জো বা য়ে র রা জু
তুমুল বেগে বৃষ্টি হচ্ছে। স্কুল অনেকক্ষণ আগেই ছুটি হয়ে গেছে। ছুটির সাথে সাথ সবাই যে যার বাড়ি চলে গেলেও রাকিকা মন খারাপ করে স্কুলের বারান্দায় বসে আছে। কারণ রাকিকার ছাতা নেই। তার সব বন্ধুদের ছাতা আছে। রাকিকার ছাতাটা গত সপ্তাহে হারিয়ে গেছে। ভয়ে বাবাকে আর বলা হয়নি। বললে বাবা নিশ্চয় রাকিকাকে বকাবকি করবেন।
রাকিকার বাবা একজন কৃষক। সংসারে তাদের অনেক অভাব। যেখানে বাবা ঠিকমত বাজার সদাই করতে পারেন না, সেখানে রাকিকা কিভাবে বাবাকে নতুন একটা ছাতা কিনে দিতে বলবে? আবার ছাতাটাও তার ভীষণ দরকার।
এখন বর্ষাকাল। বেলায় অবেলায় বৃষ্টি নামে। ছাতা থাকলে স্কুলে যেতে ভয় নেই। গতকাল স্কুলে আসার সময় খুব বৃষ্টি ছিল বলে রাকিকা স্কুলে আসতে পারেনি। আজ ক্লাসে কনা ম্যাডাম রাকিককে কান ধরিয়ে বেঞ্চের উপর দশ মিনিট দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। ক্লাসের সব চেয়ে দুষ্ট মেয়ে মিম রাকিকার কান ধরানো দেখে খিলখিলিয়ে হেসে উঠল। কনা ম্যাডাম ধমক দিয়ে মিমকে বললÑ ‘তুমি হাসলে কেন মিম? খুব পাজি হয়েছো বদ মেয়ে কোথাকার!’ মিম নিচের দিকে তাকিয়ে বললÑ‘স্যরি ম্যাডাম।’
না, আজ বৃষ্টি থামার কোন লক্ষণ নেই। হেডমাষ্টার ক্লাসের প্রতিটি কক্ষে তালা মেরে উনার কালো ছাতাটা মেলে রাকিকার চোখের সামনে দিয়ে হনহনিয়ে চলে গেলেন।
আকাশের দিকে তাকাতেই রাকিকা চমকে উঠল। ওমা! আকাশ মেঘে আরো কালো হয়ে আছে। দমকা বেগে বৃষ্টি বাড়ার সম্ভাবনা আরো বেশী। ভাবতে ভাবতে ঠিকই রাকিকা দেখতে পেল তুমুল বেগে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল।
স্কুলে রাকিকা ছাড়া আর কোন প্রাণী নেই। স্কুলের পেছনে যে বিশাল কদম গাছটি, মাঝে মাঝে সেখান থেকে কি একটা পাখির ভয়ংকর ডাক ভেসে আছে। খুব ভয় লাগল রাকিকার। পাখির ডাক এত ভয়ংকর হতে পারে, তার জানা ছিল না। আচ্ছা এটা পাখির ডাক না অন্য কিছু! ভুত নয় তো। এই স্কুলের মাঠে নাকি অনেকগুলি ভুত দেখা যায়! গাদা পোশাক পরা বিকাশ আকৃতির লম্বা লম্বা ভুত নাকি স্কুলের মাঠে রাত দুপুরে দৌড়াদৌড়ি করে। রাকিকাদের ক্লাসের মিমি প্রায়ই একথা বলে। মিমিদের বাড়ি স্কুলের খুব কাছে। মাঝে মাঝে মিমি আর তার রিমা আপা জানালা দিয়ে স্কুলের মাঠে আসা রাতের ভুতগুলিকে দেখে।
এসব ভাবতে ভাবতে রাকিকা ভয় পেতে থাকে। এখন যদি একটা ভুত এসে তার সামনে দাঁড়ায়? তাহলে সে কোথায় গিয়ে পালাবে! ওমা! ঈরিবেশ দেখছি মেঘে মেঘে কালো হয়ে গেছে। বৃষ্টির গতি দ্বিগুণ বাড়ছে। না, রাকিকার আর এখানে এক মিনিটও থাকা নিরাপদ নয়। সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভিজে ভিজে বাড়ি যাবে। এছাড়া আর কোন উপায়ও নেই।
আর কোন কিছু না ভেবে রাকিকা স্কুলের ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে বারান্দা থেকে নেমে সোজা বৃষ্টিতে ভিজে বাড়িতে রওনা দিল। বাড়িতে আসার পর রাকিকার মা তাকে বললÑ‘এভাবে ভিজে এলে যে! যদি জ্বর আসে?’ রাকিকা কোন কিছু না বলে শীতে ঠকঠক করে কাঁপতে লাগল।
রাতে সত্যি সত্যি রাকিকার কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এল। রাকিকার মা আর বাবা দুজনেই রাকিকার এই অবস্থা দেখে পাগলের মত হয়ে উঠল। জ্বরের ঘোরে রাকিকা সারা রাত আবোল তাবোল বকতে লাগল। “আমার একটা ছাতা লাগবে”Ñজ¦রে আক্রান্ত অচেতন রাকিকার এই কথাটি তার বাবার কানে বেশ কয়েকবার পৌঁছলো।
রাকিকার সেই জ্বর কমলো তিনদিন পর। সুস্থ হওয়ার পর রাকিকা দেখতে পেল তার পড়ার টেবিলে সুন্দর একটা রঙ্গিন ছাতা পড়ে আছে। “ছাতাটা কার?”Ñরাকিকার এমন প্রশ্নে মা বললÑ“জ্বরের ঘোরে ছাতা ছাতা বলে চেঁচামেচি করেছো দেখে তোমার বাবা তোমার জন্যে এই ছাতাটা কিনে এনেছেন।”
ছাতাটা পেয়ে রাকিকা খুব খুশি হলো সত্য, কিন্তু সে কখন ছাতার জন্যে আবদার করেছে, সেটা মনে পড়ছে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন