বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

‘রোজা আমারই জন্য’ কথাটির ব্যাখ্যা

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ২৯ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০৩ এএম

হযরত আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত হয়েছে- তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন : আদম সন্তানের প্রতিটি নেক আমলের বিনিময় দশগুণ হতে সাত শত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু আল্লাহতায়ালা বলেছেন : রোজা এই নিয়মের ব্যতিক্রম। কেননা, রোজা আমারই জন্য। অতএব, আমিই এর প্রতিফল দেব। রোজা পালনে আমার বান্দাহ আমারই সন্তোষ বিধানের জন্য স্বীয় ইচ্ছা-আকাক্সক্ষা, কামনা-বাসনা এবং নিজের পানাহার পরিত্যাগ করে থাকে। (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)।

এই হাদীসে উল্লিখিত আল্লাহপাকের বাণী : ‘রোজা আমারই জন্য এবং আমিই এর বিনিময় দেব’ কথাটির অন্তর্নিহিত অর্থ ও মর্ম এভাবে বিশ্লেষণ করা যায়। আল্লামা ইবনুল কায়্যিম (রহ:) বলেছেন : এই বাক্যের একটি অর্থ এই যে, এই রোজা একান্তভাবে আল্লাহর জন্য রাখা হয়েছে। এতে অন্য কেউই আল্লাহর সঙ্গে শরীক নেই এবং রোজা রেখে রোজাদার আল্লাহ ছাড়া আর কারোও ইবাদত করেনি। আর অন্য কারো সন্তুষ্টি লাভও তার কাম্য নয়। আর কারোও নিকট হতে সে এর প্রতিফল পেতে চায়নি। কেননা, অন্যান্য যে সকল ইবাদত দ্বারা মহান আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভ করা যায়, তদ্রুপ উপসনা মুশরিকরাও তাদের উপাস্যদের জন্য করে থাকে। কিন্তু রোজা সেরূপ নয়।

কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যই রোজা রাখা হয়েছে কিনা, পানহারও স্ত্রী সঙ্গগ পরিহার কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে হয়েছে কিনা, আর আল্লাহর বিধান মতো রোজা রাখা হয়েছে কিনা, তা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জানতে পারে না। আর পারে না বলেই আল্লাহপাক বলেছেন : রোজা আমারই জন্য এবং আমিই এর বিনিময় আমার ইচ্ছামত প্রদান করব। তাছাড়া অন্য সকল ইবাদতে কৃত্রিমতা, ছলনা, রিয়াকারী বা লোক দেখানো মনোবৃত্তি থাকা সম্ভব। কিন্তু রোজার বেলায় এসব আবিলতার কোনোই অবকাশ নেই। তাই রোজা একমাত্র আল্লাহরই জন্য। আর আল্লামা তায়্যিবী (রহ:) বলেছেন যে, রোজা আমারই জন্য কথাটিতে রোজার মর্যাদা ও বিশেষত্বকে প্রকাশ করা হয়েছে। এই মর্যাদা ও বিশেষত্বের দুটি কারণ সহজেই অনুধাবন করা যায়। প্রথম কারণ হলো এই যে, রোজার বাস্তবতা একটি গোপনীয় ব্যাপার মাত্র। যার জন্য ইহা একান্তভাবে আল্লাহর জন্যই হয়ে থাকে। অন্যান্য ইবাদত যেমন- নামায, হজ, যাকাত সেরূপ নয়। এগুলোর দৃশ্যমান অস্তিত্ব আছে। আল্লাহপাকের বাণী রোজা আমারই জন্য এবং আমিই এর বিনিময় প্রদান করব-এর মাঝে সেই বিশেষত্বের প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে। তাছাড়া রোজা হলো পানাহার। স্ত্রী সঙ্গম ইত্যাদি হতে বিরত থাকা। এর পাশ্চাতে অন্তর্নিহিত থাকে কেবলমাত্র নিয়্যত। আর নিয়্যত হলো একটি মানসিক অবস্থা বা মানসিকতা যা বাহির থেকে কেউ দেখতে পায় না বা উপলব্ধি করতে পারে না। এ জন্য কেউ যদি মুখে বলে যে, আমি রোজাদার প্রকৃতপক্ষে সে রোজাদার কিনা, কিংবা তার নিয়্যত সহীহ কিনা, তা নিঃসন্দেহে, অকাট্যভাবে ও অনস্বীকার্যরূপে কেউই ধরতে বা বুঝতে বা দেখতে পারে না। এ সকল অবস্থা নিঃসন্দেহে দেখতে, বুঝতে ও জানতে, পারেন একমাত্র আল্লাহ। আর এ জ্যই তিনি ঘোষণা করেছেন- রোজা আমারই জন্য এবং আমিই এর বিনিময় প্রদান করব। বস্তুত, রোজার যথাযথ প্রতিফল দেয়া আল্লাহ ছাড়া আর কারোও পক্ষে সম্ভব নয়।

আর দ্বিতীয় কারণ এই যে, রোজায় যা আছে তাহলো প্রবৃত্তি দমন, দৈহিক অবক্ষয়তাও কৃচ্ছ সাধন। এর জন্য প্রয়োজন হলো ক্ষুৎ পিপাসায় অপরিসীম ধৈর্যধারণ করা। কিন্তু অন্যান্য ইবাদত যেমন নামাজ, হজ ও যাকাত আদায়ে থাকে দৈহিক ব্যস্ততা ও অর্থ ব্যয় করা। ফলে এই দুই ধরনের ইবাদতের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য বিদ্যমান। এ জন্য নিছক পানাহার ও স্ত্রী সম্ভোগ পরিহার করাকেই রোজা বলা যায় না। বরং রোজার জন্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হলো নিয়্যতকে আল্লাহর জন্য খালেস করা। একনিষ্ঠাতা, আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের প্রত্যাশায় সকল প্রকার কৃত্রিমতা পরিহার করা। যেখানে থাকবে না কোনো রিয়াকারী বা লোক দেখানো মনোবৃত্তি ও যশ-মান-গৌরব লাভের কুটিল পরশ। একজন খাঁটি রোজাদারের সাধনার ফলও ধারাকে আল্লাহপাক এ জন্যই এই বলে অভিনন্দিত করেছেন যে, রোজা আমারই জন্য এবং আমিই তার বিনিময় প্রদান করব। আল্লাহপাক এভাবে রোজা আদায় করার তাওফিকে রাফীক আমাদের দান করুন। আমিন! আমীন!!

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন