অনেক ফলের সংমিশ্রনে মধু মাস মানেই জিভে পানি আসবে। আম, জাম, লিচু ও কাঁঠাল- এই চারটি ফল মধু মাসে কমবেশি সবার ঘরেই থাকবে। বিশেষ করে লিচুর নাম শুনলেই একবার হলেও মুখে দিতে ইচ্ছা জাগে। আর দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী বেদেনা ও চায়না থ্রি লিচুর নাগাল পেতে আর ক’টা দিন ধৈর্য ধরতে হবে।
বেদেনা ও চায়না লিচুর জন্য অপেক্ষায় থাকার মধ্যেই বাজারে এসে গেছে দিনাজপুরের অন্যান্য জাতের লিচু। নির্ধারিত সময়ের দু’সপ্তাহ আগেই লিচু বিক্রি শুরু হয়ে গেছে। গত সোমবার দিনাজপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আনুষ্ঠানিকভাবে লিচু বাজার উদ্বোধন করা হয়েছে।
এদিকে দু’সপ্তাহ আগে বাগানের গাছে থোকায় থোকায় ঝুলে থাকা নামানো অপরিপক্ক লিচুর স্বাদ সামান্য হলেও হেরফের রয়েছে। এসব লিচু একটু কম দামে মধুমাসের রসালো ফল হিসাবে বিক্রি হচ্ছে। তবে বেদেনা ও চায়না থ্রি লিচু পেতে কমপক্ষে আরো ১০ দিন অপেক্ষা করতে হবে।
কিন্তু রসালো লিচুর ব্যাপারে এবার দুঃসংবাদ আছে। আর তা হচ্ছে এবার ভাল মানের বেদেনা ও চায়না থ্রি লিচু অনেকটা দুষ্প্রাপ্র হবে। কেননা এই দুটি জাতের লিচুর ফলন অতীতের মতো তেমন একটা নই বললেও চলে। যতটুকু আছে তাও আকারে অনেক ছোট। আবার দামেও অনেক চড়া। লিচু ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার টাকা দিয়েও বেদেনা ও চায়না থ্রি লিচু পাওয়া মুশকিল হবে।
দিনাজপুর কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী এবার জেলার ১৩ উপজেলায় ৫ হাজার ৪৮১ হেক্টর জমিতে লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ৩০ হাজার মেট্রিক টনের বেশি লিচু উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারনে এবার বেদেনা ও চায়না থ্রি লিচুর ফলন অর্ধেকও হবে না। এই দুটো লিচুর ফলনে কেন এমন বিপর্যয় তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানাতে পারেনি।
কৃষকদের মতে চলতি বছর হচ্ছে বেদেনা ও চায়না থ্রি’র অফ-ইয়ার। অফ ইয়ার বলতে গত দুই তিন বছর যে গাছে ভাল ফলন হয় সে সব গাছে এবার মুকুলই আসেনি। আর মাঝে তীব্র খরায় মুকুলের ক্ষতি হয়েছে। তাই বেদেনা ও চায়না থ্রি লিচু’র ফলন এবার গতবারের তুলনায় অর্ধেকের কম যে হবে তা ইতোমধ্যে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
অন্যদিকে মাদ্রাজি, বোম্বে ও হরিয়ানাসহ আরো কয়েকটি জাতের লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। এসব লিচুর সঙ্কট হবে না। বাজার উদ্বোধন হলেও পরিপক্ক লিচু এখনও না আসায় কুরিয়ারগুলো এখনো অলস বসে রয়েছে। তবে সরাসরি বাগান থেকে মাদ্রাজি ও অপরিপক্ক দানা ছোট বেদেনা ও চায়না থ্রি লিচু ট্রাকে করে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় যেতে শুরু করেছে।
এদিকে ভিআইপি খ্যাত বেদেনা ও চায়না থ্রি লিচুর ফলন কম হওয়ায় ব্যাপারী থেকে কুরিয়ার সকলের মাথায় হাত পড়েছে। কেননা এই দুই জাতের লিচুতেই তাদের মূল ব্যবসা হয়ে থাকে। এই দু’টি লিচু দামের জন্য সকলেই খায় না বা খেতে পারে না। কেবলমাত্র বিত্তশালী, আত্মীয়-স্বজন ও বিশেষ করে উপরমহলে পাঠানো হয়। কিন্তু এবার সেই আশাতেও গুড়েবালি।
দিনাজপুর থেকে প্রতিদিনই ট্রাকে করে লিচু যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায়। আগামী ১০ দিনের মধ্যে বেদেনা ও চায়না থ্রি লিচু বাজারজাত হলে কুরিয়ার, দূরপাল্লার কোচে হাজার হাজার ঝুড়ি লিচু যাবে কাঙ্খিত স্বজন বন্ধুদের কাছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন