ঝুঁকিপূর্ণ পথে বিদেশ পাড়ি বন্ধ হচ্ছে না। ভাগ্য বদলাতে গিয়ে অনেকেই মানবপাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করছেন। বিপজ্জনক পথে মানবপাচার যে বন্ধ হয়নি তার সর্বশেষ উদাহরণ লিবিয়ায় পাচারকারীদের গুলিতে ২৬ বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনা।
এর আগেও গত বছর লিবিয়া থেকে ভ‚মধ্যসাগর হয়ে ইতালি যাওয়া বাংলাদেশের লোকজনের নৌকাডুবির ঘটনা। তিউনিসিয়ার উপক‚লে ভ‚মধ্যসাগরে ওই ঘটনায় বাংলাদেশি নাগরিকদের হতাহতের ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে লিবিয়ায় ২৬ জন বাংলাদেশি নিহতের ঘটনায় মানবপাচারকারী চক্রের অন্যতম হোতা কামাল হোসেন ওরফে হাজী কামালকে (৫৫) গ্রেফতার করেছে র্যাব। গতকাল সোমবার সকালে র্যাব-৩ এর একটি দল রাজধানীর গুলশান থানাধীন শাহজাদপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে। তবে ধরাছোঁয়ার বাইরে মুক্তিপণ আদায়কারী চক্র।
র্যাব-৩ এর সিনিয়র এএসপি আবু জাফর মো. রহমাতুল্লাহ বলেন, লিবিয়ায় ২৬ জন বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনাটি দেশ-বিদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যকর। ওই ঘটনায় তদন্তে মানবপাচারকারী হিসেবে কামাল হোসেন ওরফে হাজী কামালের নাম উঠে আসে। সোমবার তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাচারকারীচক্র সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। জব্দ করা হয়েছে পাসপোর্ট।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি গোয়েন্দা সংস্থার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ ছাড়াও ইউরোপ আমেরিকার পথে শতশত বাংলাদেশি নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রতি বছর শতাধিক মানুষ মারা যাচ্ছেন। থাই-মালয় সীমান্তের গভীর জঙ্গলেও শতাধিক গুপ্ত আস্তানায় বাংলাদেশিদের আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করা হচ্ছে।
র্যাবের একজন কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতারকৃত হাজী কামালের বাবার নাম জামাত আলী মন্ডল, কুষ্টিয়া সদর থানার বাসিন্দা। গ্র্রেফতারকৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, সে মিথ্যা আশ্বাস প্রদান করে বিদেশে কর্মসংস্থানের প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর যাবত এই অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত আছে বলে স্বীকার করে। এই সিন্ডিকেটটি ৩টি ধাপে কাজগুলো করতো বলে জানা যায়। এর মধ্যে বিদেশে গমনেচ্ছুুক নির্বাচন, বাংলাদেশ হতে লিবিয়ায় প্রেরণ এবং লিবিয়া হতে ইউরোপ প্রেরণ।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, এই চক্রের এজেন্টরা প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বল্প আয়ের মানুষদের অল্প খরচে উন্নত দেশে গমনের প্রলোভন দেখিয়ে আকৃষ্ট করে থাকে। ইউরোপ গমনের ক্ষেত্রে তারা ৭-৮ লাখ টাকার অধিক অর্থ নেয়। লিবিয়াতে প্রেরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-কলকাতা-মুম্বাই-দুবাই-মিশর-বেনগাজী-ত্রিপলী (লিবিয়া) রুটটি ব্যবহার করে পাচারকারী চক্র।
র্যাব-এর একজন কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতারকৃত হাজী কামাল কুখ্যাত দালাল চক্রের অন্যতম মূলহোতা। সে গত ১০ থেকে ১২ বছর ধরে অবৈধভাবে লিবিয়াতে প্রায় ৪০০ বাংলাদেশিকে প্রেরণ করেছে। লিবিয়া ছাড়াও সে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অবৈধ প্রক্রিয়ায় অভিবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে।
এদিকে মাদারীপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, লিবিয়ায় বাংলাদেশিদের মানবপাচার ও হত্যার ঘটনায় মাদারীপুর সদর মডেল থানায় একটি এবং রাজৈর থানায় ২টি মামলা দায়ের করেছে নিহত ৩ জনের পরিবার। মামলায় ১৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। এই ঘটনায় দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন