মহামারী করোনাভাইরাস, সুপার সাইক্লোন আম্পান ও কালবৈশাখীর ঝড়ে কৃষি খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে সবজি চাষিদের এবার যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠা খুব কঠিন। পরবর্তী আবাদ করার মতো বীজ বা টাকা কৃষকের নেই। সর্বশান্ত এসব কৃষকের পাশে কেউ নেই। এখন পর্যন্ত তারা সরকারের কোন সহযোগিতা বা প্রণোদনা পাচ্ছে না।
কৃষক বলছেন, একের পর এক দুর্যোগে কোটি কোটি টাকার সবজি ক্ষেতে নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া করোনার সময় সাধারণ মানুষকে অনেকে সবজি ত্রাণ হিসেবে দিয়েছেন। সরকার যদি এই মুহূর্তে তাদেরকে সহযোগিতা না করে, বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা না করে তাহলে কৃষক চাষাবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন।
চলতি বছরের মার্চ মাসে কৃষকের ক্ষেতে যখন সবজি ভরপুর তখনই বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু। করোনার কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে এবং সকলকে ঘরে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়। বিভিন্ন জেলায় শুরু হয় লকডাউন। অফিস-আদালত, কল-কারখানা সব বন্ধ হয়ে যায়। এতে যোগাযোগ ব্যবস্থা তথা গাড়ি চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে কৃষক যে সবজি আবাদ করেছিলেন তা ক্ষেতেই পঁচতে শুরু করে। বাজারে নিয়েও ব্যাপারি বা ক্রেতা না পেয়ে সবজি বিক্রি করতে পারেনি।
শেরপুরের সীমান্তবর্তী এলাকা ঝিনাইগাতীতে আম্পানের প্রভাবে ঝড়ো বাতাস এবং টানা বৃষ্টিতে দেড় শতাধিক কৃষকের সবজি ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝড় ও বৃষ্টিতে উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের সন্ধ্যাকুড়া ও গোমড়া গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে।
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে জেলার আরেক উপজেলা শ্রীবরদীর তিনটি গ্রামের ৬০ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হন। এ ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। এ অবস্থায় ঘুরে দাঁড়াতে তারা সরকারি সহায়তা চেয়েছেন।
ঝিনাইগাতীর গোমড়া গ্রামের কৃষক আসমত আলী বলেন, ঝড়ের কারণে কলা ও লিচু বাগান, আম, কাঁঠাল নষ্ট হয়েছে। এছাড়া করলা, ঢেড়স, কাকরোলের মাচা বিধ্বস্ত হয়েছে। কৃষাণী সুরাইয়া বেগম জানান, তিনি ২৫ শতাংশ জমিতে কাকরোল চাষ করেছিলেন। কালবৈশাখীর ঝড়ে তার ক্ষেতের মাচাগুলো সব ভেঙে মাটিতে পড়ে গেছে। এ কারণে তার পুরো সবজির ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। ওই জমির সবজি আবাদের টাকায় তার পাঁচ সদস্যের সংসার চলে। এখন সে সংসার চালাবে কিভাবে এই চিন্তায় দিশেহারা। নতুন করে আবাদ করার জন্য বীজ বা টাকা কোনটাই তার কাছে নেই। তাই সরকারি সহায়তার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
ঝড় বৃষ্টিতে খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, ইশ্বরদী, কুষ্টিয়াসহ দেশের অধিকাংশ জেলায় কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। একের পর এক দুর্যোগে অনেক কৃষক একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। করোনাভাইরাসের পর আম্পান এবং এরপর কালবৈশাখী ঝড় ও টানা বৃষ্টিতে ক্ষেতের ফসল সব শেষ। শসা, চিচিংগা, ঝিঙে, বরবটি, মিষ্টি কুমড়া, করলা, ঢেড়স, কাকরোল, কচুর মুখী, লাউসহ অনেক রকম সবজি করোনার সময় বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে পারেনি। পরে ডিসি এবং ইউএনওকে ত্রাণ হিসেবে বিলি করা জন্য এসব সবজি অনেক কৃষক দিয়ে দিয়েছেন। গত তিন মাসে সবজি আবাদ থেকে অনেক কৃষকের কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে এখনো সরকারের পক্ষ থেকে কোন সহযোগিতা বা প্রণোদনা দেয়া হয়নি। কৃষকরা বলেন, তাদের কাছে এখন পর্যন্ত কোনো সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী যোগাযোগ করেননি। প্রণোদনার কথা শুধু টেলিভিশনের খবরে শুনেছি। ঝড় বৃষ্টির পর একজন সবজি ক্ষেত দেখার জন্য একজন কর্মচারী এসেছিল। সে ক্ষয়-ক্ষতির বিস্তারিত তথ্য নিয়ে গেছে।
শ্রীবরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন দিলদার জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী জমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহযোগিতা এবং ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করতে প্রণোদনা দেবে সরকার। ওইসব প্রণোদনা হাতে পৌঁছলে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সার ও বীজ দিয়ে সহায়তা করা হবে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সরকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের যে প্রণোদনা দিতে চেয়েছে তা এখনই দেয়া দরকার। কৃষক যেন টাকার অভাবে তার উৎপাদন বন্ধ না রাখে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন