শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ঋণে বন্দি রেমিট্যান্স

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার গবেষণা প্রতিবেদন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ জুন, ২০২০, ১২:০০ এএম

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশি অভিবাসীদের মধ্যে অদক্ষরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠায় মূলত ঋণ পরিশোধ করতে। অন্যদিকে দক্ষ অভিবাসীরা পরিবারের সদস্যদের অনুরোধ করে সঞ্চয় বা বিনিয়োগ করতে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা’র (আইওএম) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। গতকাল ‘বাংলাদেশে অভিবাসন, ফ্যামিলি রেমিট্যান্স, সম্পদ এবং দক্ষতার শ্রেণি বিভাগ’ বিষয়ক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে আইওএম। তাতে উঠে আসে এই ফলাফল। কার্যত ঋণে বন্দি অদক্ষ অভিবাসী শ্রমিকদের রেমিট্যান্স। ২০১৯ সালে রেমিট্যান্স-নির্ভর এক হাজার পরিবারের ওপর এই জরিপ পরিচালিত হয়। সংস্থার পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

জরিপে দেখা গেছে, দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীরা স্বল্প দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের তুলনায় বেশি অর্থ দেশে পাঠায়। দক্ষতা বৃদ্ধির ফলে ২০০৯ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পেয়েছে মাসিক হারে প্রায় ২৫৫ মার্কিন ডলার পর্যন্ত।
গবেষণায় উঠে আসা চিত্রে দেখা যায়, বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মী এবং রেমিট্যান্স প্রেরকদের মধ্যে ৯৮ শতাংশই পুরুষ। এদের প্রায় ১২ শতাংশ একেবারেই স্কুলে যায়নি। আর প্রায় ৮০ শতাংশ পড়াশোনা করেছেন মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত। জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে অর্ধেক অংশ কাজ করেছেন কোনও প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির কর্মচারী হিসেবে। এর সংখ্যা ৪৯ শতাংশ। আর প্রায় এক-চতুর্থাংশ (২৬ শতাংশ) কাজ করেছেন শ্রমিক হিসেবে, যার মধ্যে দিন মজুর ও খন্ডকালীন শ্রমিক রয়েছেন। এতে আরও জানানো হয়, বাংলাদেশের অভিবাসী কর্মীরা অন্য দেশের দক্ষ কর্মীদের তুলনায় কম অর্থ পাঠাতে পারেন বা অর্থনৈতিকভাবে কম লাভবান হন। কারণ অদক্ষ এবং স্বল্প দক্ষ কর্মীরা যে পরিমাণ অর্থ পাঠান, তা দক্ষ কর্মীদের তুলনায় অনেক কম।

আইওএম’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা এবং চট্টগ্রামে রেমিট্যান্স গ্রহণকারী পরিবারের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ সংখ্যা ৭৬ শতাংশ। রেমিট্যান্স গ্রহণকারী পরিবারের মোট ৬৫ শতাংশ পরিচালনা করেন নারী, যারা মূলত বেকার। সাধারণত রেমিট্যান্সকে তারা অনুৎপাদনমূলক কর্মকান্ডে খরচ করেন বলে গবেষণায় দাবি করা হয়েছে।
জরিপে বলা হয়, রেমিট্যান্স মূলত স্বল্পমেয়াদী প্রয়োজন মেটাতে ব্যবহৃত হয়। সম্পদের বৈচিত্র আনতে বা আর্থিক স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করতে খুব কমই ব্যবহৃত হয়। যার ফলে রেমিট্যান্সের ওপর পরিবারের নির্ভরতা আরও বাড়িয়ে তোলে। প্রবাসী এবং তাদের পরিবারের স্বল্প অর্থনৈতিক জ্ঞান তাদের টেকসই উপার্জন, রেমিট্যান্স ব্যবস্থাপনা এবং সম্পদ তৈরির ক্ষেত্রে এক অনিশ্চিত পরিস্থিতির মুখে ঠেলে দেয়।

গবেষণায় যে সব সুপারিশ উঠে এসেছে তা হলো-প্রথমত, জেন্ডার-সংবেদনশীল দক্ষতা বিকাশের জন্য বিনিয়োগ করতে হবে এবং পরিবারের অর্থনৈতিক জ্ঞান এবং রেমিট্যান্স পরিচালনার ক্ষমতা তৈরি করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, শিক্ষা এবং দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ করতে হবে। যাতে করে স্বল্প দক্ষ অভিবাসী কর্মী আরও বেশি অর্থ উপার্জন করতে পারে এবং ঋণের চক্র ভেঙে বেরিয়ে আসতে পারে।

তৃতীয়ত, অসহায় অবস্থা হ্রাসে এবং আর্থিক স্বাধীনতার পথে সহায়তায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যেন উন্নত ঋণ ব্যবস্থাপনা এবং সঞ্চয়ের আনুষ্ঠানিকীকরণ নিশ্চিত হয়।
চতুর্থত, নারীদের অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক নীতিগ্রহণ করতে হবে। যাতে করে অর্থনীতির পরিমাপ এবং টেকসই কৌশলসমূহ বিবেচনা করে সম্পদ উৎপাদন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।

গবেষণা ফলাফল বিষয়ে আইওএম বাংলাদেশ মিশন প্রধান গিওরগি গিগাওরি বলেন, অন্য যেকোনও সময়ের তুলনায় এখন মন্দা-প্রভাবিত রেমিট্যান্স নির্ভর মানুষকে সহায়তায় অধিক নজর দিতে হবে। অভিবাসী কর্মীদের দক্ষতা বিকাশকে অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য সরকারকে সহায়তা করা প্রয়োজন। যাতে অভিবাসী কর্মীরা রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে পারে। একই সঙ্গে তাদের পরিবার, বিশেষ করে নারীদের অর্থনৈতিক শিক্ষা প্রদানে গুরুত্ব দিতে হবে। যাতে করে রেমিট্যান্স উৎপাদনমুখী খাতে বিনিয়োগ নিশ্চিত হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন