সমস্যা সরকারের হাতে গরিব, কর্মহীন, দিনমজুর, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পূর্ণাঙ্গ কোনো তালিকা নেই। করোনার কারণে নতুন দরিদ্রের সংখ্যা বেড়েছে। নতুন করে দরিদ্র হওয়া বা আয় কমে যাওয়া এসব মানুষ তালিকার বাইরে থেকে যাচ্ছে।
কঠোর লকডাউন শুরুর আগে প্রতিদিন সকালে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কাজের সন্ধানে অনেক শ্রমিকের জমায়েত দেখা যেত। মাটি কাটা, ইট-বালু টানা, রাজমিস্ত্রির জোগালি ও বাসাবাড়ি পরিষ্কার, বাসা বদলের কাজসহ বিভিন্ন ধরনের কাজে অভ্যস্ত এই মানুষগুলো এখন একেবারেই কর্মহীন। লকডাউনে তাদের কাজ বন্ধ। প্রতিদিনের আয় না থাকায় এই মানুষগুলো বিপাকে পড়েছে। তাদের অনেকে সপরিবারে ঢাকায় বসবাস করে। অনেকের পরিবার থাকে ঢাকার বাইরে। সেখানে নিয়মিত টাকা পাঠাতে হয়। প্রতিদিনের উপার্জনের ওপর নির্ভরশীল এই মানুষগুলো টাকার অভাবে গ্রামের বাড়িতে পরিবারের কাছে যেতে পারছে না টাকার অভাবে। লকডাউনে অনেককেই ধারদেনা করে চলতে হচ্ছে। অনেককেই খাবারের কষ্টেও পড়তে হয়েছে। শুধু পুরুষ শ্রমিকরাই নয়, রান্নাবান্না, ইট-বালু, সিমেন্ট ওঠানো-নামানো, টাইলস পরিষ্কার, ভবন ঢালাই, রাজমিস্ত্রির সহযোগী, বাসা ধোয়ামোছা, মাটি কাটা, ইট পরিষ্কার ও ভাঙা, টাইলস পুডিংয়ের কাজ করে এমন নারী শ্রমিকও বেকার সময় কাটাচ্ছে। লকডাউনের কারণে তাদেরও কাজ নেই।
পরিশেষে বলছি, কর্মহীন হয়ে পড়া বিশাল সংখ্যক মানুষকে যদি সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতার আওতায় দ্রুত আনা না হয় তবে দেশ এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে। অসহায় মানুষের সাহায্যার্থে ব্যাপক ত্রাণ তহবিল গঠন করতে হবে। এক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রেখে প্রকৃত অসহায় মানুষের সহযোগিতা করতে হবে।
লেখক: গবেষক, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান চাইল্ড কেয়ার ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, উত্তরা, ঢাকা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন