লকডাউন প্রত্যাহার ও গণপরিবহন চালু হওয়ায় দিনাজপুরের লিচু ব্যবসায়ীরা প্রাণ ফিরে পেয়েছেন। অবিক্রিত থাকার আশঙ্কায় লকডাউনের সময় পানির দামে লিচু বিক্রি শুরু করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। জীবিকার স্বার্থে লকডাউন প্রত্যাহার ও গণপরিবহন চালু করার ঘোষণায় দৃশ্যপট যেন পাল্টে যায়।
দেশের অর্থনীতির চাকা গতিশীল রাখার কারিগর কৃষকরা ধানসহ অন্যান্য পণ্যের ন্যায্যমূল্য না পেলেও মৌসুমী ফল লিচুর ক্ষেত্রে উল্টো চিত্র দেখা দিয়েছে। ক্রেতাদের চাপে হিমশিম খেতে হচ্ছে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের। ফড়িয়া বেপারীরা বাজারে নয়, ছুটছে কৃষকের বাগান ও বাড়িতে। ফলে মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে লিচু’র দাম বেড়ে দ্বিগুণের বেশি হয়ে যায়।
লিচুর মূল বাজার শুরু হয়েছে গত সোমবার থেকে। প্রথম দিন লিচুর দাম না থাকলেও দ্বিতীয় দিনে দাম বেড়ে যায়। ২ থেকে আড়াইহাজার টাকার বেদেনা লিচু’র দাম বেড়ে সাড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার ও ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকার চায়না থ্রি লিচু ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা দরে বিক্রি হতে থাকে। তারপরেও মানসম্মত লিচু পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। ব্যবসায়ীদের আশা আগামী দুই তিন দিনের মধ্যে দাম আরো বাড়বে। ফলে তারা যে ক্ষতির আশঙ্কা করেছিল তা কেটে গেছে এবং কৃষক ব্যবসায়ী সন্তুষ্ট।
প্রতিবছরের মত এবারও দিনাজপুরে লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার প্রায় এক হাজার হেক্টর বেশি জমিতে লিচু আবাদ হয়েছে। নদী-বন্দর এলাকা না হলেও এবার ঘূর্ণিঝড় আম্পান আঘাত হানে দিনাজপুরসহ উত্তরের অনেক জেলায়। ঝড়ে ক্ষতির পর যা লিচু ছিল তা নিয়েও দুশ্চিন্তায় পড়ে বাগান মালিক, ফড়িয়া ও ব্যবসায়ীরা।
দিনাজপুরের লিচুর সিংহভাগই যায় জেলার বাহিরে। বাগানগুলোও আগে ভাগে কিনে রাখে ফড়িয়ারা। করোনার প্রভাবে সৃষ্টি হয় অচলাবস্থা। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ফড়িয়ারা দিনাজপুরে আসতে পারে না। ফলে বাগানের পরিচর্যা থেকে সার বা ভিটামিন প্রয়োগ করা সম্ভব হয় না। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার লিচুর সাইজ একটু ছোট হয়েছে। ফলন যাই হোক করোনা’র কারণে কৃষকরা এবার লিচু থেকে কোন অর্থ পাবে না বলেই ধরে নিয়েছিল।
দুশ্চিন্তার মেঘ মাথায় নিয়ে কৃষকরা পুরোপুরি পরিপক্ক না হতেই গাছ থেকে লিচু পাড়তে শুরু করে। উদ্দেশ্য আগে ভাগে যতটুকু দাম পাওয়া যায়। মে মাসের শেষ থেকেই বাজারে লিচু উঠতে শুরু করে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে দিনাজপুরের নিউ মার্কেট এলাকার লিচু বাজার বন্ধ করে দিয়ে স্থানীয় গোর-এ-শহীদ মাঠের দক্ষিণ প্রান্তের খোলা জায়গায় স্থানান্তর করা হয়। গত মঙ্গলবার বাজারের উদ্বোধন করেন দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুল আলম। এ সময় তিনি ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সকল সুযোগ সুবিধা নিশ্চিতের কথা জানান।
প্রথম দু-তিন দিন বাজারে বিপুল পরিমাণ লিচু উঠলেও ক্রেতা সমাগম কম হয়। ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়ে পড়ে। বিক্রি হয় স্মরণাতীতকালে সর্বনিম্ন দামে। মাদ্রাজি জাতের লিচু বিক্রি হয় ৫ থেকে ৬শ’ টাকা হাজার দরে। ঐতিহ্যবাহী বেদেনা লিচু বিক্রি ১৫শ’ থেকে দুই হাজার টাকা দরে। মাত্র দু’দিনের ব্যবধানে বাজারে ক্রেতারা যেন হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এক লাফে সকল লিচু’র দাম বেড়ে যায় দ্বিগুণের বেশি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন