শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মুমিনের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য

এ. কে. এম ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ৪ মে, ২০২০, ১২:০৩ এএম

মুমিন মুসলমানের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি ও রেজামন্দি হাসিল করা। এতদপ্রসঙ্গে, মহান রাব্বুল আলামীন কোরআনুল কারিমে বারবার তাকিদ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে : (ক) নিশ্চয়ই আমি আমার চেহারা নিবিষ্ট করেছি একনিষ্ঠভাবে সেই মহান সত্তার জন্য, যিনি আসমানসমূহ ও যমিন সৃষ্টি করেছেন। আর আমি অংশিবাদীদের অন্তর্ভুক্ত নই। (সূরা আল আনয়াম : আয়াত ৭৯)। (খ) আমি তার ইবাদত কেন করব না যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, আর তোমাদেরকে তার কাছেই প্রত্যাবর্তন করতে হবে। (সূরা ইয়ামীন : আয়াত ২২)। (গ) বল, নিশ্চয়ই আমার সালাত, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, যিনি কুল মাখলুকাতের প্রতিপালক। (সূরা আল আনয়াম : আয়াত ৬২)। (ঘ) কেবল তার মহান প্রভুর সন্তুষ্টির প্রত্যাশায়। আর অচিরেই সে সন্তোষ লাভ করবে। (সূরা লাইল : আয়াত ২০-২১)। (ঙ) আর মানুষের মধ্যে এমন লোকও আছে যে, আল্লাহর জন্য নিজেকে বিকিয়ে দেয়, আর আল্লাহপাক তাঁর বান্দাহদের প্রতি পরম স্নেহশীল। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২০৭)।

উল্লিখিত আয়াতসমূহের অর্থ ও মর্মের প্রতি লক্ষ্য করলে স্পষ্টত:ই অনুধাবন করা যায় যে, মুমিন জীবনের প্রতিটি আমল, প্রতিটি কাজ, প্রতিটি চিন্তা-চেতনা, প্রতিটি চেষ্টা, সাধনা, প্রতিটি নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসও প্রতিটি চলাফেরার পেছনে আল্লাহপাকের সন্তোষ অর্জনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। কেননা, আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত তাঁর বান্দাহদেরকে কেবলমাত্র তাঁরই এবাদত বন্দেগি করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। আল কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে: আর আমি জ্বিন ও মানুষকে কেবলমাত্র এ জন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার ইবাদত বন্দেগি করবে। (সূরা: যারিয়াত : আয়াত ৫৬)।

অপর এক আয়াতে ঘোষণা করা হয়েছে : বল, নিশ্চয়ই আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যেন আমি আল্লাহর ইবাদ করি, তারই জন্য একনিষ্ঠ করে আনুগত্যকে। (সূরা: যুমার : আয়াত ১১)। তাই, বান্দাহর প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি দন্ড ও পল আল্লাহর দেয়া বিধান অনুযায়ী অতিবাহিত করা উচিত। আর আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি হাসিল করতে হলে ব্যক্তি জীবন হতে শুরু করে, পরিবার, সমাজ, দেশ ও জাতির সকল অঙ্গনে ইসলামী বিধান চালু করতে হবে। ইসলামী বিধান বা কোরআনি শাসন ছাড়া একজন মুমিন বান্দাহর আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের সন্তুষ্টি হাসিল করা সম্ভব নয়। এ জন্য প্রধান কাজই হলো কোরআন, সুন্নাহ অনুযায়ী আল্লাহর যমীনে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা ও তদবির করা।

মানুষ সামাজিক জীব। প্রকৃতিগতভাবেই একজন মানুষ অপর একজন মানুষের সান্নিধ্য, সংস্পর্শ ও ভালোবাসার খোরে আষ্টেপৃষ্ঠে বাধা থাকে। এ জন্য মুমিন বান্দাহর উচিত একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই অন্যকে ভালোবাসা পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা:) এই দিক-নির্দেশনাই প্রদান করেন। (ক) হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন ঘোষণা করবেন : ওহে! যারা আমার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে পরস্পর ভালোবাসা স্থাপন করেছিল, তারা কোথায়? আজ আমি তাদেরকে আমার সুশীতল ছায়া তলে স্থান দেব। আর এদিনে আমার ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়াই নেই। (সূনানে দারেমী : ৩/২৭৯৯)। (খ) হযরত আবু হুরায়রা (রা:) হতে আরও বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, যখন কোনো ব্যক্তি তার এক ভাই এর সাথে সাক্ষাতের জন্য অন্য গ্রামে রওয়ানা হয় তখনকার চলার পথে আল্লাহপাক একজন ফিরিস্তা বসিয়ে দেন। সে যখন ফিরিশতার নিকটে আসে, ফিরিশতা তাকে জিজ্ঞসা করে, তুমি কোথায় গমন করতে ইচ্ছা করেছ? তখন লোকটির বলে, অমুক গ্রামের আমার ভাই এর সাথে সাক্ষাৎ করতে যাব। ফিরিশতা পুনরায় জিজ্ঞেস করে, তার কাছে কি তোমার কোনো উপহার পাওনা আছে? লোকটি বলে, না। বরং আমি তাকে মহামহিম আল্লাহর ওয়াস্তে ভালোবাসি। তখন ফিরিশতা বলে- আমি আল্লাহর প্রেরিত দূত হিসেবে বলছি, নিশ্চয়ই আল্লাহপাক তোমাকে এরূপ ভালোবাসেন। যেরূপ তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে অমুক ব্যক্তিকে ভালোবাস। (সহীহ মুসলিম : ৪/২৫৬৭)।

বস্তুত : জীবন চলার পথে যে সকল মুমিন সৌভাগ্যবান বলে বিবেচিত হন, তাদের পরিচয় ও রাসূলুল্লাহ (সা:) প্রদান করেছেন। হযরত সুহাইর (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, মুমিনের অবস্থা এত বিস্ময়কর প্রকৃতির হয়ে থাকে যে, তার সকল অবস্থা ও কাজই কল্যাণকর। আর এই সৌভাগ্য মুমিন ছাড়া আর কেউ লাভ করতে পারে না। সে যদি সুখে-স্বচ্ছন্দে থাকে, তাহলে শুকরিয়া আদায় করে। এ অবস্থা তার জন্য উত্তম। আর সে যদি দারিদ্র্য, অসুস্থতা এবং দুঃখ-কষ্টে পতিত হয়, তাহলে ধৈর্য ধারণ করে এটাও তার জন্য কল্যাণকর। (সহীহ মুসলিম ৪/২৯৯৯)।

মুমিন ব্যক্তিই প্রকৃতই ভালোবাসার প্রতীক। এতদপ্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, মুমিন মহব্বত ও দয়ার প্রতীক। ওই ব্যক্তির মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই যে কারো সাথে মহব্বত রাখে না এবং মহব্বত প্রাপ্তও হয় না। (মুসনাদে-আহমাদ: ১/১৮০)।

অতএব, সিয়াম সাধনার এই পবিত্র মাসে মুমিন-মুসলমানদের উচিত রোজা রেখে অতিরিক্ত কথা না বলা। অপ্রয়োজনীয় কাজ, অনুষ্ঠান, বাগাড়ম্বর পরিহার করা। কারো সাথে ঝগড়া-ফ্যাসাদ না করা, অধিকহারে কোরআন শরীফ তিলাওয়াত করা ও যিকির-আযকারে নিমগ্ন থাকা, মিথ্যা কথা না বলা। কারোও সমালোচনায় লিপ্ত না হওয়া। রোজার হক যথাযথভাবে আদায় করা। যে কোনো ধরনের ইন্দ্রিয় তৃপ্তিকর আলাপ-আলোচনা থেকে বিরত থাকা। অশ্লীল-অশালীন ছবি চিত্র দেখা হতে নিবৃত থাকা। মুখ দিয়ে কোনো কিছুর স্বাদ গ্রহণ না করা। গরম ও রোদের কারণে বারবার কুলি না করা। অধিক উচ্চতার কারণে গায়ে ভেজা কাপড় জড়িয়ে না রাখা। সাধ্য অনুপাতে দান-সদকাহ করা। শরীয়ত নির্দেশিত যাবতীয় অবৈধ কাজ এড়িয়ে চলা ইত্যাদি। এই শ্রেণির মুমিন মুসলমানদেরকে নূর নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা:) শুভ সংবাদ প্রদান করেছেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে না তার উপর জুলুম করবে, আর না তাকে শত্রুর হাতে সোপর্দ করবে। যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাই এর প্রয়োজন পূরণে সচেষ্ট হয়, আল্লাহপাক তার প্রয়োজন পূরণ করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের কোনো অসুবিধা বা বিপদ দূর করে দেয়, আল্লাহপাক এর বিনিময়ে কিয়ামতের দিন তার কষ্ট ও বিপদের অংশ বিশেষ দূর করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ গোপন রাখে, কিয়ামতের দিন আল্লাহপাক তার দোষ গোপন রাখবেন। (সহীহ বুখারী : ৩/২৪৪২।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন