বহুদিন পর ইনকিলাব পত্রিকার দুয়ারে এলাম! বলতে এসেছিলাম কিছু আশার কথা। বলতে এসেছিলাম, পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, তিতাস, জলঙ্গী, ইছামতি, কর্ণফুলি, করতোয়া, কীর্তনখোলা, সুরমা, গোমতী, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ক্ষীর, পারুয়া প্রভৃতি শত নদীর পুতঃধারায় স্নাত বাংলাদেশের মহিমার কথা।
আগুন, পানি, বাতাস ও মাটি, আল্লাহতায়ালার এই চারটি নেয়ামতকে, পৃথিবীতে ক্ল্যাসিক্যাল উপাদান বলা হয়েছে। সেই নেয়ামাতের অন্তত একটি উপাদান, পানি সম্পদে সমৃদ্ধ ছিল যে বাংলাদেশ, তার গৌরবের কথা বলতে এসেছিলাম।
ষড়ঋতুর ঋতু বৈচিত্র্যে বর্ণিল, স্নিগ্ধ সবুজ বনানী, বাহারী ফুলের মন মাতানো সৌরভে সুরভিত, পেলব উর্বর পলিমাটির দেশ, আমার বাংলাদেশের কথা বলতে এসেছিলাম।
হজরত শাহজালাল, খান জাহান আলী, বায়েজিদ বোস্তামী, আমানত শাহ, শাহ মখদুম, শাহ পরান প্রমুখ পূণ্যাত্মা শত আউলিয়ার স্মৃতিধন্য বাংলাদেশের কথা বলতে এসেছিলাম।
আমি, এক লক্ষ বত্রিশ হাজার মসজিদের ঐতিহ্য, তার স্থাপত্যরীতি, রুচি, নক্সা, সূক্ষ্ম ছন্দোময় ক্যালিওগ্রাফির কথা বলতে এসেছিলাম। লালবাগ মসজিদ, ষাটগম্বুজ মসজিদ, তারা মসজিদ, কুতুবশাহী মসজিদ, এগারো সিন্দুরের শাহী মসজিদ, রাজশাহীর কুসুমবা মসজিদ প্রভৃতির গর্বিত ঐতিহ্যের কথা বলতে এসেছিলাম।
আমি, নওয়াব সিরাজউদ্দৌলা, তিতুমীর, হাজী শরিয়তুল্লাহ, মুন্সী মেহেরউল্লাহ, দুদু মিয়া, সৈয়দ আহমদ বেরেলভী, চাঁদ সুলতানা, চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন খ্যাত সিপাহী বিপ্লবের বীর হাবিলদার রজব আলী, বেগম জিনাত মহল, পূর্ববাংলায় মুসলিম শিক্ষাবিস্তারের পথিকৃত নওয়াব সলিমুল্লাহসহ অগনিত ত্যাগী বীর, স্বাধীনতার শহীদানের কথা বলতে এসেছিলাম।
আল্লাহর দেয়া নেয়ামত, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাস সম্পদের কথা বলতে এসেছিলাম। তেঁতুলিয়ার শাহবাহনে পাওয়া এবং সিলেটের হরিপুরে পাওয়া খনিজ তেল সম্পদ, দিনাজপুরের কয়লা, রংপুরের হার্ডরক, জয়পুরহাটের চুনাপাথর, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের বালিতে পাওয়া মূল্যবান ব্লাক গোল্ড, দেশের মাটিতে লুকানো প্রভৃতি ঐশ্বর্যের কথা বলতে এসেছিলাম।
আমি বলতে এসেছিলাম, ১৪ শতাব্দীর কবি শাহ মহম্মদ সগীর, ১৬ শতাব্দীর সৈয়দ সুলতান এবং আলাওল থেকে উনবিংশ শতাব্দীর ইসলামী রেনেসাঁর কবি কাজী নজরুল ইসলাম, গ্রাম বাংলার কবি জসীমউদ্দিন, সাত সাগরের মাঝি ফররুখ আহমদের কাব্য সুষমার কথা। জয়নুল আবেদীন, এস এম সুলতানের পেন্টিংস, লালন-হাসনের আধ্যাত্মিক গান, পদ্মানদীর মাঝির ভাটিয়ালি, উত্তর বাংলার মৈষালের কণ্ঠের ভাওয়াইয়া, সুফী দরবেশদের মুর্শিদী, জারি, সারি, হামদ-নাত, গজল-কাওয়ালীর নান্দনিকতা আর মনমাতানো সুরমূর্চ্ছনার ঐতিহ্যের কথা।
সংগীত সম্রাট আলাউদ্দিন খাঁ, বিশ্বনন্দিত আয়াত আলি খাঁ, আব্বাসউদ্দিন আহমদ, আব্দুল আলিমের অবিনশ্বর সংগীত ঐতিহ্যের কথা বলতে এসেছিলাম। অনন্য নৃত্যশিল্পী বুলবুল ইসলামের নৃত্য মহিমার কথা বলতে এসেছিলাম। ‘আল্লাহতে যার পূর্ণ ঈমান কোথা সে মুসলমান’ এর মতো শত শত ঘুম ভাঙানিয়া গানের কথা বলতে এসেছিলাম।
আমি, বাংলাদেশের নাট্যকারের লেখা সরফরাজ খাঁ, কামাল পাশা, সিন্ধু বিজয়, কাফেলা, স্পেন বিজয়ী মুসা নৌফেল-হাতেম, বাগদাদের কবি, বিদ্রোহী পদ্মা প্রভৃতি জাতীয় ঐতিহ্য সচেতনতামূলক নাট্যরচনার কথা বলতে এসেছিলাম।
আমি বাংলাদেশে নির্মিত, আসিয়া, আজান, নয়নতারা, মাটির পাহাড়, শহীদ তিতুমীর, আনোয়ারা, জাগো হুয়ায় সবেরার মতো যুগান্তকারী সিনেমা শিল্পের কথা বলতে এসেছিলাম।
প্রিয় পাঠক, যা বলতে এসেছিলাম তা বলা হলো না। কারণ বাংলাদেশের রং, চেহারা, চালচিত্র সব বদলে গেছে, বদলে ফেলা হয়েছে!
সীমাহীন পদ্মার বুকে আজ ঢেউ নেই, আছে ধূ ধূ বালুচর। নদীগুলো শুকিয়ে মরুভূমি হয়ে গেছে। সামান্য বর্ষাতে রাজধানী শহরও নৌকা চালানোর অবস্থা সৃষ্টি হয়! বর্ষায় প্লাবন, খরায় দাহন, এই নিয়েই এখন মানুষের জীবন। যে দেশ একদিন পৃথিবীকে খয়রাত বিতরণ করত, সে আজ খয়রাত পাওয়ার আশায় পৃথিবীর কাছে হাত পেতে বসে থাকে। যে হাত একদিন বিশ্ববিশ্রুত মসলিন কাপড়ের সূক্ষ্মবুনন বুনতো, সেই হাত এখন অন্যের কাপড়ের বোতাম সেলাই করে, দর্জিগিরি করে এবং অন্যদেশে কামলাগিরি করে কোনরকম পেটেভাতে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে! কৃষি উৎপাদন স্বনির্ভর নয়। সাধারণ ভোগ্যপণ্যের জন্যও পরনির্ভরশীলতা বেড়েই চলেছে। কলেজ ইউভার্সিটিগুলোতে পড়াশুনার পরিবেশ নেই। প্রশাসন বিপর্যস্ত বিশৃঙ্খল। দুর্নীতিতে দেশ ছেয়ে গেছে। বাংলাদেশের যৌবন সৃজনশীলতার রঙিন স্বপ্ন দেখতে ভুলে গেছে। তার হাতে এখন বোমা, বারুদ পিস্তল আর নারকটিকসের বিষধর সাপ। দেশজুড়ে বেড়েছে শিক্ষিত চোরাচালানি, টাকা পাচারকারী, ব্যাংক লুটেরা, স্নাতক ডাকাত, গ্রাজুয়েট প্রমোদবালা, নিষিদ্ধপল্লী উঠে এসেছে পার্কে, লোকালয়ে, সম্ভ্রান্ত এলাকার বাড়িতে। অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে! এটাই বর্তমান বাংলাদেশের চালচিত্র।
কেমন করে এমন হলো! আমরাতো স্বাধীনতা চেয়েছিলাম উন্নততর সমৃদ্ধ এক জীবনের জন্য! জনজীবনের সার্বিক কল্যাণ, সুখ ও শান্তির জন্যই তো আমরা সংগ্রাম করেছিলাম। তাহলে যা চেয়েছিলাম তা পেলাম না কেন? আমরা নিরন্তর এমন পেছনের পথে হাঁটছি কেন?
এই কেনর জবাব হয়ত অনেকে অনেকভাবে দেবেন। কিন্তু একটু গভীরভাবে অনুধাবন করলে আমরা স্পষ্ট দেখতে পাব, যে সাংস্কৃতিক অবক্ষয়, সাংস্কৃতিক পরিবেশ দূষণই এই ‘পিছনে হাঁটা’র প্রধান কারণ। সাংস্কৃতিক কসমোপলিটনইজমই বাংলাদেশকে তার উদ্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে দিচ্ছে না, তার আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থাৎ সম্পূর্ণ জীবনব্যবস্থাকে পিছনের পথে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
একটা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পর তার সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন হয়। তাকে নিজস্ব সাংস্কৃতিক ধারার অনুগামী হতে হয়। সেই নিজস্ব সাংস্কৃতিক ধারা প্রতিষ্ঠা করতে বাংলাদেশ সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। শুনতে খারাপ লাগলেও একথা সত্যি যে, স্বাধীনতার অর্ধশতক বছরপূর্তির কাছাকাছি এসেও বাংলাদেশ তার সাংস্কৃতিক রূপরেখা নির্ণয় করতে পারেনি। একটি দেশের সংস্কৃতিই হচ্ছে তার ঐতিহ্যের ফসল। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই জানে না কী তার ঐতিহ্য, কেনই বা তার স্বাধীনতার প্রয়োজন হয়েছিল! বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষই জানে না তার স্বাধীনতা সংগ্রামের সঠিক ইতিহাস। তাদের বিশ্বাস করানো হয়েছ, ১৯৭১ সালই স্বাধীনতার জিরো পয়েন্ট। সেখান থেকেই যাত্রা শুরু। এটা সঠিক নয়। মাত্র ৫০ বছরে একটা জাতি গড়ে উঠতে পারে না। এ জাতি গড়ে ওঠার পেছনে পড়ে আছে ৮০০ বছরের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। সাংস্কৃতিক পরিবেশ দূষণের ফলে, বাংলাদেশের মানুষ যে ঐতিহ্যের কথা ভুলে গেছে।
বাংলাদেশের মানুষ ভুলে গেছে ১৪ শতকের মুসলিম শাসক সুলতান শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহের কথা। যিনি এদেশের খন্ডখন্ড অঞ্চলকে রাজনৈতিক ঐক্যে সুসংহত করে সর্ব প্রথম দেশটির নামকরণ করেন ‘বাংলা’। যিনি এই দেশটাতে ভৌগোলিক ও ভাষাগত ঐক্য প্রতিষ্ঠা করে ‘বাঙ্গালী’ নামে একটা সংঘবদ্ধ জাতি সৃষ্টি করেন, সেই জাতিই আজ বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের অধিকারী।
বাংলাদেশের মানুষ জানে না ১৪ শতকের গিয়াসুদ্দিন আজম শাহ এবং আলাউদ্দিন হোসেন শাহের কথা, যাদের যুগকে বাংলার স্বর্ণযুগ বলা হতো।
বাংলাদেশের মানুষ এদেশে মারাঠা বর্গীর নির্মম লুণ্ঠন, অত্যাচার আর ডাকাতির কথা ভুলে গেছে। ভুলে গেছে ১৭৫৭ সালের পলাশী যুদ্ধের বেঈমানীর ইতিহাস, স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম শহীদ নওয়াব সিরাজউদ্দৌলার ইতিহাস এবং তার পরবর্তী ২০০ বছর ধরে ব্রিটিশ রাজশক্তি ও তার সৃষ্ট শোষক রাজা-জমিদারদের সাথে যুগপৎ সংগ্রামের ইতিহাস।
বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস জানতে হলে তাদের ইতিহাসই জানতে হবে। জানতে হবে, ১৭৭৩ সালের ফকীর বিদ্রোহের কথা, ১৮০৪ সালে হাজী শরিয়তুল্লাহর বিপ্লব, ১৮২০-৩১ সৈয়দ আহমদ বেলেরভীর বিপ্লব, ১৮৩১ এ বালাকোটের যুদ্ধ, ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লব, ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ, ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা, ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, ১৯১৯-২০ এর খিলাফত আন্দোলন, ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাব, ১৯৪৭ সালের পাকিস্তান সৃষ্টি এবং তার পরবর্তী ইতিহাস। এ সবই আমাদের জাতীয় ঐত্যিহ্যের গৌরবোজ্জ্বল ধারাবাহিকতার ইতিহাস। একে বাদ দিয়ে বা খন্ডিত করে দেখার কোনো সুযোগই নেই। বাংলাদেশের জন্ম-ইতিহাস ‘৭১ থেকে খোঁজ করলে হবে না! মুসলমান ধর্মপ্রচারকরা যেদিন এদেশে তৌহিদের অমিয়বাণী প্রচার করতে এসেছিলেন, সেদিন থেকেই সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের এবং বাংলাদেশি জাতির জন্ম-ইতিহাস। যে ইতিহাস আজ অনুচ্চারিত এবং বাংলাদেশের মানুষ প্রায় বিস্মৃত।
ইতিহাস এবং ঐতিহ্যচেতনা থেকেই আসে দেশপ্রেম আর সেই দেশপ্রেমই দেশের উন্নতিতে অবদান রাখতে উদ্বুদ্ধ করে। দেশপ্রেমই স্বাধীনতা রক্ষার পাঁচিল হয়ে দাঁড়ায়। ইতিহাস-ঐতিহ্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে স্বাধীন চিত্তের বিকাশ রুদ্ধ হয়ে যায়, অহংবোধ বিলুপ্ত হয়, হীনমন্যতা ভর করে, মানসিক দাসত্ব পেয়ে বসে, যার ফলে দেশের অভ্যন্তরে ক্রীতদাসের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। রাজনীতিতে বিদেশি বশংবদদের আগমন ঘটে, শিক্ষিত বুদ্বিজীবীর অধিকাংশই বিদেশি ডক্টরেট, পদক, পুরস্কার, খেতাব, স্কলারশিপ, নগদ অর্থ প্রাপ্তির লোভে লালায়িত হয়ে আত্মবিক্রয় করে বিদেশিশক্তির মুখপাত্র বা দালাল শ্রেণিতে রূপান্তরিত হয়ে যায়। ফলে দেশ আর দেশ থাকে না, স্বাধীনতা আর স্বাধীনতা থাকে না, থাকে শুধু বর্ডার, চেকপোস্ট, আর পতাকা।
বাংলাদেশ নিয়ে ভেবে দেখার অনেক বিষয় জমে গেলেও, এর সাংস্কৃতিক পরিবেশ দূষণের বিষয়টাই সর্বাগ্রে ভাবতে হবে। সংস্কৃতিই হচ্ছে জাতির প্রাণ। সেই প্রাণশক্তিকে নিস্তেজ রেখে শুধু দেহের পরিচর্যা করে কোনো লাভ হবে না। সংস্কৃতিই একটি জাতির পরিচয়ের পতাকা। পতাকার রঙ বদলে গেলে যেমন দেশ থাকে না, তেমনি সংস্কৃতির রূপবদল ঘটলে বাংলাদেশ থাকবে না, বাংলাদেশের সংখ্যাগুরু মুসলিম জাতিকে মুসলমান হিসাবে চেনা যাবে না। বাংলাদেশের সংখ্যাগুরু মুসলমানরাই, তাদের ইসলামি জীবনব্যবস্থা, ইসলামি ঐতিহ্য সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে, সুদীর্ঘ ত্যাগ-তিতিক্ষা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নিজস্ব মুসলিম হোমল্যান্ড প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিল। সেই মুসলিম হোমল্যান্ডই বর্তমান বাংলাদেশ। এদেশ কারও দয়ার দান নয়। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে ইসলামের সত্য সুন্দর সংস্কৃতিই জাতীয় সংস্কৃতি হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। দুঃখের বিষয়, তা হয়নি। বরং উল্টো পথে হেঁটেছে বাংলাদেশ। ইসলামি কালচারের প্রতি অবজ্ঞা উদাসীনতা দেখিয়ে বাংলাদেশের ১৭ কোটি তৌহিদবাদী মুসলমান আজ ধর্মনিরপেক্ষতা, নাস্তিক্যবাদ, জাতিভিত্তিক সংস্কৃতি, ভাষাভিত্তিক সংস্কৃতি প্রভৃতি মারাত্মক প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হয়েছে।
তৌহিদবাদী সংস্কৃতির পথ ধরেই মুসলমানরা জ্ঞানে, বিজ্ঞানে, সাহিত্যে দর্শনে, সংগীতে, ভাস্কর্যে, চিত্রকলায় স্থাপত্যে, বিশ্ববিজয় করেছিল। মুসলমানরা অবদান না রাখলে বিশ্ব-চারুকলার অন্ধকার যুগ অতিক্রান্ত হতো না, বর্তমান সভ্যতাগর্বী পাশ্চাত্যের রেনেসাঁও সম্ভব হতো না। সেই ইসলামি সংস্কৃতিকে বাংলাদেশে বলা হচ্ছে, কূপমন্ডুকতা, মৌলবাদ, প্রগতির প্রতি অন্তরায়। আর ১৭ কোটি মুসলমান মাথা নিচু করে শুনছে এবং মেনেও নিচ্ছে। কারণ প্রতিবাদ করার মতো জ্ঞান, মেধা, প্রচার মিডিয়া কোনটাই তাদের নেই। বাংলাদেশের মুসলমানরা আজ নির্জীব, যেন কোন বাজিগরের হাতের পুতুল।
দারিদ্র্য সমস্যা, উজানের পানিবন্ধ সমস্যা, ঘুষ-দুর্নীতি সমস্যা, খুন-রাহাজানি সমস্যা, জুয়া-ড্রাগ সমস্যা, চোরাচালান-টাকাপাচার সমস্যা, এককথায় বাংলাদেশের সকল আর্থসামাজিক সমস্যার মূল নিহিত আছে সাংস্কৃতিক পরিবেশ দূষণের মধ্যে। ইসলাম এবং ইসলামি সংস্কৃতির প্রতিটি অভিব্যক্তি বা এক্সপ্রেশনকে মানবকল্যাণের কাজে লাগাতে পারলে, জাতির জীবনে যে নবজাগরণের সৃষ্টি হতো, জাতীয় একতার যে প্রাণচাঞ্চল্যের স্ফূরণ ঘটত, জাতির ধমনীতে যে বিশুদ্ধ রক্তস্রােত প্রবাহিত হতো, জাতির শিরা-উপশিরায় যে অহংবোধ জাগ্রত হতো, তারই জোয়ারে সকল জাতীয় সমস্যাকে ধুয়ে মুছে সাফ করে দিত। পুরা জাতি এককণ্ঠ হয়ে আবার গেয়ে উঠতো:
‘খালেদ! খালেদ! ফজর হয়েছে, আজান দিতেছে কওম,
ঐ শোন শোন আসসালাতু খাইরূম মিনান্নাওম!’
লেখক: সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন