বাগানে ঝুলে আছে টসটসে লোভনীয় রসালো লিচু। এখন আর চাষিদের দম ফেলার ফুরসত নেই। পাবনায় মধু মাসের লিচুর ফলন ভালো হওয়াতে চাষিরা বেজায় খুশি। তাদের আশা চলতি বছর লিচুর ভালো দাম পাবেন।
পাবনার সাহাপুর গ্রামের সবজি ব্যবসায়ী মিরাজুল ইসলামের নিজের কোন বাগান নেই। এবার প্রায় দুই লাখ টাকায় ৫০টি গাছের দুটি বাগান কিনে পরিচর্যা করেন। সার, কীটনাশক ও শ্রমিকসহ খরচ হয়েছে প্রায় ৫ লাখ টাকা। বাগানের প্রতিটি গাছ থেকে ১২ থেকে ১৫ হাজার লিচুর ফলন পাওয়া যাচ্ছে। তিনি জানান, বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে দুটি বাগান থেকে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকার লিচু পাওয়া যাবে। মাত্র দুই থেকে আড়াই মাসের পরিশ্রমে লিচুর ব্যবসা থেকে ভালো লাভ পাওয়া সম্ভব।
পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, জেলায় এক হাজার ৭৩১ হেক্টর লিচু বাগান। বাগান থেকে ৪২ হাজার ৫৭৯ মেট্রিক টনের বেশি লিচু পাওয়া যাবে। কৃষি বিভাগ ধারণা করছে, পাবনায় এবার লিচুর বাণিজ্য ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
ইতোমধ্যে পাবনায় লিচু সংগ্রহ শুরু হয়েছে এবং বাজারে বিক্রি হচ্ছে। পাবনা ও ঈশ্বরদী উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায় গাছ থেকে লিচু আহরণ, বাছাই এবং প্যাকেট করার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। পাবনা সদরের দাপুনিয়া ইউনিয়নের লিচু চাষি মো. উজ্জ্বল জানান, গত কয়েক বছরের চেয়ে এবার বাগানে লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ ও ঝড় বৃষ্টির কবলে না পড়লে ভালো লাভ হবে।
একই এলাকার প্রাণ কৃষ্ণ বাবু প্রায় ২০ বিঘা জমিতে লিচুর চাষ করেছেন। তিনি বাগানে বসে কয়েকজন শ্রমিককে দিয়ে লিচু বিক্রির জন্য প্রস্তুত করছেন। বাবু জানান, এবার লিচুর ফলন বেশি হয়েছে এবং উপযুক্ত দাম পেলে ভালোই লাভ হবে। তিনি বাগানের লিচু ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন।
আওতাপাড়া লিচু বাগানের ইজারাদার মনিরুল ইসলাম লিখন বলেন, তারা কয়েকজন মিলে ৬০ বিঘা লিচুর বাগানের ইজারা নিয়েছেন। পরিবহন ও শ্রমিক ব্যয় বেড়ে যাওয়া ও লিচুর ফলন বেশি হওয়াতে লাভ বেশি হবে না বলে মনে করেন। তিনি আরো বলেন, গত বছর একটি মাঝারি আকারের গাছ থেকে ৮ থেকে ১০ হাজারের বেশি লিচু পাওয়া যায়নি। একই আকারের গাছ থেকে এবার ১২ থেকে ১৫ হাজার লিচু পাওয়া যাচ্ছে। গত বছর প্রতি হাজার লিচু ২২০০ থেকে ২৩০০ টাকায় বিক্রি করলেও চলতি বছর ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকার বেশি পাওয়া যাচ্ছে না।
পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. মিজানুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, ক্ষণস্থায়ী ফলনের জন্য লিচুর প্রতি সবার আগ্রহ থাকে। আর পাবনায় গ্রীষ্মের শুরু থেকেই লিচু পাকতে শুরু করে। বিভিন্ন জাতের লিচু পাওয়া যায় গ্রীষ্মের শেষ পর্যন্ত। বাণিজ্যিকভাবে লিচুর চাষ বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লিচু নিয়ে মৌসুমী ব্যবসায়ীদের জন্য বড় সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন